মঙ্গলবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | জাতীয় | ঢাকা | শিরোনাম » কম্বোডিয়ায় মানব পাচারের অভিযোগে ৩ জন গ্রেফতার
কম্বোডিয়ায় মানব পাচারের অভিযোগে ৩ জন গ্রেফতার
কম্বোডিয়ায় মানব পাচারের অভিযোগে ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
গ্রেফতারকৃতরা হলো, মানবপাচার চক্রের মূলহোতা কম্বোডিয়া প্রবাসী নাজমুল ইসলাম (৩০), নূর ইসলাম সাজ্জাদ (২৫) ও মো. সিরাজুল ইসলাম পঞ্চায়েত (৫৭)।
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, এ চক্রটি প্রায় পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশীকে সাইবার ক্রীতদাস হিসেবে কম্বোডিয়ায় প্রেরণ করেছে বলে র্যাবের কাছে স্বীকার করেছে। এই সংঘবদ্ধ চক্রটি প্রতারনা ও মানবপাচার করে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
র্যাব-৩ এর সহকারি পুলিশ সুপার (স্টাফ অফিসার) এএসপি (মিডিয়া) ফারজানা হক বাসসকে এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানান, সোমবার সন্ধ্যায় র্যাব-৩ এর সদস্যরা রাজধানীর পল্টন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ চক্রের মূলহোতা নাজমুলসহ তিন জনকে আটক করেছে।
এসময় তাদের কাছ থেকে তিনটি পাসপোর্ট, চারটি মোবাইল ফোন, একটি রেজিষ্টার, মানবপাচার সংক্রান্ত বিভিন্ন কাগজপত্র এবং নগদ ৫ হাজার ১৬ টাকা উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক অনুসন্ধান ও আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এই চক্রের মূলহোতা কম্বোডিয়া প্রবাসী নাজমুল ইসলাম। সে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে উচ্চ বেতনে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকুরী দেয়ার নাম করে ভিকটিম এবং তাদের অভিভাবকদের প্রলুব্ধ করে। সে দালালদের মাধ্যমে শিক্ষিত, কম্পিউটার বিষয়ে পারদর্শী বেকার যুবক-যুবতীদের প্রলুব্ধ করে কম্বোডিয়ায় প্রেরণের খরচ বাবদ প্রাথমিক ভাবে তারা ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে থাকে। আগ্রহী বেকার যুবক যুবতীদের প্রথমে কম্পিউটার বিষয়ে পরীক্ষা নেয়া হয়। পরে তারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে কম্বোডিয়া প্রবাসী আলীম ও শরিফুলের সহায়তায় তাদের জন্য কম্বোডিয়ান ট্যুরিস্ট ই ভিসা করা হয়। তারপর তাদেরকে বিমানযোগে কম্বোডিয়ায় পাঠানো হয়।
এএসপি ফারজানা হক জানান, কম্বোডিয়ায় যাওয়ার পর ধৃত নাজমুল তার সহযোগি কম্বোডিয়া প্রবাসী রাকিব ও রফিকের সহায়তায় প্রথমে ভিকটিমদের কম্বোডিয়া প্রবাসী আরিফের হোটেলে নিয়ে যায়। এরপর তাদের নিকট হতে পাসপোর্ট ছিনিয়ে নেওয়া হয়। হোটেলে কিছুদিন অবস্থান করার পর তাদেরকে কম্পিউটার বিষয়ে প্রশিক্ষণের জন্য কম্বোডিয়া প্রবাসী কামাল ওরফে লায়ন কামাল ও আতিকের সহায়তায় একটি বিদেশী ট্রেনিং সংস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বিদেশী প্রশিক্ষকরা ভিকটিমদের গুগল ট্রান্সলেটর এর মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছদ্মনামে একাউন্ট পরিচালনা করে অন্যদের কিভাবে প্রতারণা করা যায়, ভূয়া ক্লোন ওয়েবসাইট ব্যবহার করে ক্রেডিট কার্ড হতে টাকা আত্মসাৎ করার কৌশল, ভূয়া নাম্বার হতে ফোন দিয়ে বা চ্যাটিং করে স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার নাম করে কৌশলে ডিপোজিট হাতিয়ে নেওয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভয়েস কল ও ভিডিও কল রেকর্ডিং করে পরবর্তীতে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আত্মসাৎ করার কৌশল শেখানো হয়। মানবপাচারকারীদের ভাষায় সাইবার প্রতারণার বিষয়টি স্ক্যামার হিসেবে পরিচিত।
র্যাব বলছে, ট্রেনিং শেষে ভিকটিমদের একটি বিদেশী কোম্পানীর কাছে ২ থেকে ৩ হাজার ডলার এর বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়া হয়। তারপর ভিকটিমদের একটি সুরক্ষিত ভবনে নিয়ে গিয়ে একটি কম্পিউটার ল্যাবে কাজ করানো হয়। মানবপাচারকারীদের ভাষায় এ ল্যাবকে ক্যাসিনো বা প্ল্যাটফর্ম বলা হয়। বিদেশী এ চক্রটি এভাবে ৬ থেকে ৭ মাস একটি ক্যাসিনো বা প্ল্যাটফর্ম চালিয়ে যাওয়ার পর ঠিকানা, ফেইক একাউন্ট, ডোমেইন ও ডিভাইস পরিবর্তন করে একটি প্ল্যাটফর্মে একজন ভিকটিমকে বিরতিহীনভাবে ১৪ থেকে ১৬ ঘন্টা কম্পিউটারে কাজ করতে হয়।
র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, কেউ টার্গেট সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হলে বা কাজ করতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে শারীরিক ও মানষিকভাবে নির্যাতন করা হয়। তার খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। ক্যাসিনো গুলো কঠোর নিরাপত্তার চাদরে আবৃত্ত থাকে বিধায় ওইসব স্থান হতে কারও পক্ষে পালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। কেউ যদি কাজ থেকে অব্যাহতি চায় তাকে ক্রয় করতে যে ডলার ব্যয় করা হয়েছে, এর দ্বিগুন অর্থ ফেরত দিতে বলা হয় এবং সে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট কোন অভিযোগ করবে না বলে অঙ্গীকারনামা নেওয়া হয়।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় মানবপাচার আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদেরকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানান র্যাবের এ কর্মকর্তা।