মঙ্গলবার, ৫ অক্টোবর ২০২১
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | শিরোনাম | সম্পাদকীয় » বেকার অর্ধলক্ষাধিক শ্রমিক: বন্ধ কারখানা দ্রুত খোলার উদ্যোগ নিন
বেকার অর্ধলক্ষাধিক শ্রমিক: বন্ধ কারখানা দ্রুত খোলার উদ্যোগ নিন
গত বছরের জুলাই মাসে বন্ধ করে দেওয়া হয় রাষ্ট্রায়ত্ত ২২টি পাটকল এবং পাটসংশ্লিষ্ট তিনটি কারখানা। কাজ হারান ৫২ হাজার শ্রমিক। রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি চিনিকলেও ঝুলছে তালা। বন্ধ আছে দুটি ম্যাচ ফ্যাক্টরিসহ আরো সাতটি কারখানা। সব মিলিয়ে প্রায় ৬০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। অনেকে এককালীন কিছু টাকা পেলেও নানা জটিলতায় বাকি অনেকের ভাগ্যে সেই অর্থও জুটেনি।
এর মধ্যে এসেছে করোনা মহামারির আঘাত। আয়-উপার্জন হারানো এসব মানুষ বিকল্প কাজের সন্ধানে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ালেও বেশির ভাগেরই কপালে জুটেনি তেমন কোনো সুযোগ। ফলে বন্ধ কলকারখানার বেশির ভাগ শ্রমিক পরিবার-পরিজন নিয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
কারখানাগুলো বন্ধ করার সময় বলা হয়েছিল কারখানাগুলো দ্রুততম সময়ে আধুনিকায়ন করার পর আবার কার্যক্রম শুরু করা হবে এবং সক্ষম শ্রমিকদের আবারও কাজে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। কিন্তু আধুনিকায়নের উদ্যোগও খুব একটা দৃশ্যমান নয়। এ অবস্থায় অর্ধলক্ষাধিক শ্রমিক চরম হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
বিএনপি সরকারের আমলে পাটকলসহ বহু মিলকারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। অনেক কারখানা ব্যক্তি খাতে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সেসব কলকারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু বেশির ভাগ কারখানার যন্ত্রপাতি এত পুরনো ও জরাজীর্ণ ছিল যে সেগুলো দিয়ে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছিল না। কারখানাগুলো অনবরত লোকসান দিয়ে যাচ্ছিল। ফলে লোকসানি প্রতিষ্ঠানগুলোকে চালিয়ে নিতে সরকারকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি হিসেবে দিতে হতো।
এ অবস্থায় সরকার মিলকারখানাগুলো আধুনিকায়নের সিদ্ধান্ত নেয়। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই এসব কলকারখানা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, একসঙ্গে এত কলকারখানা বন্ধ না করে ধাপে ধাপে আধুনিকায়নের কাজটি করা যেত। তাতে শ্রমিক-কর্মচারীদের ভোগান্তি যেমন কম হতো, সরকারের ওপর এককালীন ব্যয়ের চাপও কিছুটা কম হতো।
এখনো সেভাবে পরিকল্পনা করা যেতে পারে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তালিকা করে কলকারখানা আধুনিকায়নের কাজটি দ্রুত এগিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
অতীতে দেশি-বিদেশি নানা চক্রান্তের শিকার হয়েছে আমাদের রাষ্ট্রায়ত্ত কলকারখানাগুলো। মাথাভারী প্রশাসন, দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ ও সীমাহীন দুর্নীতির কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানাগুলো লোকসানি হিসেবে চিহ্নিত হতে থাকে। পরে সেগুলো ব্যক্তি খাতে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দেওয়া হয়ে থাকে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই প্রক্রিয়ায় লাগাম টানার উদ্যোগ নেন। প্রায় একই অবস্থা হয়েছিল বাংলাদেশ বিমান, বাংলাদেশ রেলওয়েসহ আরো অনেক খাতের। প্রধানমন্ত্রীর যথাযথ উদ্যোগের কারণে আজ সেসব খাতও লাভজনকভাবে পরিচালিত হচ্ছে বা লাভজনক হওয়ার পথে রয়েছে।
আমরা আশা করছি, আধুনিকায়নের পর এই কারখানাগুলোও লাভজনকভাবে পরিচালিত হবে এবং সেই আধুনিকায়নের কাজটি দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন হবে। যেসব শ্রমিক নানা কারণে এখনো তাঁদের বকেয়া পাননি দ্রুত তাঁদের বকেয়া পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে।