বুধবার, ১ ডিসেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | জাতীয় | শিরোনাম » গাড়ি ভাঙচুর না করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাঙ্গনে ফিরে যাবার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
গাড়ি ভাঙচুর না করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাঙ্গনে ফিরে যাবার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, যানবাহন ভাঙচুর করা তাদের কাজ নয়। অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্যদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাস্তায় নেমে গাড়ি ভাঙ্গা এটা ছাত্রদের কাজ নয়, এটা কেউ করবেন না। দয়া করে যার যার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যান, লেখাপড়া করেন। আর যারা দোষী তাদেরকে খুঁজে বের করে অবশ্যই শাস্তি দেয়া হবে, সেটা আমরা করবো।’
শেখ হাসিনা আজ সকালে বিজয়ের মাসের প্রথম দিন বাংলাদেশ শিশু একাডেমীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ম্যুরাল এবং রাজধানীর ধানমন্ডীতে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ১২ তলা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক ‘জয়িতা টাওয়ার’ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
লেখাপড়া শিখে আজকের শিশুদের আগামীতে দেশের জন্য কাজ করতে হবে, উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ভবিষ্যতের পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আজকের ছেলে-মেয়েদের নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে হবে। রাস্তায় নেমে গাড়ি ভাঙ্গা এটা ছাত্রদের কাজ নয়, এটা কেউ করবেন না। দয়া করে যার যার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যান, লেখাপড়া করেন। আর যারা দোষী অবশ্যই তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে।
তিনি বলেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী এ ব্যাপারে অনেক সতর্ক। সঙ্গে সঙ্গেই অপরাধীদের খুঁজে বের করা হয়েছে। তা ছাড়া সবকিছুর ভিডিও ফুটেজও রয়েছে। তাই যে কোন সময় যে কোন অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে তাদের ধরে ফেলা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করেই সেটা করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ভবিষ্যতে এই গাড়ি ভাঙ্গচুর এবং আগুন দেয়ার ঘটনা যারা ঘটাবে তাদেরকে খুঁজে বের করা হবে, শাস্তি দেয়া হবে। কেননা, যে গাড়িতে আগুন দেয়া হচ্ছে সে গাড়িতে যদি কেউ মারা যায় বা আগুনে পোড়ে তার জন্য কঠোর শাস্তি দেয়া হবে। এ কথাও মাথায় রাখতে হবে।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়িতে পর পর পথচারি নিহত হবার ঘটনা তিনি যথাযথভাবে তদন্ত করে দেখারও নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, আমি এটুকুই চাই আমাদের দেশের যে উন্নয়ন আমরা করে দিচ্ছি সেটাকে ধরে রেখে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আজকের শিশুরা আগামী দিনের সোনার বাংলাদেশ গড়ার সৈনিক হবে।
সোমবার রাতে রামপুরায় গাড়ি চাপায় শিক্ষার্থী মাইনুদ্দিন ইসলাম নিহত হবার পর এর প্রতিবাদে রাজধানীতে কয়েকটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এর আগে ২৪ নভেম্বর নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান ও গাড়ি চাপায় নিহত হয়।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বক্তৃতা করেন। বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর চেয়ারপার্সন লাকী ইনাম এবং জয়িতা ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফরোজা খান ও বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে জাতির পিতার ম্যুরাল এবং ‘জয়িতা টাওয়ার’এর ওপর দু’টি ভিডিও চিত্রও পরিবেশিত হয়।
আজকের শিশুরাই হবে ‘৪১ এর উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের কর্ণধার উল্লেখ করে
তাদের লেখাপড়া করা এবং বাবা-মা-অভিভাবকদের আদেশ মান্য করার পাশাপাশি রাস্তাঘাটে চলাচল করতে ট্রাফিক আইন মেনে চলার ও পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এটা সকলের জন্য প্রযোজ্য রাস্তাঘাটে চলার সময় সতর্ক থাকতে হবে, ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে। রাস্তার যে কোন স্থান থেকে পারাপার হওয়া যাবে না। নির্দিষ্ট পারাপারের স্থান দিয়ে পার হতে হবে। কেননা, একটা চলমান গাড়ি ব্রেক ধরলে তার থামতে সময়ের প্রয়োজন হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হঠাৎ দৌড় দেবে আর দুর্ঘটনা ঘটবে, দুর্ঘটনা ঘটলেই রাস্তায় লোক নেমে গাড়ি ভাঙ্গা, গাড়িতে আগুন দেয়া, গাড়ি পোড়ানো এটা কি ধরনের কথা। একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে, তখন তাকে বাঁচানোর চেষ্টা না করে, তার সেবা না করে লাঠিসোটা নিয়ে নেমে পড়ল গাড়ি ভাঙ্গা এবং আগুন দেওয়ার কাজে।
সরকার প্রধান বলেন, আমার এখানে একটা প্রশ্ন এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমগ্র জাতির কাছেই-এই যে দুর্ঘটনার পর আগুন দেয়া শুরু হলো এ গাড়িতে কি নারী-শিশু বা ছাত্র-ছাত্রীরা নেই? ঐ আগুনে যারা পুড়বে, আহত হবে বা মারাও যেতে পারে তার দায়িত্ব কে নিবে? খুব স্বাভাবিক বিষয় হচ্ছে, যারা আগুন দেবে তাদের ওপরই দায় বর্তায়। তাহলে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি সংস্থাকে সেভাবেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা গাড়িতে দুর্ঘটনা ঘটে একজন মারা গেল বলে সেখানে আরো ২৫টি গাড়ি ভাঙ্গা এবং আগুন দেয়া এটা কোন ধরনের কথা।
শেখ হাসিনা বলেন, তাই আমি বলবো কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। আর গাড়ি চালকদেরকেও আমি বলবো তাদেরকেও সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালাতে হবে।
জনবহুল এই দেশে গাড়ি চালানোর জন্য এ সময় সঠিকভাবে প্রশিক্ষণের ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন এবং তাঁর সরকার উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রেখেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
দেশে করোনার বিস্তার বাড়লে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আবারও বন্ধ হবে বিষয়টি মাথায় রেখে শিক্ষার্থীদের সময়কে কাজে লাগানোর এবং আগামীতে নিজেদেরকে গড়ে তুলে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘মনে রাখতে হবে যে, এই করোনাভাইরাস কিন্তু এখনো শেষ হয়ে যায় নি। আমরা ভ্যাকসিন দেয়া শুরু করেছি, এখন শিক্ষার্থীদেরও দিচ্ছি। বর্তমানে আবার নতুন আরেকটা ঢেউ আসছে। কাজেই এটা মাথায় রাখতে হবে যদি করোনা বিস্তার লাভ করে তা হলে যে কোনো সময় আবার কিন্তু সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আমি আরেকটা কথা বলবো, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ দিন করোনার জন্য বন্ধ ছিল। এখন সমস্ত স্কুল-কলেজগুলো খুলে গেছে। সবাইকে এখন পড়াশোনা করতে হবে। যার যার স্কুলে ফিরে যেতে হবে।’
সম্প্রতি রাজধানীতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি চাপায় নটরডেম কলেজের ছাত্র মৃত্যুর পরদিনই উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আরেকটি ময়লার গাড়ি চাপায় প্রেস কর্মী মারা যাবার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর কী রহস্য? দক্ষিণে মারা গেল, পর দিন উত্তরে মারা গেল, এর কারণটা কী? এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে।’ ময়লার গাড়ি যারা চালায় তাদের গাড়ি চালানোর মতো দক্ষতা আছে কি-না সেটা খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা।
এই দেশকে গড়ে তুলতে এবং তৃণমূল পর্যায়ের জনগণকে উন্নয়নে সারথী করতে গিয়ে সমগ্র দেশ তাঁর চষে বেড়ানো এবং ছাত্রাবস্থার সময় গণপরিবহনে যাতায়াতের স্মৃতি রোমন্থন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের জীবনে আমি যেমন গাড়িতেও চড়েছি, বাসেও চড়েছি। শুধু বাস কেন আমি রিকশায়, ভ্যানে, নৌকায় সব বাহনে চড়েছি। সাম্পানে চড়ে, মাছের ট্রলারে চড়ে সাগর পাড়ি দিয়েছি। আমি মাইলের পর মাইল কাঁদামাটি ভেঙ্গে হেঁটেছি, ধান খেতের আল বেয়ে হেঁটেছি।
আমি বাংলাদেশটাকে চেনার এবং দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে বাংলাদেশের এমন কোন অঞ্চল নাই আমি না ঘুরে বেড়িয়েছি। তখন সব ধরনের যানবাহনেই চড়েছি। ’৮১ সালে বাংলাদেশে আসার পর যখন কোথাও যেতাম তখন এই বাস ভাড়া করেই যেতাম। আবার যখন স্কুলে পড়তাম, বাসে করেই যেতাম। এমন কোনো যান নেই যাতে চড়িনি। এভাবেই বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়িয়ে আজকে প্রধানমন্ত্রী হবার পর দেশের উন্নতি করতে সমর্থ হয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন সরকার প্রধান।
তিনি বলেন, তিনি বাংলাদেশকে না চিনতে পারলে এত দ্রুত বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি লাভ করতে পারতো না।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর সরকারের প্রথম মেয়াদে (১৯৯৬-২০০১) এবং ২০০৯ সাল থেকে এই সময় পর্যন্ত শিশু ও নারীদের উন্নয়নে যে সব উদ্যোগ নিয়েছেন তাও সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরেন।
নিজেদের অধিকার আদায়ে নারীদের স্বাবলম্বি হিসেবে গড়ে ওঠার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের নারীরা যেন সব সময় এটা মনে রাখেন যে অধিকার অধিকার করে চিৎকার করলে অধিকার কেউ দিয়ে দেবে না। অধিকার আদায় করে নিতে হবে। নিজেদের কাজ নিজেরা করতে হবে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে,এগিয়ে যাবে। আজকে আন্তর্জাতিক ভাবেও আমাদের এটা স্বীকৃত যে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলেছে টানা সপ্তমবারের মতো জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে।
শিশুদের ভবিষ্যত জীবন যেন সুন্দর হয় তার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে উল্লেখ করে সরকার প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের যে মর্যাদা পেয়েছে তা গর্ব করে বলা যায় উল্লেখ করে তিনি দেশ স্বাধীনের পর সংবিধানে নারীর অধিকার সমুন্বত করে মাত্র সাড়ে তিন বছরে জাতির পিতা বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তুপ থেকে টেনে তুলে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা দিয়ে যান বলেও জানান।