বৃহস্পতিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | ঢাকা | রাজনীতি | শিরোনাম » এদেশের রাজনীতিতে প্রতিহিংসার দেয়াল তুলেছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের
এদেশের রাজনীতিতে প্রতিহিংসার দেয়াল তুলেছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এদেশের রাজনীতিতে প্রতিহিংসার দেয়াল তুলেছে বিএনপি। অকৃতজ্ঞতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বিএনপি।
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা এবং শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে হত্যা চেষ্টার পরও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা রাজনীতিতে মানবিকতা এবং সহিষ্ণুতার যে নজির স্থাপন করেছেন, তা সমকালীন বিশ্বে নজিরবিহীন। এদেশের রাজনীতিতে প্রতিহিংসার দেয়াল তুলেছে বিএনপি। অকৃতজ্ঞতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বিএনপি।’
ওবায়দুল কাদের আজ বৃস্পতিবার গণমাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘জিয়া পরিবারের সদস্যদের অনেক কীর্তি এদেশের মানুষ জানে। কিন্তু সেসব পরিবারের পেরিয়ে রাজনীতির মাঠে আসুক তা আমরা চাইনা। কিন্তু বিএনপি নেতারা আজ সে প্যান্ডোরার বাক্স উন্মুক্ত করতে উস্কানী দিচ্ছেন স্পষ্টত।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতারা এতটাই অন্ধ এবং ফরমায়েশ নির্ভর হয়ে গেছেন যে, দলের একজন নেতা মিথ্যাচার করলো, অশালীন কথা বললো অথচ সিনিয়র নেতারা তার পক্ষেই সাফাই গাইলেন। আবার তারা সরকারকে মানবিক হওয়ার সবক দেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে অশ্লীল বক্তব্য প্রদানকারী অভিযুক্ত বিএনপি নেতাকে জাতির কাছে নি:শর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তা না হলে ধরে নেব, এটা বিএনপির দলীয় বক্তব্য। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ তা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবে। আশা করছি বিএনপি নেতাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক শিষ্টাচারে বিশ্বাসী। ঐতিহ্যগতভাবেই রাজনীতিতে বিনয়, সহমর্মিতা, পরমত সহিষ্ণুতা চর্চা করে আওয়ামী লীগ। দলে কিংবা সরকারে কেউ শিষ্টাচার বহির্ভূত কাজ করলে তাকে ছাড় দেয়া হয়না, এ কথা দেশরতœ শেখ হাসিনা বার বার প্রমাণ করেছেন। যত বড় রাজনৈতিক পরিচয় হোক, অন্যায়, অনিয়ম কিংবা রাজনৈতিক শিষ্টাচার অথবা শৃঙ্খলা বহির্ভূত কাজ করলে দল কখনো তার পক্ষে দাঁড়ায় না।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশবাসী দেখেছে একজন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বহীন বক্তব্য এবং অসদ আচরণের জন্য শেখ হাসিনা ছাড় দেননি। আর তার বিপরীতে দেশবাসী দেখলো বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার দলের একজন নেতার অশালীন বক্তব্যকে নির্লজ্জভাবে কীভাবে দলীয়ভাবে সমর্থন দিল।’
তিনি বলেন, ‘দেশবাসী বিস্মিত, ক্ষুব্ধ এবং লজ্জিত। বিএনপি নেতারা রাজনৈতিক শিষ্টাচারকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। বিএনপি লালন করে প্রতিহিংসা, ষড়যন্ত্র আর পরশ্রীকাতরতা। তাদের মাঝে কৃতজ্ঞতাবোধ নেই, তারা কৃতঘœ। তারা জন্মলগ্ন থেকে রাজনীতির সুষ্ঠু ধারা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের পরিবেশকে কলুষিত করে আসছে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অবশ্য বিএনপি এমনই এক দল যাদের কৃতজ্ঞতাবোধ কখনো ছিলনা, এখনও নেই। দলগতভাবে তারা শিষ্টাচার বর্জিত দল। তা নাহলে বঙ্গবন্ধু কন্যা যখন শোকসন্তপ্ত মাকে সান্তনা দিতে গিয়েছিলেন তখন তারা দরজা বন্ধ করে অসম্মানজনকভাবে ফিরিয়ে দিত না। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চায়ের আমন্ত্রণের বিপরীতে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সেদিনের অশালীন বক্তব্য সেসময় দেশবাসী শুনেছিল। তাই বলতে চাই, শিষ্টাচারহীনতা, অশালীনতা তাদের মজ্জাগত। এটা তাদের রাজনৈতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার।’
তিনি বলেন, ‘মঞ্চে-সংসদে দাঁড়িয়ে বিএনপি নেতা-নেত্রীরা যে সব ভাষায় বক্তব্য রাখেন, তা বলারও অযোগ্য, ছাপারও অযোগ্য। কথায় ও কাজে পরিশীলিত রুচিবোধ ও শালীনতা তাদের মাঝে নেই। না হয়, বিএনপি নেতা আলালের এমন অরাজনৈতিক কুরুচিপূর্ণ ভাষাকে কীভাবে রাজনীতিতে সজ্জন বলে বিবেচিত মীর্জা ফখরুল সাহেবরা যৌক্তিকতা আছে বলে পাবলিকলি সার্টিফিকেট দেন? তাহলে জনগণ ধরে নিচ্ছে তাদের সব অপপ্রচার আর বিষোদগারের মতো লোক দেখানো ভদ্রতাও একধরণের মুখোশ? আসলে বিএনপির রাজনীতি এখন তলানীতে ঠেকে গেছে। তারা মেরুদন্ডহীন ফরমায়েশ-সর্বস্ব এক রাজনৈতিক দল।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ইতিহাসের চলিষ্ণু কলম লিখে যায় কত ইতিহাস। আমরা সেসব তুলে ধরে কাউকে বিব্রত করতে চাইনা। কারণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর কন্যা আমাদের সে শিক্ষা দেননি। আমরা কক্ষনো একথা বলতে চাইনা যে, ১৯৯৩ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আসিফ নওয়াজ জানজুয়ার মৃত্যুতে কেন শোকবার্তা পাঠিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া!’
তিনি বলেন, ‘অথচ মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষরকারী বাংলাদেশ-ভারত যৌথবাহিনীর জেনারেল অরোরা মৃত্যুবরণ করেন ২০০৫ সালে, তখনও বেগম জিয়া দেশের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর মৃত্যুতে বেগম জিয়াতো কোনো শোক প্রকাশ করেননি? তিনি গভীর শোকপ্রকাশ করেছিলেন বাংলাদেশের মানুষের উপর ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর গণহত্যা অভিযানে সরাসরি অংশগ্রহনকারী তৎকালীন মেজর জানজুয়ার মৃত্যুতে। অবশ্য সে সময় অনেকে নানা মুখরোচক কথা বললেও আমরা সেসব বিশ্বাস করতে চাই না এবং মনে করিয়ে দিতে চাই না। দেশের মানুষ এত সহজে সবকিছু ভুলে যায়না।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ইতিহাস বলে মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত সেনানিবাসে নিরাপদ অবস্থানে ছিলেন বেগম জিয়া। জেনারেল জিয়া তাঁকে বার বার ক্যান্টনমেন্ট ছেড়ে আসতে বললেও তিনি সেনানিবাসের নিরাপদ ও বিলাসবহুল আতিথেয়তা ত্যাগ করেননি। পরবর্তিতে এ নিয়ে তাঁদের পারিবারিক এবং দাম্পত্য কলহ তুঙ্গে উঠে। বিশিষ্ট কলামিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরীর কলাম থেকে জানা যায়, জেনারেল জিয়া বেগম জিয়াকে ডিভোর্স দেয়ার মনস্থির করেছিলেন। সে সংকটকালে বেগম জিয়ার অনুরোধের প্রেক্ষিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হস্তক্ষেপে তাদের সংসার জীবন রক্ষা পেয়েছিল।’