শনিবার, ২১ আগস্ট ২০২১
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | রাজশাহী | শিক্ষা ও প্রযুক্তি | শিরোনাম | স্বাস্থ্য » গুরুতর অসুস্থ কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, নেয়া হল ঢাকায়
গুরুতর অসুস্থ কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, নেয়া হল ঢাকায়
বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক গুরুতর অসুস্থ। তাঁকে শনিবার ২১ সকাল দশটায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে রাজশাহী থেকে ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। ঢাকায় তিনি ন্যাশনাল হার্ট ইন্সটিটিউটে বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. নজরুল ইসলামের অধীনে চিকিৎসা নেবেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শাহ আজম শান্তনু।
উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক ‘ভীষণ অসুস্থ’ বলে জানিয়েছিলেন তাঁর ছেলে ইমতিয়াজ হাসান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ কথা জানান। এরপরই আজ শনিবার প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিককে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সকাল পৌনে ১০ টায় হাসান আজিজুল হকের বাড়ি উজান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে রাজশাহী বিমানবন্দরে নেওয়া হয়। সেখান থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নেওয়া হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের ছেলে ইমতিয়াজ হাসান বলেন, ইলেক্ট্রোলাইট ইম্ব্যালেন্স তাঁর বাবার প্রধান সমস্যা। এছাড়া হার্টের সমস্যা আছে। পড়ে গিয়ে তিনি কোমরেও আঘাত পেয়েছিলেন। সঙ্গে আছে ডায়াবেটিস। এখন তাঁর শারীরীক অবস্থা খারাপ। বাসায় অন্তত সাতজন চিকিৎসক তাঁকে চিকিৎসা দিচ্ছেন।
এদিকে ইমতিয়াজ হাসান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আব্বাকে নিয়ে কখনো কিছু লেখা হয়ে ওঠে না। বাকি দুনিয়ার কাছে যে রূপেই পরিচিত হোন, বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে আমার জন্য নিরন্তর বিস্ময় সৃষ্টি করে চলেছেন আমার বাবা। মোটের উপর গল্পকার হিসেবেই সবাই চেনেন হাসান আজিজুল হককে। ২০০৬-এ তাঁর বহুপ্রার্থিত উপন্যাস ‘আগুনপাখি’ শেষ করে আত্মজীবনীতে হাত দিলেন। ধরে নিয়েছিলাম, আব্বার হাতে আর নতুন কোন তাস নেই! কিন্তু আশি পেরনোর পরেও কলম থেকে নতুন নতুন কাজ বের করে আমায় অবাক করেছেন। লিখেছেন অনুবাদগ্রন্থ (আর্নেস্টহেমিংওয়েঃ কিলিমানজারোর বরফপুঞ্জ ও অন্যান্য গল্প), ভ্রমণবৃত্তান্ত (লন্ডনের ডায়েরি) আর কবিতার বই (সুগন্ধি সমুদ্র পার হয়ে)। ‘বাপ, তোর সোনার কলম হোক’ -মায়ের দোয়া ফলেছে তাঁর জীবনে। মানুষের দোয়াও পেয়েছেন নিশ্চয়।’
তিনি লেখেন, ‘মাঝে মাঝে সে প্রমাণ পাই যখন ভাড়া মেটানোর সময় বৃদ্ধ অটোচালক হঠাৎ তাঁর কুশল জানতে চেয়ে চমকে দেন অথবা শহরের রাস্তায় অচেনা কেউ এগিয়ে এসে তার কথা জানতে চান। আম্মা মারা যাওয়ার পর থেকেই সবার মাঝে থেকেও আব্বা বড় একা, তাঁকে আরো একা করে দিয়েছে কোভিড-১৯ অতিমারী। ছেলেবেলা থেকে দেখে আব্বার ভাত-তরকারির সাথে সাথে মানুষের সঙ্গ-হাসি-গল্প-গান দরকার হয়। সঙ্গত কারণেই এ সময় সেটা পাচ্ছেন না। কোভিডের মরণকামড় এড়িয়ে অন্যান্য বার্ধক্যজনিত সমস্যা সামাল দেয়া কতটা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা ভুক্তভোগীরা জানেন।’
তিনি আরও লেখেন, ‘আব্বা বয়সের ভারে শ্রবণশক্তি হারিয়েছেন অনেকটা, মনটা এলোমেলো হয়ে গিয়েছে একটু। আড়ালেও কি চলে যাচ্ছেন ধীরে ধীরে? গত এক মাস যাবৎ তিনি ভীষণ অসুস্থ, ছোট একটি শিশুর মতোই আমাদের ওঁর পরিচর্যা করতে হয়। পরিবারের মানুষ আর গুটিকয়েক শুভানুধ্যায়ী ছাড়া আর কেউ সে কথা জানেন না। অনেকেই হয়তো মন চাইলেও তার খবর নিতে পারেননি বা যোগাযোগ করতে পারছেন না। সে জন্যই এটুকু লেখা। আপনাদের দোয়ায়, প্রার্থনায় তাঁকে রাখবেন।’
কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের বয়স এখন ৮২। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩১ বছর শিক্ষকতার পর ২০০৪ সালে তিনি অবসর নিয়েছেন। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন শিক্ষকদের আবাসন এলাকা ‘বিহাস’- এ নিজের বাসায় থাকছেন। অসুস্থ হলেও তিনি এ বাসাতেই আছেন।