মঙ্গলবার, ২ নভেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | জাতীয় | ঢাকা | শিরোনাম » জেলহত্যা দিবসে প্রধানমন্ত্রীর বাণী
জেলহত্যা দিবসে প্রধানমন্ত্রীর বাণী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে নিম্নোক্ত
বাণী প্রদান করেছেন :
“৩রা নভেম্বর জেলহত্যা দিবস এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত দিন। ১৯৭৫
সালের এই দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ
বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে
নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর
আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে। কারাগারের অভ্যন্তরে এ ধরনের বর্বর হত্যাকাণ্ড
পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। আমি জাতীয় চার নেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি
এবং তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। জাতীয় চার নেতার আত্মত্যাগ বাঙালি জাতি চিরকাল
শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।
কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ড ছিল জাতির পিতাকে পরিবারের
বেশিরভাগ সদস্যসহ হত্যার ধারাবাহিকতা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও জাতীয় চার নেতার জঘন্য
হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধী পরাজিত শক্তি ও দেশবিরোধী চক্র বাংলার মাটি থেকে
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নাম চিরতরে মুছে ফেলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস এবং বাঙালি জাতিকে
নেতৃত্বশূন্য করার অপচেষ্টা চালিয়েছিল। ঘাতকদের উদ্দেশ্যই ছিল অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক
বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোকে ভেঙে আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে ভূলুণ্ঠিত করা।
স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ১৯৭৫-এর ১৫ই আগস্টের পর থেকেই হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি
শুরু করে। আত্মস্বীকৃত খুনীদের রক্ষা করতে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে। জিয়াউর রহমান
অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে মার্শাল ল’ জারির মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করে। সংবিধানকে
ক্ষত-বিক্ষত করে। হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনার পরিবর্তে পুরস্কৃত করে। বিদেশে
দূতাবাসে চাকুরি দেয়। স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের নাগরিকত্ব দেয়। রাষ্ট্রক্ষমতার অংশীদার
করে। ব্যবসা করার সুযোগ দেয়। বিপুল অর্থের মালিক করে দিয়ে তাদের রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে
পুনর্বাসিত করে। ‘৭৫-এর সেই ষড়যন্ত্রকারী ও হত্যাকারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদদাতারা
পরবর্তী ২১ বছর ধরে দেশের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখে। অবৈধ শাসকরা মহান মুক্তিযুদ্ধের
ইতিহাস বিকৃত করে বাংলাদেশকে পিছনের দিকে ঠেলে দেয়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর সরকার গঠন
করে জাতির পিতার হত্যার বিচার শুরু করে। কিন্তু বিএনপি-জামাত জোট সরকার ২০০১ সালে
ক্ষমতায় এসে এই হত্যার বিচার কাজ বন্ধ করে দেয়। দেশের জনগণ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর
নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে পুনরায় বিপুল ভোটে বিজয়ী করে। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে
প্রতিহিংসার রাজনীতি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে
উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। আমরা সপরিবারে জাতির পিতা হত্যার বিচারের রায় কার্যকর
করার মধ্যে দিয়ে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছি। জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়েছে।
পলাতক খুনিদের খুঁজে বের করে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। জনগণকে দেওয়া
ওয়াদা অনুযায়ী একাত্তরের মানবতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করা হচ্ছে।
সংবিধান সংশোধন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ করা হয়েছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ
দমনে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে দেশে শান্তি ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা
দেশে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর।
আমরা আজ আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি। আমরা
জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি। এই
সময়ে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। বর্তমান প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের
মহামারির মধ্যেও আমরা আমাদের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের সরকার
২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ
গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এবং উন্নয়ন ও গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তি এখনও
নানাভাবে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। এই অপশক্তির যে কোন অপতৎপরতা-ষড়যন্ত্র
ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে। আসুন, মহান মুক্তিযুদ্ধের
চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের ধারা সমুন্নত
রাখি এবং সকলে মিলে জাতির পিতার স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার
বাংলাদেশ গড়ে তুলি -জেলহত্যা দিবসে এই হোক আমাদের সুদৃঢ় অঙ্গীকার।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”