শিরোনাম:
ঢাকা, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১
N2N Online TV
সোমবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম | ছবি গ্যালারী | শিরোনাম » সিনহা হত্যা মামলার রায় আজ
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম | ছবি গ্যালারী | শিরোনাম » সিনহা হত্যা মামলার রায় আজ
১৬৩ বার পঠিত
সোমবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২২
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

সিনহা হত্যা মামলার রায় আজ

---

কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর মেজর অবসরপ্রাপ্ত সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় ৫ আগস্ট সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদি হয়ে দায়ের করা মামলার রায় প্রদানের জন্য আজ ৩১ জানুয়ারি সময় নির্ধারণ করেছে আদালত।

দীর্ঘ দেড় বছরে এসে এই আলোচিত মামলাটির রায় প্রদান করা হবে। ২৯ কর্ম দিবসে আদালত বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ করে এই মামলার রায় প্রদান করবেন। কবে রায় নিয়ে ভিন্ন মত রয়েছে রাষ্ট্র-বাদিপক্ষের সাথে আসামিপক্ষের আইনজীবীর।

মামলার রাষ্ট্র ও বাদিপক্ষের আইনজীবী জানিয়েছেন, মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডটি পরিকল্পিত হত্যা বলে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আশা করছেন, সর্বোচ্চ সাজা হবে আসামিদের। তবে এটা মানতে রাজি নন, আসামিপক্ষের আইনজীবী। তিনি জানিয়েছেন, এটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। ন্যায় বিচার না পেলে উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা বলেন তিনি।

মামলার নথিপত্রের তথ্য মতে, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে টেকনাফ থানায় দুটি এবং রামু থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদি হয়ে ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কক্সবাজার আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি টেকনাফ থানায় নথিভূক্ত করার পর আদালত তদন্তভার দেন র‌্যাবকে। একই সঙ্গে পুলিশের দায়ের করা মামলা তিনটিও র‌্যাবকে তদন্ত করার আদেশ দেন আদালত। ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর র‌্যাব-১৩ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) খাইরুল ইসলাম ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। অভিযুক্তদের মধ্যে ১৪ জন কারাগারে থাকলেও টেকনাফ থানার কনস্টেবল সাগর দেব পলাতক ছিল। অভিযোগপত্রে সাক্ষী করা হয় ৮৩ জনকে। একই দিন পুলিশের দায়ের করা মামলা ৩টির চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর আদালত অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে পলাতক আসামি কনস্টেবল সাগর দেবের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। সেই সাথে পুলিশের দায়ের ৩টি মামলার চুড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে মামলা থেকে সাইদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথকে মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন আদালত। এরপর মামলাটি জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম তামান্না ফারাহের আদালত থেকে মামলাটির কার্যক্রম জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেনের আদালতে বদলি হয়।

২০২১ সালের ২৭ জুন আদালত ১৫ আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরুর আদেশ দেন। সেই সাথে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২৬ থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত দিন ধার্য করেন। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে আদালতের বিচার কার্যক্রম স্থগিত থাকায় ধার্য দিনগুলোতে সাক্ষ্যগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে ২০২১ সালের ২৩ আগস্ট থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮ দফায় ৮৩ জনের মধ্যে ৬৫ জন সাক্ষ্য প্রদান করেন। ৬ ও ৭ ডিসেম্বর আসামিরা ফৌজদারী কার্যবিধি ৩৪২ ধারায় আদালতে জবানবন্দি প্রদান করেন। সবশেষে ৯ থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত মামলায় উভয়পক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করেন। যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের শেষ দিনে আদালত ৩১ জানুয়ারি মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলী ফরিদুল আলম বলেন, এই মামলায় দীর্ঘ তদন্ত করে তদন্তকারী কর্মকর্তা ২৬ পৃষ্ঠার চার্জশিট প্রদান করেছেন। চার্জশিটে ১৫ জন আসামি ৮৩ জনকে সাক্ষী করা হয়েছিল। আট দফায় সাক্ষ্যগ্রহণে ৬৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ এবং জেরা সম্পন্ন হয়েছে। এতে সিনহা নিহত হওয়ার ঘটনাটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা আশা করছি, এই মামলায় আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা দেবেন আদালত।

তিনি বলেন, অভিযোগপত্র গ্রহণের দিন থেকে মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য দিন পর্যন্ত ২৯ কার্যদিবসে এই আলোচিত মামলার বিচারকার্য হচ্ছে। এই রায় ঘোষণার পর আইনি পোশাক পরিহিত কোনো ব্যক্তি আইন বহির্ভূত কোন কাজ করা থেকে বিরত থাকবেন।

মামলায় বাদিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহাকে হত্যা করার জন্য পূর্ব থেকে পরিকল্পনা নিয়েছিল। পরিকল্পনা অনুয়ায়ী, বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে খোঁজ-খবর নিয়েছিল কোথায় যাচ্ছে, কিভাবে যাচ্ছে এবং সোর্সদের খবর দিয়েছিল যে মেজর সিনহার গ্রুপ ভিডিও করতেছে। কোথায় ভিডিও করতেছে খবর পাইলেই যেন তাদের (প্রদীপ ও লিয়াকত) অবহিত করে।

“ঘটনার দিন, মারশিবুনিয়ায় মইন্ন্যা পাহাড়ে সিনহা গ্রুপ ফটোগ্রাফি করছেন, পাহাড়ে উঠছেন, নামছেন এবং সূর্যাস্তের দৃশ্য ধারণ করে নামতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। তখন এদের (প্রদীপ ও লিয়াকত) সোর্সরা মসজিদের মাইকে মাইকিং করল যে, ডাকাত নেমেছে; ডাকাত আসতেছে সবাই হুঁশিয়ার। ডাকাত পরিচয় দিয়ে গণপিটুনির মাধ্যমে তাকে (সিনহা) হত্যার একটা পরিকল্পনা ছিল তাদের (সোর্সদের)।”

“তখন একজন ইমাম সোর্সদের জানায় যে, পাহাড়ে উঠার সময় দুইজন লোক আমাকে সালাম জানিয়েছিল। তাদের মধ্যে একজনের মিলিটারি ড্রেস পরিহিত ছিল। একটা ছোট ছেলে তাদেরকে রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছিল। এদের সাথে ক্যামেরাসহ কিছু যন্ত্রপাতি দেখেছি, এরা ডাকাত না। এরা হয়তো কোন কিছু পরিমাপ বা ফটো তুলতে গেছিল, এরা ডাকাত না। এটা জানার পর যেসব লোকজন জড়ো হয়েছিল তারা সেখান থেকে চলে যায়।”

বাদির এই আইনজীবী বলেন, “তারপরও সিনহারা পাহাড় থেকে নামার পর পুলিশের ৩ জন সোর্স তাদের চ্যালেঞ্জ করেন। তারা (সোর্স) জিজ্ঞেস করেন, আপনারা কে? তখন সিনহা জিজ্ঞেস করেন, আপনারা কি জানতে চান? কাছে আছেন। টর্চ বন্ধ করেন। এ কথা বলার পর তারা চলে যান।”

“এরপরে সোর্সরা লিয়াকতকে আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী ফোন করেন। তারা (সোর্স) লিয়াকতকে জানায়, মেজর সিনহা ও আরেকজন লোক পাহাড় থেকে নেমে সিলভার কালারের কার যোগে মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে কক্সবাজারের দিকে যাচ্ছে। ওই সংবাদ পাওয়ার পর লিয়াকত টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপকে টেলিফোন করেন। পরে প্রদীপের নির্দেশ ক্রমে বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রে লিয়াকত একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।”

“জিডিতে লিয়াকত উল্লেখ করেন, আমি ওসি সাহেবকে অবহিত করেন এবং তার (প্রদীপ) নির্দেশ ক্রমে এপিবিএন চেকপোস্টে গিয়ে যানবাহন তল্লাশি শুরু করতে যাচ্ছে। চেকপোস্টে সিনহার গাড়ি পৌঁছালে এপিবিএন সদস্যরা পরিচয় পেয়ে স্যালুট করেন। এসময় এপিবিএন সদস্যরা ইশারা দিলেন চলে যাওয়ার জন্য। তখন সেখানে পৌঁছে পেছন থেকে লিয়াকত ও নন্দ দুলাল থামার জন্য নির্দেশ দেন। পরে তারা পিস্তল হাতে সামনে গিয়ে ব্যারিকেড গাড়ি থামিয়ে নামতে আদেশ দেন। তখন হাত তুলে মামলার ২ নম্বর সিফাত গাড়ি থেমে নামেন। এসময় গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসা সিনহা নামতে কয়েক সেকেন্ড বেশি সময় নেন।”

জাহাঙ্গীর বলেন, “সিনহাও দুই তুলে গাড়িতে বের হওয়ার সাথে সাথেই তাকে লক্ষ্য করে লিয়াকত গুলি ছুড়ে। প্রথমে দুইটা, পরে সামনের দিকে এগিয়ে আরও দুইটা গুলি চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে সিনহা রাস্তার উপর পড়ে যান। এর পরে সিফাতকে অন্যান্যরা ধরে রেখেছিল। লিয়াকত অন্যান্য জায়গায় টেলিফোন করেন। এ ঘটনার আধাঘণ্টার মধ্যে প্রদীপ সেখানে (ঘটনাস্থলে) চলে আসেন। প্রদীপ ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর লিয়াকত ও নন্দ দুলালের সঙ্গে কানে কানে কথা বলেন।”

“পরে সিনহা কাছে গিয়ে মারা গেছে কিনা পা দিয়ে যাচাই করে দেখেন প্রদীপ। ওইসময় গুলিতে আহত হয়ে গোঁড়াচ্ছিল এবং পানি দাও, পানি দাও বলে আকুতি করছিল। এতে প্রদীপ যখন নিশ্চিত হল যে মরেনি, তখন বাম পাশে বুকে পা দিয়ে পরপর বুট জুতা কয়েকটা জোরে লাথি দেন। এতে সিনহার বুক পাঁজরের তিনটা হাড় ভেঙে যাওয়ার ব্যাপারে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর সিনহা গলার বাম পাশে বুট জুতা দিয়ে প্রদীপ চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।”

রায়ের ব্যাপারে বাদিপক্ষের আইনজীবী জাহাঙ্গীর বলেন, আইনের প্রয়োগ; বিচারকের মন-মানসিকতা এটা বিচারকের উপর নির্ভর করে। এখন বিচারের বিষয়টি বিচারকের ওপর বর্তায়। তবে রাষ্ট্রপক্ষ ও বাদিপক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে আসামি ওসি প্রদীপের আইনজীবী মহিউদ্দিন খান বলেন, আদালতে সাক্ষীরা যে জবানবন্দি দিয়েছেন তাদের সেই সাক্ষ্যের সাথে বাদিপক্ষের যে এজাহার এবং তদন্তকারি কর্মকর্তার জমা দেওয়া চার্জশিটের বক্তব্যগুলো যথেষ্ট গড়মিল পাওয়া গেছে। তারা সাক্ষীদের সাক্ষ্য উপস্থাপনকালে জেরা করেছেন এবং আদালতে গড়মিলগুলো উপস্থাপন করেছেন।

“এছাড়াও সাক্ষীদের সাক্ষ্য, মামলার এজাহার ও চার্জশিটের গড়মিলগুলো লিখিত আকারে আদালতকে তুলে ধরেছি। আসামি ওসি প্রদীপ ঘটনাস্থলে ছিলেন না। উনি (প্রদীপ) ঘটনার সাথে জড়িত নন, সেই সম্পর্কিত গড়মিল এবং আমাদের যেসব তথ্য-উপাত্ত ছিল তা আমরা বিজ্ঞ আদালতের কাছে উপস্থাপন করেছি।”

আসামিপক্ষের এ আইনজীবী বলেন, “৩১ জানুয়ারি মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে তাতে আমরা আশা করছি, আদালতের কাছ থেকে আমরা ন্যায়-বিচার প্রত্যাশা করছি এবং ন্যায়-বিচার পাবো। তারপরও আমরা যদি রায়ে সন্তুষ্ট হতে না পারি তাহলে আইনগতভাবে আমাদের উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। আমরা সেই অনুযায়ী পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের দ্বারস্ত হবো।”



আর্কাইভ