বুধবার, ১২ জানুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | শিরোনাম | স্বাস্থ্য » শরীরে অক্সিজেন বাড়ায় যে সব খাবার
শরীরে অক্সিজেন বাড়ায় যে সব খাবার
আবারও শুরু হয়েছে করোনা সংক্রমণ। করোনার নতুন ধরনে বিশ্বে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় যেসব করোনা আক্রান্তরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তাদের অধিকাংশেরই দেখা যায় শ্বাসকষ্ট।
শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় তৈরি হয়েছিল জটিল পরিস্থিতিও। তাই তৃতীয় ঢেউয়ের শুরুতেই সবাইকে খাদ্য তালিকায় অক্সিজেনসমৃদ্ধ খাবার রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
করোনায় আক্রান্ত হলে অনেকেরই অক্সিজেন লেভেল যখন কমতে শুরু করে, এর চেয়ে অসহায় অবস্থা আর কিছুই থাকে না তখন। কারণ করোনাভাইরাস আমাদের ফুসফুসকে সংক্রমিত করে। অনেক সময় সব ধরনের চিকিৎসাও হার মানে অক্সিজেন ধরে রাখতে, আর যার পরিণাম হতে পারে মৃত্যুও। করোনায় আক্রান্ত হলে শ্বাসকষ্ট যে-কারোরই হতে পারে। তাই এ পরিস্থিতিতে শরীরে যাতে কোনোভাবেই অক্সিজেনের ঘাটতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন।
শরীরে অক্সিজেন বাড়ানোর জন্য গভীরভাবে শ্বাস নিতে হবে, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বাতাসের সাহায্যে আপনার ফুসফুসে প্রবেশ করতে এবং শেষ পর্যন্ত রক্তপ্রবাহে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়। একটি পার্ক বা যেখানে অনেক গাছ আছে এমন জায়গায় সকালের হাঁটলেও বিশুদ্ধ বাতাসের সঙ্গে শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায়। আপনার ঘরের বায়ুচলাচলে যথাযথভাবে হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করুন। নিয়মিত ওয়ার্কআউট, সাঁতার কাটা ও শরীরচর্চাও অক্সিজেন বাড়াতে সাহায্য করে।
অ্যালকালাইন জাতীয় খাবার ৮০ শতাংশ খাদ্যতালিকায় রাখলে তা রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা যথাযথ রাখতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, এই ধরনের খাবার শরীরকে সক্রিয় রাখার পক্ষেও সহায়ক। এ ছাড়া এই খাবারগুলো দেহের পিএইচ মাত্রা স্বাভাবিক রাখে এবং ভিটামিন ও মিনারেলসের শোষণে সহায়তা করে। অক্সিজেনের ঘাটতি মেটাতে খাবারের তালিকায় অ্যালকালাইন জাতীয় খাবার রাখুন।
পুষ্টিবিদদের মতে, অ্যালকালাইন জাতীয় খাবার খাদ্যতালিকায় রাখলে তা রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা যথাযথ রাখতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, এই ধরনের খাবার শরীরকে সক্রিয় রাখার জন্যও উপকারী। এ ছাড়া এই খাবারগুলো দেহের পিএইচ মাত্রা স্বাভাবিক রাখে। সঙ্গে শরীরে ভিটামিন ও খনিজের জোগান ঠিক রাখে। করোনাকালে যেসব খাবার অক্সিজেনের ঘাটতি মেটাতে সাহায্য করে-
পাতিলেবু:
অক্সিজেনের ঘাটতি মেটাতে খাদ্যতালিকায় যেসব খাবার যোগ করতে পারেন, তার মধ্যে প্রথমেই থাকবে পাতিলেবুর নাম। পাতিলেবু অ্যাসিডিক হলেও তা শরীরের মধ্যে গিয়ে অ্যালকালাইন হয়ে যায়। এ ছাড়া এর ইলেকট্রোলাইটিক বৈশিষ্ট, ভিটামিন সি দ্রুত সর্দিকাশি, ফ্লু, হাইপারঅ্যাসিডিটি, বুক জ্বালা ইত্যাদির থেকে মুক্তি দেয়।
ব্রকোলি:
সুপার ফুড ব্রকোলি বিভিন্ন রকম ফ্লু থেকে আপনাকে নিরাপদে রাখতে পারে। ব্রকোলি যেমন বাড়তি মেদ ঝরিয়ে দেহকে সুস্থ রাখে, তেমনই শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি পূরণেও এটি কার্যকর।
বেদানা :
বেদানায় জিঙ্ক, কপার, আয়রনের পাশাপাশি ক্যালসিয়াম, ফাইবার আর প্রোটিন রয়েছে। এই ফলটি বি৩, বি ৬ -এ ভরপুর। প্রতি দিন বেদনা খেলে শরীরে নাইট্রিক অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় রক্ত সরবরাহ বাড়ে। ফলে শরীরের কোষ অক্সিজেন পায়।
কিউই :
এই ফলে প্রাকৃতিক চিনি থাকে, যার কারণে খাদ্য হজম হওয়ার পরে অ্যাসিডিক যৌগ তৈরি করে না। এতে আয়রন, কপার, ভিটামিন সি, বি ৩, বি ৫ এবং বি৬ রয়েছে। অ্যালকালাইন জাতীয় এই ফল শরীরকে তাজা রাখে। রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ায়।
বেরি :
ভিটামিন সি আর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে ভরপুর বেরি। এই ফলে মিষ্টভাবের পাশাপাশি প্রচুর ফাইবারও থাকে। ইউরিনারি ট্র্যাক্ট সংক্রমণ কমাতে ক্র্যানবেরির বহুল ব্যবহার প্রচলিত। ভিটামিন সি-এর অন্যতম উপাদান, যা মানবদেহের প্রতিটি কোষকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।
আঙুর :
আঙুর খুবই সহজপাচ্য একটি ফল। ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমা বা অন্যান্য শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে আঙুরের জুড়ি নেই। এতে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে। পিএইচ মাত্রা ৮.৫, যা শুধু রক্ত সরবরাহ বাড়ায় তাই নয়, নিম্ন রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে রাখে।
তরমুজ :
মিষ্টি এই ফলটি রক্তে অক্সিজেনের অভাব পূরণ করতে সাহায্য করে। এই ফলটি ৯ পিএইচ মানসহ সর্বাধিক ক্ষারক হয়। তরমুজে থাকা ফাইবার এবং পানির কারণে এটি রোগ প্রতিরোধক হিসেবেও কাজ করে।
সাইট্রিক ফল :
অক্সিজেন সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে লেবু অন্যতম। সাধারণত এটা অ্যাসিডযুক্ত, তবে খাওয়ার পর, শরীর ক্ষারীয়তে পরিবর্তিত হয়। লেবু কাশি, সর্দি, ফ্লু এবং ভাইরাসজনিত রোগের জন্য এই খুব উপকারী। লেবুকে লিভারের জন্য সেরা টনিক বলে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।
আনারস :
আনারসের পিএইচ মান ৮.৫। এ ছাড়া আনারস ভিটামিন এ, বি এবং সি-এর সঙ্গে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে সমৃদ্ধ। রক্ত সরবরাহ বৃদ্ধির সঙ্গে রক্তচাপ হ্রাস করতেও সাহায্য করে আনারস।
বিট :
শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে বিটের বিকল্প নেই। বিটে থাকা নাইট্রেট শরীরে গিয়ে রূপান্তরিত হয় নাইট্রিক অক্সাইডে। এই নাইট্রিক অক্সাইড হিমোগ্লোবিন বাড়ায়। ফলে শরীরে অক্সিজেন বৃদ্ধি পায়। রক্তের ঘনত্ব ঠিক রেখে হৃৎপিণ্ডের ওপর চাপ কমায়।
বাদাম
ও কিশমিশ:
আমন্ড, কাজু ইত্যাদি বাদাম শরীরে অ্যালকালাইনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। এ ছাড়া কিশমিশে থাকা ভিটামিন এ, বি, সি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রক্ত চলাচলকে নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে। এর ফলে হৃদরোগের সম্ভাবনা কমে। তাই যে কোনো সময় খিদে পেলে ড্রাই ফ্রুটস স্ন্যাক্স হিসেবে খেতে পারেন, শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়বে।
অঙ্কুরিত ডাল বা কাঁচা ছোলা:
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে শরীরে পুষ্টির জোগান দিতে কাঁচা ছোলা, অঙ্কুরিত ডালজাতীয় খাদ্য খুবই উপকারী। এতে থাকা ফাইবার এনার্জি যোগায়। এ ছাড়া দেহের ক্ষতিকারক টক্সিন উপাদানগুলো বের করে দিয়ে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি মেটায়।
রসুন:
সকালে উঠে খালিপেটে এক কোয়া কাঁচা রসুন রক্তচাপ কমাতে ও শরীরের ব্যথা সহ অন্যান্য অনেক সমস্যায় ম্যাজিকের মতো কাজ করে। আর এই করোনা পরিস্থিতিতে নিরাপদে থাকতে, রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়াতে এবং শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের যোগান রাখতে নিয়ম করে কাঁচা রসুন খান।
মিষ্টি আলু:
মিষ্টি আলু নিয়মিত মিষ্টি আলু খেলে শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমে, বাড়তি ওজনও কমে। মিষ্টি আলু নানা প্রাকৃতিক খনিজে ভরপুর। এ ছাড়া এতে প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেনও রয়েছে যা আমাদের শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতিপূরণ করতে সাহায্য করে।
গ্রিন টি:
গ্রিন টি-তে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। ফলে গ্রিন টি শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া গ্রিন টি মেটাবলিজমের হার ঠিক রাখে বলে শরীরে অক্সিজেনের পর্যাপ্ত জোগান থাকে। মেদ কমিয়ে ফিট থাকতে চাইলেও গ্রিন টিকে ভরসা করতে পারেন।
তরমুজ:
উচ্চ অ্যালকালাইন মাত্রা যুক্ত এই ফলের পিএইচ মান ৯। এতে অধিক পরিমাণে পানি এবং ফাইবার থাকার ফলে এটি ডাইইউরেটিক হিসেবে কাজ করে। তরমুজে প্রচুর পরিমাণে লাইকোপেন, বিটা-ক্যারোটিন ও ভিটামিন সি থাকে যা শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও এনার্জির জোগান দেয় এবং শরীরকে সক্রিয় রাখে।
টকদই:
খাবার শেষে একবাটি টকদই না হলে অনেকেরই চলে না। টকদই শরীরের পক্ষে খুব উপকারী। এটি পেটের সমস্যায় কাজে দেয়। এ ছাড়া এক বাটি টকদই খাদ্যতালিকায় রাখলে তা শরীরে অক্সিজেনের পর্যাপ্ত জোগানেও সহায়তা করে।
ক্যাপসিকাম:
ক্যাপসিকামের পিএইচ মান ৮.৫। এটি পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে। ক্যাপসিকামে থাকা উচ্চমাত্রায় ভিটামিন এ দেহে রোগ, স্ট্রেস সৃষ্টিকারী ফ্রি র্যাডিকালের হাত থেকে দেহকে মুক্ত রাখে। ফলে শরীর ঝরঝরে থাকে। অক্সিজেনের ঘাটতি মেটাতে খাদ্যতালিকায় আপনি ক্যাপসিকাম নিয়ম করে রাখতে পারেন।
পালংশাক:
পালংশাক অপর একটি পুষ্টিকর সবুজ শাক। এতে প্রচুর আয়রন থাকে বলে রক্তাল্পতার রোগীদের ক্ষেত্রে এটি প্রাকৃতিক ওষুধ বলে বিবেচ্য হয়। এ ছাড়া অনেকেই জানেন না, এতে থাকা অক্সিজেন রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতেও সাহায্য করে।
এ ছাড়াও অ্যাভোকাডো, পাকা কলা, বেরিজাতীয় ফল, খেজুর, গাজর, আপেল, খোবানি, আঙুর, আনারস, আম, পেঁপে, কিউই ইত্যাদিও অ্যালকালাইন জাতীয় খাবার এবং প্রত্যেকটিই পুষ্টিকর। ফলে এই ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতিতে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি মেটাতে খাদ্যতালিকায় এগুলো যোগ করুন। পর্যাপ্ত পানি খান। তাহলেই অনেকাংশে সুস্থ থাকবেন। উল্লিখিত অক্সিজেন সমৃদ্ধ খাবারগুলো আপনার রক্তে অক্সিজেনের স্তর বাড়াতে সহায়তা করবে।