বুধবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | বিনোদন | শিরোনাম » ফরাসি বিপ্লবের মূল যে ৬৪৭ হীরার নেকলেস
ফরাসি বিপ্লবের মূল যে ৬৪৭ হীরার নেকলেস
আগেরকার দিনের রানিদের চাহিদার মূল কেন্দ্রবিন্দুই থাকত অলংকারে। তবে শুধু রানিই নয়, অলংকার ভালোবাসেন প্রতিটা নারীই। কিন্তু এ অলংকারই ফ্রান্সের রানি মেরি অ্যান্টোনেটের জীবনে অভিশাপ হয়ে এসেছিল। তিনি ছিলেন ফরাসি বিপ্লবে নিহত ফ্রান্সের সম্রাট ষোড়শ লুই-এর স্ত্রী। সে সময় নানা ঘটনার কারণেই আলোচনাতে ছিলেন এই রানি। তার মধ্যে নেকলেসের ঘটনাই বেশ আলোড়ন তুলেছিল। যেহেতু মেরির পছন্দের তালিকায় গয়নাই প্রধান ছিল, আর সেটা তখনকার সবারই জানা ছিল।
এজন্য প্যারিসিয়ান জুয়েলারি কারিগর বাসেঞ্জ এবং বোহেমার রানির কাছে একটি হীরার নেকলেস নিয়ে হাজির হন। হারটিতে মোট ৬৪৭টি বড় হীরা ছিল। এ ছাড়াও হারটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে বিভিন্ন আকারের ছোট বড় অসংখ্য হীরা বসানো ছিল। নেকলেসটি সে সময় পুরো ফ্রান্সের সবচেয়ে দামি গয়না হিসেবে বিবেচিত হতো। নেকলেসটি দাম ছিল সে সময়কার হিসাবে ১.৬ মিলিয়ন লিভার যা আজকের টাকায় ১২ মিলিয়ন ডলারের মতো। এ হীরার নেকলেসটি আসলে ১৫তম লুইয়ের উপপত্নী ম্যাডাম ডু ব্যারিকে উপহার দিতে তৈরি করা হচ্ছিল। তবে গয়না তৈরি আগেই মারা যায় ১৫তম লুই।
তবে এত দামি আর তৈরি করা ব্যয়বহুল হওয়ায় এর কারিগর নেকলেসটি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। তবে এতো দাম দিয়ে একটি নেকলেস কেনার মতো কেউ ছিল না সেসময় ফ্রান্সে। অবশেষে রানি মেরি অ্যান্টনিয়েট কিনে নেন সেটি। তবে এই নেকলেস কেনাই যে রানির জীবনের কাল হবে, তা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি। ১৭৮৪ সালে কার্ডিনাল ডি রোহানের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে রানির। এ রোহান ছিলেন একজন উচ্চপদস্থ পাদ্রী এবং কূটনীতিক। রোহান রানির মনোযোগ পেতে বিভিন্ন চিঠি লিখতে শুরু করেন।
রানি যখন রোহানের চিঠির জবাব দেওয়া শুরু করলেন তখন রোহান ভাবেন রানি বুঝি তার প্রেমে পড়েই গেছেন। রোহান রানির সঙ্গে লুকিয়ে দেখা করতে থাকেন। এ সময় জ্যান নামের এক গুপ্তচর রাজপরিবারের ওপর প্রতিশোধ নিতে রোহান ও হীরার গয়নার কারিগরের সাথে সখ্য গড়ে তোলেন। এতে রানির অজান্তেই জ্যান কারিগরদের কাছ থেকে তার নামেই গয়না নিতে শুরু করেন। পরে যখন এসব ফাঁস হয়, তখন রানিকে অনেক অপদস্থ হতে হয়।
এরই মাঝে রাজা, রানি, রাজকুমার ও রাজকুমারীদের প্রমোদভ্রমণের জন্য রাজদরবারে প্রায় দুই হাজার ঘোড়া ও ২০০ অশ্বশকট সব সময়ের জন্য প্রস্তুত থাকতো। এসব বিষয় ফরাসি জনগণের মধ্যে দারুণ ক্ষোভের সঞ্চার করেছিল।
সেসময় রাজপ্রাসাদের বাইরে ছিল অন্য জগত। যেখানে প্রাসাদে চলতো নানা বিশালতা, সেখানে রাস্তায় রাস্তায় অনাহারে ঘুরছে মানুষ। না খেয়ে মরছিল তারা। ওদিকে অর্থের মোহে আটকে থাকা রানি এসবের কিছুই বুঝতেন না। রানি হয়েও দেশের মানুষের কথা তিনি কখনো ভাবেননি। ইতিহাসবিদদের মতে, তার কারণেই ফ্রান্স ফকির হয়, শুরু হয় ফরাসি বিপ্লব। ষোড়শ লুই ও তার স্ত্রী মেরি অ্যান্টনিয়েটকে ঘিরেই শুরু হয় ফরাসি বিপ্লব।
১৭৯৩ সালের ২১ জানুয়ারি শতসহস্র জনতার সম্মুখে রাজা ষোড়শ লুইসকে গিলোটিনে শিরশ্ছেদ করা হয়। অন্যদিকে রানিকেও বিচারের মুখোমুখি হতে হয়। ফ্রান্সের এ রানিকে বিলাসিতার জন্য অনেকেই অপছন্দ করতেন। সেইসঙ্গে দুর্নীতির কলকাঠি আড়ালে থেকে তিনিই নাড়তেন বলে জনগণের অভিযোগ ছিল। বিচারের পর ১৬ অক্টোবর রানিকেও একই শাস্তি কার্যকর করা হত্যা করা হয়।