রবিবার, ২ জানুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | জাতীয় | নরসিংদি | শিরোনাম » বিয়েতে রাজি না হওয়ায় তিন সন্তানের জননীকে শ্বাসরোধে হত্যা
বিয়েতে রাজি না হওয়ায় তিন সন্তানের জননীকে শ্বাসরোধে হত্যা
২০১০ সালে বিয়ে হয় নরসিংদীর রায়পুরার রুনা আক্তারের। সাড়ে ৩ বছর আগে সাড়ে ৪ লাখ টাকা ঋণ করে শ্রমিক ভিসায় সৌদি আরব যায় স্বামী আবুল কালাম মিয়া। ঋণের টাকা পরিশোধ তো দূরের কথা পরিবারকেও টাকা দেওয়া বন্ধ করেন কালাম। শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকা পরিশোধ করতে বলেন স্ত্রীকে। এ নিয়ে মনোমালিন্য ও নির্যাতন শুরু হয় রুনার ওপর। নারী নির্যাতনের মামলা করেন রুনা। ক্ষুব্ধ হয়ে গত চার মাস আগে ডিভোর্স লেটার পাঠায় কালাম।
বাধ্য হয়ে তিন সন্তান নিয়ে বাপের বাড়িতে ফিরতে হয় রুনাকে। কাজ শুরু করেন সবজি ক্ষেতে। এরই মধ্যে গত ১৩ ডিসেম্বর নরসিংদীর রায়পুরার চর মরজালের একটি ধানক্ষেত থেকে রুনা আক্তারের (২৮) চোখ উপড়ানো মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় শুরুতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর ও সন্দেহ ছিল শ্বশুরবাড়ির ওপর। তবে তদন্তে বেড়িয়ে আসে ভিন্ন তথ্য।
সৌদি প্রবাসী স্বামীর ডিভোর্স লেটারের পর নতুন করে বিয়ের প্রলোভন দেখায় দূর সম্পর্কের মামা আব্দুর রাজ্জাক। তিনি খোরশেদ নামে মিয়া নামে আরেকজনের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করেছিলেন। এজন্য তিনি নিয়েছিলেন ৯০ হাজার টাকা। কিন্তু রুনা শেষ পর্যন্ত বিয়েতে রাজি না হওয়ায় পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয় রুনাকে।
ওই ঘটনায় জড়িত আব্দুর রাজ্জাক ও খোরশেদ মিয়াকে গ্রেফতারের পর রোববার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, নিহত রুনা আক্তার সৌদি প্রবাসী আবুল কালাম মিয়ার স্ত্রী ও একই গ্রামের উত্তর পাড়া এলাকার মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়ার মেয়ে। নিহত রুনা আক্তার ও কালাম মিয়ার সংসারে ৩ সন্তান রয়েছে।
জানা যায়, গত ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রুনা বাবার বাড়ি থেকে মামার বাড়ি যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর থেকে আর তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। রাত ৮টার দিকে পরিবারের সদস্যরা তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার নম্বর বন্ধ পায়। ১৩ ডিসেম্বর সকালে স্থানীয় লোকজন গ্রামের ধানক্ষেতে রুনার লাশ পড়ে থাকতে দেখে।
ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাবা মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে রায়পুরা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সিআইডি ঘটনাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, হত্যার ঘটনাটি কেন ও কীভাবে সংগঠিত হয়েছে, ঘটনায় কে বা কারা জড়িত, কারো সাথে পূর্ব কোনো বিরোধ ছিল কি-না ইত্যাদি বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর ভিকটিমের পরিবার, ঘটনাস্থল ও আশপাশ এলাকার বিভিন্ন উৎস হতে সরেজমিনে সংগ্রহ করা হয়।
পরবর্তীতে এলআইসির একাধিক চৌকস টিম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আসামিদের গ্রেফতারের জন্য সম্ভাব্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে। এরই ধারাবাহিকতায় সন্ধিগ্ধ আসামি খোরশেদ মিয়াকে নেত্রকোনার কলমাকান্দা ও আব্দুর রাজ্জাক খানকে নরসিংদীর রায়পুরা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
মুক্তা ধর বলেন, গ্রামের বিভিন্ন এনজিও সমিতি হতে সাড়ে চার লাখ টাকা ঋণ নিয়ে সাড়ে ৩ বছর আগে শ্রমিক ভিসায় সৌদি আরব যায় স্বামী আবুল কালাম মিয়া। কিন্তু ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য চাপ আসে স্ত্রী রুনার ওপর। রুনা স্বামীকে জানালে যৌতুক বাবদ বাপের বাড়ি হতে টাকা পরিশোধ করতে বলে। কিন্তু রুনার পরিবারের সচ্ছলতা ছিল না। রুনা টাকা পরিশোধে অপারগতা জানালে সংসারের খরচার টাকাও দেওয়া বন্ধ করে কালাম। এ নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে মনোমালিন্য ও নির্যাতনের শিকার হয় রুনা। নারী নির্যাতনের মামলা করলে ক্ষুব্ধ হয়ে গত চার মাস আগে ডিভোর্স লেটার পাঠায় কালাম।
বাধ্য হয়ে তিন সন্তান নিয়ে বাপের বাড়িতে ফিরতে হয় রুনাকে। কাজ শুরু করেন সবজি ক্ষেতে। এরই মধ্যে নতুন করে বিবাহের জন্য প্ররোচনা দিতে থাকে দূর সম্পর্কের মামা পল্ট্রি ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর চার সন্তানের জনক বৃদ্ধ খোরশেদ মিয়ার সঙ্গে বিবাহ ঠিক করেন। এজন্য ৯০ হাজার টাকা খরচাও আদায় করেন আব্দুর রাজ্জাক। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বিয়েতে অমত জানায় রুনা। এ নিয়ে আব্দুর রাজ্জাক ও খোরশেদ মিয়া ক্ষিপ্ত হয়। রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে ধানক্ষেতে গিয়ে হাত পা বেঁধে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে ও চোখ উপড়ে ফেলে।
মুক্তা ধর বলেন, এই মর্মান্তিক ঘটনায় আরও দুজন জড়িত। তাদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। গ্রেফতার দুজনকে আজই নরসিংদী আদালতে সোপর্দ করা হবে।