শুক্রবার, ৭ জানুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | নারায়ণগঞ্জ | বন্দর | শিরোনাম » বন্দরে সাংসদ সেলিম ওসমানের পছন্দের চেয়ারম্যানরা তৈমূরের পক্ষে ভোট প্রার্থনায় মাঠে
বন্দরে সাংসদ সেলিম ওসমানের পছন্দের চেয়ারম্যানরা তৈমূরের পক্ষে ভোট প্রার্থনায় মাঠে
যে কোন মূল্যে এবার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন থেকে তাড়াতে হবে আইভী কে । এমন লক্ষ্য সামনে রেখে প্রায় এক বছরের অধিক সময় জুড়ে নারায়ণগঞ্জে হেফাজত কে দিয়ে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে আইভীর বিষেদাগার করা হয়েছে, সনাতন ধর্মালম্বী নেতাদের দিয়ে আইভী বিরোধী নানা কটুক্তি, হকারদের দিয়ে নানাভাবে মেয়র আইভী বিরোধী নানা সভা সমাবেশ মিছিল ও কটুক্তি করা, দূদকে নামে নানা অপপ্রচার চালানোর পরও থেমে থাকে নাই চক্রটি । যাদের নামে কথা বলতেও সাহস করে না কোন গণমাধ্যম সেখানে সাধারণ মানুষ কি করে কথা বলবে ? সেই চক্রটি মেয়র আইভীর ঘনিষ্ঠ আস্থাভাজন ব্যাক্তিদের কাছে টেনে নানাভাবে আইভীর অপরাধমূলক তথ্য উদঘাটন করতে কোটি কোটি টাকার প্রলোভন দিয়েও ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত আইভীকে নাসিক ভবন থেকে বিতারিত করতে নির্বাচনের মাঠে নানা কুটকৌশল চালিয়ে যাচ্ছে নগরীর প্রভাবশালী পরিবারের একাধিক সদস্য ও তাদের সিন্ডিকেটে থাকা সহকর্মীরা । এভাবেই শহরের অনেকেই প্রতিনিয়তঃ সমালোচনা করে যাচ্ছেন ওই প্রভাবশালী পরিবারের বিরুদ্ধে । ধর্মের কল বাতাসে নড়ে বলেই আজ শুক্রবার ওই পরিবারের অত্যান্ত আস্থাভাজন চেয়ারম্যানরা হাতি প্রতীকের পক্ষে ভোট প্রার্থনায় মাঠে নেমেছেন
এমন সমালোচনার ধারাবাহিকতায় এবার সেলিম ওসমানের আস্থাভাজন কয়েকজন ইউপ চেয়ারম্যান শুক্রবার সকালে বিএনপির নেতা (অব্যাহতি প্রাপ্ত) অ্যাডভেকেট তৈমূর আলম খন্দকারের পাশে থেকে নাসিক নির্বাচনে হাতি প্রতীকের পক্ষে বোট প্রার্থনা করায় খোদ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হাই কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছেন ।
“তৈমূর আলম খন্দকার ওসমান পরিবারের প্রতিনিধি।” এই পরিবারের পক্ষ থেকেই তিনি নির্বাচনে এসেছেন!
শুক্রবার (০৭ জানুয়ারি) তৈমূর আলম খন্দকারের গণসংযোগে সাংসদ সেলিম ওসমান অনুসারি লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হওয়া তিন চেয়ারম্যানকে দেখা যায়। এরপর থেকেই এ নিয়ে শহরজুড়ে আলোচনা। বলা হচ্ছে, এবার সত্যি সত্যিই প্রমাণ হলো, তৈমূর আলম খন্দকার ওসমান পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করছেন! অনেকে বলছেন, শেষ পর্যন্ত তৈমূর ঘোমটা উঠিয়ে দেখিয়ে দিলেন তিনি কাদের প্রতিনিধিত্ব করতে মেয়র প্রার্থী হয়েছেন।
সূত্র বলছে, এদিন তৈমূর আলম খন্দকারের গণসংযোগে সেলিম ওসমান অনুগামী ও লাঙ্গল প্রতীকের চেয়ারম্যান এহসানউদ্দিন আহম্মেদ, মাকসুদ ও দেলোয়ার প্রধান সামনের সারিতে উপস্থিত থেকে ২৫ নং ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন। এই গণসংযোগে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুলকেও দেখা গেছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই সেলিম ওসমানের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে সর্বত্র পরিচিত।
নগরবাসী বলছেন, বন্দর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহম্মেদ, কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার প্রধান এবং মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেনকে এসব ইউনিয়নে জাতীয় পার্টি থেকে নমিনেশন দিয়েছে জাতীয় পার্টি। তারা তিনজনই সাংসদ সেলিম ওসমান অনুগামি। সাংসদের কথার বাইরে তারা কখনই যান বলে জনশ্রুতি রয়েছে। ফলে, এদিন তৈমূরের গণসংযোগে এই তিন চেয়ারম্যানের উপস্থিতির নেপথ্যে সাংসদ সেলিম ওসমান রয়েছেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
সূত্র মতে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বর্তমান মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বিরোধী হিসেবে পরিচিত ওসমান পরিবার। গত ২০১১ সাল থেকে শুরু করে অদ্যবধি তারা সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরোধীতা করে আসছেন ধারাবাহিক ভাবে। কিন্তু কোনো বিরোধীতাই আইভীর এগিয়ে চলাকে ঠেকাতে পারেনি। সর্বশেষ এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন যাতে আইভী না পান, সে লক্ষ্যে নানা চেষ্টা তদবিরও করা হয়েছিলো। কিন্তু শেষতক দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইভীর হাতেই নৌকা তুলে দেন।
এদিকে আইভী নৌকা পেলেও খুশি হতে পারেননি ওসমান পরিবার। যার কারণে ঢাকায় নারায়ণগঞ্জের নেতাদের ডেকে পাঠানো হলেও সেখানে উপস্থিত হননি শামীম ওসমান। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্য রেখেছিলেন। জাতির জনকের আরেক কন্যা শেখ রেহানাও ভার্চ্যুয়ালি সকলের সাথে ওইদিন শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। সূত্র মতে, বৈঠকে শামীম ওসমান না যাওয়াতে কেন্দ্রীয় নেতারা তার এমন আচরণে নাখোশ। শোনা যাচ্ছে, দলের সভাপতি শেখ হাসিনাও এ ব্যাপারে নাখোশ রয়েছেন এই সাংসদের উপর।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জে বিজয় সমাবেশের আয়োজন করে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। এই সমাবেশে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রায় দশজন নেতা উপস্থিত হয়েছিলেন। কিন্তু এই সমাবেশেও শামীম ওসমান আসেননি। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় এক নেতা জানিয়েছিলেন, তিনি শামীম ওসমানের সাথে বেশ কয়েকবার কথা বলেছিলেন। কিন্তু তিনি সমাবেশে আসবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
সূত্র বলছে, শামীম ওসমানের আচরণে মোটেও সন্তুষ্ট নন কেন্দ্রীয় নেতারা। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানকের বক্তব্যেও সেটি ফুটে উঠেছিল। তিনি কয়েকবারই কয়েকটি স্থানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘আমি নানকও অপরিহার্য নই। অহঙ্কার দেখাবেন না। নেত্রীর কাছে সব খবর আছে। ছাড় দেওয়া হবে না।’ সর্বশেষ শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) বন্দরে কর্মী সমাবেশে নানক শামীম ওসমানকে ইংগিত করে বলেছেন, শেখ হাসিনা নৌকা মার্কাটা দিয়েছিলো বলেই আপনি এমপি হয়েছেন। জীবিত থাকতে আগামী নির্বাচনে আর নৌকা দিতে দিবো না।’
অন্যদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই সেলিম ওসমানকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘আপনাদের লজ্জা করা উচিত। আপনাদের কী দেয় নাই নেত্রী! আপনাদের তিন ভাইকে এমপি করেছেন। অথচ একটা নমিনেশন সহ্য করতে পারেন না। এখনও লাঙ্গলের এমপি আমাদের সমর্থন দেয় নাই। তারা তাদের কর্মীদের বলছে তোমরা হাতি মার্কায় ভোট দেও। এটা কিন্তু সত্য কথা, আপনারা যাচাই বাছাই করেন।’
সূত্র: নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট