বউ খুঁজতে যেতে হয় জঙ্গলে!
পৃথিবীতে বিয়ে নিয়ে যেন বৈচিত্রতার শেষ নেই! একেক দেশে বিয়ে নিয়ে পালিত হয়ে ভিন্ন রীতি। বিয়ে নিয়ে সবচেয়ে বেশি অদ্ভূত ঘটনা ঘটে আফ্রিকায়। সেখানকার কঙ্গোতে ওলেম্বা উপজাতিরা বিয়েতে কনের মূল্য ধরে ৮টি তামার ক্রশ, ৩৫টি মোরগ এবং ৪টি কুকুর।
আফিকার আরেক উপজাতি বান্ডা গোত্রের নারীরা আস্ত মুরগির বাচ্চা খেয়ে বিয়ের যোগ্যতা প্রমাণ করে। আবার ইথিওপিয়ায় কোনো মেয়েকে পছন্দ হলে জোর করে তুলে নিয়ে বিয়ে করার রীতি আছে। রুয়ান্ডাতে বর-বউ একে অন্যের গায়ে কুলি করা পানি ছিটিয়ে বিবাহ সম্পন্ন করে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই বিয়ে নিয়ে আজব সব রীতিনীতি আছে। ঠিক তেমনই ভারতের কেরালার আদিবাসীদের মধ্যে আছে বিয়ে নিয়ে আরেক মজার রীতি। তাদের বিয়ে করতে হলে বউ খুঁজতে যেতে হয় জঙ্গলে! যদিও এখন জঙ্গলের অভাবে এ রীতি ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে।
কেরালার ৩৬টি উপজাতির মধ্যে মুথুভান সম্প্রদায় একটি। সেখানকার পুরুষরা বিয়ের আগে এভাবেই জীবন বাজি রেখে বউ খুঁজে আনেন জঙ্গল থেকে। টানা এক সপ্তাহ বিয়ের রীতি পালন করা তাদের সংস্কৃতি। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, বিয়ের আগে কনেপক্ষ কনেকে গভীর জঙ্গলে লুকিয়ে রাখেন।
অন্যদিকে বউ খুঁজে আনার জন্য জঙ্গলে রওনা হন পাত্র ও তার বন্ধুরা। হবু বউকে খুঁজে এনে নিজের সাহসিকতার প্রমাণ দিতে হয় বরকে। কনে খুঁজে পেতে অনেকেরই দিনের পর দিন জঙ্গলেই কেটে যায় সময়। এমনকি নানা রকম বিপদেরও সম্মুখীন হতে হয়।
তবে ভয়ে পিছিয়ে আসার সুযোগ নেই। হবু কনেকে খুঁজে না পেলে গ্রামবাসীর কাছে সম্মান থাকবে না। সারাজীবন অবিবাহিতই থাকতে হবে। এ কারণে দিন-রাত এক করে হবু বউকে খুঁজতে থাকেন পাত্র। যে দিন হবু কনেকে খুঁজে পান; সেদিনই জঙ্গলে তাদের বিয়ে দেওয়া হয়। সঙ্গে থাকা বন্ধুবান্ধবরাই বিয়ের ব্যবস্থা করেন।
যদি হবু বর কনেকে খুঁজে বের করতে না পারেন; তাহলে তাকে ব্যর্থ হিসেবে ধরে নেনন গ্রামবাসী। সেক্ষেত্রে কনেকে অন্যত্র পাত্রস্থ করার পুরো কার্যক্রম আবার নতুন করে শুরু হয়।
আর হবু বউকে খুঁজে পেলে লাল চুড়ি এবং নতুন শাড়ি পরিয়ে বিয়ে সারেন বর। এরপর সেই জঙ্গলেই তাদের একসঙ্গে রাত কাটায় হয় রীতি অনুসারে। নবদম্পতি থাকেন কোনো এক গাছের উপর বাঁধা ঘরে। পরদিন সকালে নববধূকে নিয়ে গ্রামে ফিরে আসেন বর। আনন্দে আত্মহারা গ্রামবাসীরা তখন মেতে ওঠে উৎসবে।
এখনও কেরালায় বসবাস করে এই আদিবাসী সম্প্রদায়। তবে জঙ্গলের অভাবে বিয়ের এই রীতি অনেকটাই হারিয়ে যাচ্ছে। কারণ বসতি স্থাপনের জন্য জঙ্গল কেটে সাফ করা হচ্ছে। জঙ্গলের অভাবে এই প্রথাও দিন দিন মুছে যাচ্ছে।
সম্প্রতি কেরলে ‘মুথুভান কল্যানম’ নামে এটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। এ ছবিতে হারিয়ে যেতে বসা এই প্রথা নিয়েই গল্প নির্মাণ করা হয়েছে। তাতে এক মুথুভান সম্প্রদায়ের এক বৃদ্ধ তার নাতিদের কাছে পূর্বপুরুষদের এই প্রথা গল্প বলে শোনাচ্ছেন। চাইলে দেখতে পারেন ছবিটি।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান/দ্য হিন্দু