শনিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | রংপুর | শিরোনাম » অবশেষে রেসকিউ সেন্টারে হিমালিয়ান শকুনটি
অবশেষে রেসকিউ সেন্টারে হিমালিয়ান শকুনটি
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে হিমালিয়ান গ্রিফন প্রজাতির একটি শকুন উদ্ধারের পাঁচ দিন পর দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার সিংড়া জাতীয় উদ্যানে অবস্থিত শকুন রেসকিউ সেন্টারে হস্তান্তর করা হয়েছে।
শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে সামাজিক বনায়ন বিভাগের রংপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তার দপ্তর থেকে শকুনটি সিংড়া জাতীয় উদ্যানে অবস্থিত শকুন রেসকিউ সেন্টারে পাঠানো হয় বলে নিশ্চিত করেছেন সামাজিক বনায়ন বিভাগের রংপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মতলুবর রহমান।
সিংড়া জাতীয় উদ্যানের বিট কর্মকর্তা হরিপদ দেবনাথ জানিয়েছেন, এই উদ্যানে স্থাপিত শকুন রেসকিউ সেন্টারে বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধারকৃত ৯টি শকুন রাখা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, প্রতি বছরের মতো আগামী বছরের এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে সেন্টারে থাকা শকুনগুলোকে অবমুক্ত করা হবে।
এদিকে কুড়িগ্রামের বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মমিনুল ইসলাম জানান, গত রোববার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার দিকে ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের আমতলা বাজার সংলগ্ন মাঠে দল ছুট অবস্থায় শকুনটিকে উদ্ধার করে আহম্মদ আলী নামের একজন শ্রমিক সরদার। শকুনটি উদ্ধার করার পর আহাম্মদ আলী তার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কুটি চন্দ্রখানা গ্রামে অবস্থিত বাড়িতে নিয়ে যান। পরদিন সোমবার লোকমুখে খবর ছড়িয়ে পড়লে শকুনটি দেখতে উৎসুক মানুষের ভিড় জমে।
এ অবস্থায় খবর পেয়ে ফুলবাড়ী উপজেলা বন কর্মকর্তা নবীর হোসেন সোমবার বিকেলে আহম্মদ আলীর বাড়ি থেকে শকুনটি তার অফিসে নিয়ে আসেন। এরপর মঙ্গলবার সকালে শকুনটি বন বিভাগের জেলা অফিসে নিয়ে আসা হয়। পরে ওইদিন বিকেলে শকুনটি বন বিভাগের রংপুর বিভাগীয় অফিসে পাঠানো হয়। শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) পর্যন্ত শকুনটি বিভাগীয় বন অফিসে রাখা ছিল।
এ প্রসঙ্গে সামাজিক বনায়ন বিভাগের রংপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মতলুবর রহমান জানান, হিমালয় এবং ভুটানে শীতের প্রকোপ বাড়লে ওই অঞ্চলগুলো থেকে ১৫ থেকে ২০টি পর্যন্ত দল বেঁধে শকুনগুলো আসে এবং বড় বড় গাছে আশ্রয় নেয়। কোনো কারণে উদ্ধার হওয়া শকুনটি দুর্বল হয়ে পড়ায় দলছুট হয়ে মাঠে পড়েছিল।
জানা গেছে, শকুন (Vulture) মৃত প্রাণীর মাংস খেয়ে বেঁচে থাকা এক প্রকার পাখি। সাধারণত এরা অসুস্থ ও মৃত প্রায় প্রাণীর চারদিকে শিকারি পাখির মতো তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখে উড়তে থাকে এবং প্রাণীটি মরার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। প্রাণীটি মারা যাওয়ার সাথে সাথে খাওয়ার জন্য শকুনেরা দল বেঁধে হামলে পড়ে। তবে খুব একটা প্রয়োজন না হলে শকুন জীবন্ত প্রাণী শিকার করে খায় না।
আরও জানা গেছে, শকুনের গলা, ঘাড় ও মাথায় কোনো পালক থাকে না। এরা প্রশস্ত ডানায় ভর করে আকাশে উড়ে বেড়ায়। বট, পাকুর, অশ্বত্থ, ডুমুর প্রভৃতি বিশালাকার গাছের ডালে লোকচক্ষুর আড়ালে এরা বাসা বাঁধে। পর্বতের চূড়ায় বা গাছের কোটরে সাদা বা ফ্যাকাসে রঙের এক থেক তিনটি ডিম পাড়ে।
পৃথিবীতে প্রায় ১৮ প্রজাতির শকুন আছে। এরমধ্যে বাংলাদেশে ৪ প্রজাতির স্থায়ী এবং ২ প্রজাতির পরিযায়ী-এই ৬ প্রজাতির শকুন দেখতে পাওয়া যায়। এগুলো হচ্ছে হলোড়রাজ শকুন, গ্রিফন শকুন বা ইউরেশিয়া শকুন, হিমালিয়ান গ্রিফন শকুন, সরু ঠোঁট শকুন, কালা শকুন ও ধলা শকুন। বর্তমানে সারা বিশ্বে সব প্রজাতির শকুন বিপন্ন। আমাদের দেশেও আগের মতো আর শকুন চোখে পড়ে না।
অথচ শকুনই একমাত্র প্রাণী যা রোগাক্রান্ত প্রাণী খেয়ে হজম করতে পারে এবং এ্যানথ্রাক্স, যক্ষ্মা ও খুরা রোগের সংক্রমণ থেকে অবশিষ্ট জীবকূলকে রক্ষা করে থাকে।