শিরোনাম:
ঢাকা, শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১
N2N Online TV
শনিবার, ২১ আগস্ট ২০২১
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক | ছবি গ্যালারী | শিরোনাম » তালেবানের ভয়ে ১০ বছর পুরুষ সেজে ছিলেন নারী নাদিয়া!
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক | ছবি গ্যালারী | শিরোনাম » তালেবানের ভয়ে ১০ বছর পুরুষ সেজে ছিলেন নারী নাদিয়া!
৬০৫ বার পঠিত
শনিবার, ২১ আগস্ট ২০২১
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

তালেবানের ভয়ে ১০ বছর পুরুষ সেজে ছিলেন নারী নাদিয়া!

---

তার পুরো নাম নাদিয়া গুলাম দাস্তগির। বিশ্ব তাকে চিনেছিল ২০১০ সালে। নাদিয়া তখন ২৫ বছর বয়সী। শারীরিক এবং মানসিকভাবে পুরোদস্তুর নারী হওয়া সত্ত্বেও জীবনের প্রথমভাগ তাকে পুরুষের বেশে কাটাতে হয়েছিল। তালেবানের হাত থেকে রক্ষা পেতে এছাড়া আর কোনো উপায় তার সামনে তখন ছিল না।
বিজ্ঞাপন

অন্য দেশে পালিয়ে যাওয়ার পর নিজের নারী সত্ত্বাকে উন্মোচন করার সাহস পেয়েছিলেন নাদিয়া। তার আগপর্যন্ত নিজের আসল সত্ত্বা প্রায় ভুলতে বসেছিলেন তিনি।

ঘরে-বাইরে সবখানে পুরুষের বেশে থেকে এবং পুরুষদের মতো ওঠাবসা করতে করতে নারীসুলভ আচরণ প্রায় ভুলে গিয়েছিলেন তিনি।

১৯৮৫ সালে কাবুলে জন্ম নাদিয়ার। ছোট থেকেই নাদিয়া বুঝে গিয়েছিলেন তার দেশে বাঁচার অধিকার নেই নারীদের। চোখের সামনে যখন তখন মেয়েদের তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটত। হত্যা, অঙ্গচ্ছেদ ছিল সাধারণ ঘটনা।

১৯৯৩ সালে তালেবানের ছোড়া বোমা এসে পড়েছিল তাদের বাড়িতে। বাড়ির একাংশ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। পরিবারের অনেকেই সেদিন প্রাণ হারান। ওই হামলায় মৃত্যু হয় নাদিয়ার ভাইয়েরও।

নাদিয়া নিজেও গুরুতর জখম হয়েছিলেন। পরের দুই বছর হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই কাটাতে হয়েছিল তাকে। ১৯৯৬ সালে কাবুল পুরোপুরি তালেবানদের দখলে চলে যায়। কাবুলের ক্ষমতা বদলের সঙ্গে নাদিয়ার জীবনও পুরোপুরি বদলে যায়।

নাদিয়ার বয়স তখন ১১ বছর। মায়ের কথাতে সেই প্রথম পুরুষের বেশ ধরেন নাদিয়া। সামনে আসেন মৃত ভাইয়ের পরিচয়ে। নাদিয়া জানতেন, অনাহারের হাত থেকে পরিবারকে এবং তালেবানের অত্যাচার থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য এছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

পুরুষের বেশে একা বাড়ির বাইরে বের হতে শুরু করেন। মসজিদে গিয়ে কুরআন পড়তে শুরু করলেন। পরে কাবুলের এক মসজিদে কর্মচারী হিসেবে কাজে যোগ দেন।

এভাবে পুরুষ সেজে দিনের পর দিন উপার্জন করে বাড়ি ফিরতেন। সেই টাকাতেই পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতেন। ‘পুরুষ’ হওয়ার জন্য ১৬ বছর বয়সে স্কুলেও ভর্তি হতে পেরেছিলেন।

১০ বছর এভাবে কাটিয়ে দিয়েছিলেন। প্রতি মুহূর্তে নিজেকে আরো বেশি ‘পুরুষ’ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা চালাতে হত তাকে। প্রতি মুহূর্তে মানসিক-শারীরিক দ্বন্দ্বে জর্জরিত হতে হতো।

কিন্তু আর সম্ভব হচ্ছিল না। বয়স যত বাড়ছিল, পোশাক ছাপিয়ে নারীসত্ত্বা জানান দিতে শুরু করছিল। পুরুষের পরিচয় বয়ে নিয়ে যেতে যেতে হাঁফিয়ে উঠেছিলেন নাদিয়া নিজেও।

২০০৬ সালে আফগানিস্তানের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারি সংস্থার সাহায্যে কাবুল থেকে পালাতে সফল হন তিনি।

স্পেনে আশ্রয় নেন নাদিয়া। সেখানে বেশ কিছু দিন তার চিকিৎসা চলে। তার পর স্পেনের একটি শরণার্থী শিবিরে থাকতে শুরু করেন।

এক বইয়ের পাতাতেই সারা বিশ্ব নাদিয়াকে চিনতে পারে। এর পর আরো অনেক বই প্রকাশ হয়েছে তাকে নিয়ে।

স্পেনে থেকে উচ্চশিক্ষিত হয়েছেন নাদিয়া। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ২০১৬ সালে ‘ব্রিজেস অব পিস’ নামে একটি বেসরকারি সংস্থাও গড়ে তুলেছেন তিনি। স্পেনের ওই শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া তার মতো আরও অনেকের শিক্ষার ভার নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন।

নাদিয়ার পরিবার এখনো আফগানিস্তানেই রয়েছে। দেশ ছাড়ার সঙ্গে পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়েছে তার। তালেবান প্রত্যাবর্তনের পর দেশে ফেরার ক্ষীণ আশাও হারিয়েছেন। পরিবারকে খুঁজে পাওয়ার আর কোনো সম্ভাবনাও দেখছেন না তিনি।



আর্কাইভ