বৃহস্পতিবার, ৯ জুন ২০২২
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | জাতীয় | ঢাকা | শিরোনাম » লাল ব্রিফকেস হাতে সংসদে অর্থমন্ত্রী
লাল ব্রিফকেস হাতে সংসদে অর্থমন্ত্রী
আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করতে লাল ব্রিফকেস হাতে সংসদে প্রবেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) দুপুর ১২টায় সংসদ ভবনে পৌঁছান তিনি। অর্থমন্ত্রীর জনসংযোগ কর্মকর্তা গাজী তৌহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপনের জন্য বেলা সোয়া ১১টায় গুলশানের বাসভবন থেকে জাতীয় সংসদের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। দুপুর ১২টায় সংসদে পৌঁছান তিনি।
বের হওয়ার সময় সাদা পাঞ্জাবির ওপর মুজিব কোর্ট পরিহিত অর্থমন্ত্রী হাত নেড়ে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের শুভেচ্ছা জানান।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামাল বিকেলে সংসদে সরকারের আগামী একবছরের হিসাব-নিকাশ সংবলিত বাজেট উপস্থাপন করবেন।
তার আগে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে নতুন বছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দেওয়া হবে। দুপুর ১২টার দিকে মন্ত্রিসভার এ বিশেষ বৈঠক জাতীয় সংসদ ভবনের কেবিনেট কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন।
মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে নতুন বাজেট অনুমোদন পাওয়ার পর রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ তাৎক্ষণিক নতুন বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের জন্য সম্মতি সূচক অনুমোদন দেবেন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদও সংসদ ভবনে রাষ্ট্রপতির দফতরে অফিস করবেন বলে জানা গেছে।
এবার দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট ঘোষণা হতে যাচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতির অস্থির পরিস্থিতি ও মূল্যস্ফীতির মতো চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পেশ করতে যাচ্ছেন। এটি দেশের ৫১তম এবং আওয়ামী লীগ সরকারের ২৩তম বাজেট।
বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এবারের বাজেটে প্রাধিকার পাবে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ শিরোনামে এবারের বাজেটি প্রস্তুত হয়েছে সরকারের অতীতের অর্জন এবং উদ্ভূত বর্তমান পরিস্থিতির সমন্বয়ে। এবারের বাজেটে সঙ্গত কারণেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কৃষি খাত, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ, কর্মসংস্থান ও শিক্ষাসহ বেশকিছু খাত।
স্বাধীন দেশে ৭৮৬ কোটি টাকা দিয়ে শুরু হয় বাজেট। আর আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের সম্ভাব্য আকার প্রায় পৌনে ৭ লাখ কোটি টাকা। যা ১৯৭২ সালের প্রথম বাজেটের চেয়ে প্রায় ৮৭০ গুণ বড়। স্বাধীনতা পরবর্তী যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ। প্রথম বাজেট ছিল অনেকটাই বিদেশি অনুদান ও ঋণ নির্ভর। ১৯৭২ সালের ৩০ জুন মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন দেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। প্রশাসনিক ব্যয় মেটানোর পাশাপাশি রাস্তাঘাট ও অবকাঠামো উন্নয়নই ছিল এ বাজটেরে প্রধান লক্ষ্য। তিন বছরের ব্যবধানে ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছাড়ায় হাজার কোটিতে।
১৯৭৬-৭৭ অর্থবছর শুরু হয় সামরিক শাসন। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলে ১৯৯০-৯১ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়ায় ১২ হাজার ৯৬০ কোটি টাকায়। সেনা শাসনের পর ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান বাজেট ঘোষণা করেন ১৫ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা। আর স্বাধীনতার ৩৩ বছর পর ২০০৩ সালে ঘোষিত ৩১তম বাজেটে প্রথমবারের মতো ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।
২০০৯-১০ অর্থবছরে ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায় জাতীয় বাজেটের আকার। আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রস্তাবিত সে বাজেটের আকার ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটের আকার দাঁড়ায়, ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকায়। ধারাবাহিকতায় ২০১৭-১৮’র বাজেট ৪ লাখ কোটির মাইলকফলকে পৌঁছায়, সে অর্থবছরে বাজেটের পরিমাণ ছিল চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকা।
২০১৯-২০ অর্থবছরে অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রথম বাজেট ঘোষণা করেন ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছর, বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের ৫০তম বাজেট। এ অর্থবছরে বাজেটের আকার দাঁড়ায় ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকায়।
অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল এমন সময়ে তার চতুর্থ বাজেট পেশ করতে যাচ্ছেন যখন বিশ্ব অর্থনীতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অস্থির পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে যাচ্ছে এবং একই সঙ্গে কোভিড-১৯ মহামারি থেকে অর্থনীতির পুনরুদ্ধার গতিও মন্থর।
বৈশ্বিক ঝুঁকি কাটিয়ে অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেখে জনজীবনে স্বস্তি ফেরানো এবারের বাজেটের প্রধানতম লক্ষ্য। ইতোমধ্যে সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা থাকবে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।