সম্পত্তির লোভে বাবাকে পাগল সাজিয়ে হাসপাতালে, ভিডিও ভাইরাল

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার খালিয়া ইউনিয়নের বৌলগ্রামে সম্পত্তি লিখে না দেয়ায় হাজী খলিল মিয়া (৬০) নামের এক ব্যক্তিকে দুই হাত-পা বেঁধে মারধর করে পাগল সাজিয়ে পাবনার মানসিক হাসপাতালে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে স্ত্রী ও সন্তানদের বিরুদ্ধে।

এরই মধ্যে এ ঘটনার ৫৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিষয়টি অমানবিক উল্লেখ করে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায় ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধতে রশি ও কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলছেন কয়েকজন যুবক ও এক নারী। এ সময় হাজি খলিল মিয়া সন্তানকে উদ্দেশ্য করে চিৎকার করে বলছিলেন, ‘নাজমুল বাবা আমি ২ লাখ টাকা খরচা করে এক দেশ থেকে আরেক দেশে তোরে দেখতে গেছি। তোরে বিদেশ পাঠাইছি। আমি তো পাগল না বাবা, আমারে ছাড়।’

স্থানীয়রা জানান, প্রায় ১২ বছর প্রবাসে ছিলেন খলিল মিয়া। সেখানে তিনি যা উপার্জন করতেন তার অর্থ পরিবারের কাছে পাঠাতেন। কিন্তু প্রবাস থেকে ৩ বছর আগে দেশে ফেরেন তিনি। আসার পর তার স্ত্রী হায়াতন (৫০), দুই ছেলে নাজমুল মিয়া (২৮) ও আসিফ মিয়া এবং দুই মেয়ে রাবেয়া বেগম (২৫) ও মাহামুদা আক্তারের (২২) কাছে পাঠানো অর্থের হিসাব চান। তখন থেকেই তার ওপর চলে অমানবিক নির্যাতন। এর ধারাবাহিকতায় ১০ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) খলিল মিয়ার হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বৌলগ্রামসহ এলাকার সচেতন মহল।

ভিডিওতে দেখা যায়, খলিল মিয়ার স্ত্রী ও তার সন্তানরা হাত-পা বেঁধে তাকে নির্যাতন করছেন। এ সময় চিৎকার করে তার এক আত্মীয়কে বাঁচানোর জন্য ডাকছিলেন। চিৎকার শুনে খলিল মিয়ার সেই আত্মীয় ঘটনাস্থলে যান। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আনায় বর্তমানে খলিল মিয়ার ওই আত্মীয়কেও হুমকি দেয়া হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই আত্মীয় বলেন, ‘আমি তার (খলিল মিয়া) চিৎকার শুইনা দৌড়ে ঘরের ভেতর গেছি। যাইয়া দেখি তিনি ছেলের পা ধরে বলতাছে, নাজমুল বাবা আমি ২ লাখ টাকা খরচা করে এক দেশ থেকে আরেক দেশে তোরে দেখতে গেছি। তোরে বিদেশ পাঠাইছি। আমি তো পাগল না বাবা-আমারে ছাড়।’ খলিল মিয়া যখন চিৎকার দিয়ে কান্না করেন তখন তার মুখে গামছা ঢুকিয়ে দেয়া হয়।

তিনি বলেন, ‘খলিল মিয়া ওই খানের সবার পায়ে ধরে কইছে আমারে ছেড়েদে। এই বিষয়টা আমি আমার ভাইরে জানাইছি। ভাই আমারে কইসে পুলিশ যাইতে আছে, পুলিশ বাড়ি নিয়ে যা। আমি পুলিশ আনতে গেছি আইয়া দেখি কাকা নাই।’

এলাকাবাসীর দাবি, খলিল মিয়া সম্পূর্ণরূপে একজন সুস্থ ও ভালো মানুষ। তার পরিবারের লোকজনের আশঙ্কা খলিল মিয়ার নামে থাকা সম্পত্তি তার ভাইদের লিখে দেবেন। তাই গত শুক্রবার তাকে নির্যাতনের পর হাত-পা বেঁধে পাগল সাজিয়ে ফরিদপুরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করেন স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা।

ভুক্তভোগীর ভাই তারা মিয়া বলেন, ‘আমার ভাই মালয়েশিয়া ছিল ৯ বছর। আর ৩ বছর ছিল সৌদি। বিদেশে থাকার সময় সব টাকা তার পরিবারের কাছে পাঠাইছে। পরিবারের কেউ টাকার হিসাব তাকে দিতে পারে নাই। তারপরও গত কয়েকদিন আগে আমার ভাই সম্পত্তি বেচে ৭ লাখ টাকা দিছে ওদের।

আবারও ওরা সম্পত্তি বেচে টাকা চায়। ওরা ভাবে হয়তো আমার ভাই আমারে সম্পত্তি লিখে দেবে। এ কারণে আমার ভাইরে বেঁধে বাঁশ দিয়া ঝুলাইতে ঝুলাইতে নিয়া গেছে। যখন মানুষ জিগাইছে কি হইছে- ওরা কইছে পাগল হয়ে গেছে। তাই তারে নিয়ে যাইতেছি। গ্রামে আরও মানুষ আছে। তাদের জিজ্ঞেস করে দেখেন। আমার ভাই পাগল না-কি।

তবে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছে খলিল মিয়া মেয়ে মাহমুদা আক্তার। তার দাবি, মানসিকভাবে অসুস্থ থাকায় তার বাবাকে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে। গত শুক্রবার দিনে দুপুরে ঘরে থাকা বিষ খেতে যায় তার বাবা, এ সময় তাকে দ্রুত হাসপাতালের উদ্দেশে ঘর থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। এলাকার লোকজন তাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে মিথ্যা গুজব রটাচ্ছে।

মাদারীপুরের রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সাদি জানান, হাতপা বেঁধে কেউ বৃদ্ধকে হাসপাতালে পাঠিয়েছে এমন ঘটনা জানা নেই। কেউ অসুস্থ থাকলে পারিবারিকভাবে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাটা পরিবারের ব্যাপার। তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।