বুধবার, ১ জুন ২০২২
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক | ছবি গ্যালারী | শিরোনাম » ইরানের ভূগর্ভস্থ ড্রোন ঘাঁটি দেখে কী প্রতিক্রিয়া ইসরায়েলের
ইরানের ভূগর্ভস্থ ড্রোন ঘাঁটি দেখে কী প্রতিক্রিয়া ইসরায়েলের
ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমে গতসপ্তাহে গোপন একটি ভূগর্ভস্থ ড্রোন ঘাঁটি দেখানো হয়েছে। ইরানের সেনাবাহিনী বেশ আয়োজন করে ঘাঁটিটি বিশ্বকে দেখালেও এটি আসলে ঠিক কোথায় অবস্থিত সেটা গোপনই রাখা হয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, জাগরোস পর্বতমালার কাছে কোথাও একটি ঘাঁটিতে ১০০ ড্রোন রাখা হয়েছে; যার মধ্যে মিসাইল বহনে সক্ষম ড্রোনও রয়েছে। ইরানের আর্মি কমান্ডার মেজর জেনারেল আবদুলরাহিম মৌসাভি বলছেন, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, এ অঞ্চলের মধ্যে ইরানের হাতেই সবচেয়ে শক্তিশালী ড্রোন রয়েছে।
যে প্রতিবেদককে ওই ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তিনি জানিয়েছেন, ইরানের পশ্চিমাঞ্চলের কেরমানশাহ থেকে ৪৫ মিনিট হেলিকপ্টারে উড়ে তিনি ওই ঘাঁটিতে পৌঁছান। তবে পুরোটা সময় তার চোখ বাঁধা ছিল। ভূগর্ভস্থ ঘাঁটিটির ভেতরে পৌঁছানোর পর তার চোখ খুলে দেওয়া হয়।
তবে ইরান হঠাৎ করে কেন এই ঘাঁটি দেখাতে গেল তা নিয়ে একটি বিশ্লেষণী প্রতিবেদন করেছে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম দ্য জেরুজালেম পোস্ট। প্রতিবেদনের শুরুতেই ওই ঘাঁটি কতটা গোপন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে এভাবে- এই ঘাঁটির বিষয়টা যদি আসলেও এত গোপন কিছু হতো, তাহলে ইরান তা দেখাতো না।
এতে আরও বলা হয়েছে, তবে এই ঘাঁটির প্রকৃত স্থান গোপন রাখা হয়েছে। ইরানের ক্রমবর্ধমান ড্রোন প্রোগ্রামের ইঙ্গিত এ ঘাঁটি থেকে স্পষ্ট পাওয়া যায়। ড্রোনগুলো এখন আগের চেয়ে আরও আধুনিক অস্ত্রবহনে সক্ষম।
বলা হচ্ছে, কেরমানশাহ থেকে যাত্রা শুরু হলেও ওই ঘাঁটি আসলে হয়তো সেখানে অবস্থিত নয়, বরং অন্য কোনো পার্বত্য অঞ্চলে এর অবস্থান।
ইরানের প্রাচিনে একটি সামরিক অবস্থানে ড্রোন ব্যবহার করে হামলার খবর আসার পরই এই ভূগর্ভস্থ ড্রোন ঘাঁটির খবরটি সামনে আসে। এছাড়া কয়েকদিন আগে ইরানের প্রভাবশালী ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী আইআরজিসির একজন কর্মকর্তাও নিহত হয়েছেন।
জেরুজালেম পোস্ট লিখেছে, ওই কর্মকর্তা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন। তেহরান এখন দেখাতে চায় যে, অনেকক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতি হলেও তারা ড্রোন উন্নয়ন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যা এই অঞ্চলের জন্য হুমকি হতে পারে।
ইরানের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে ড্রোন ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। ইয়েমেনে হুথিদের হাতে ও গাজায় হামাসের হাতে তারা এ অস্ত্র তুলে দিয়েছে। একইসঙ্গে সিরিয়া, ইরাকভিত্তিক মিলিশিয়া ও হিজবুল্লাহর হাতেও এ প্রযুক্তির অস্ত্র তুলে দিয়েছে ইরান। এর ফলে এসব গোষ্ঠী এখন ড্রোনের ভান্ডার তৈরি করে ফেলেছে। হামলার পাশাপাশি এসব ড্রোন দিয়ে নজরদারিও চালানো হচ্ছে। ফার্স নিউজ ও তাসনিম নিউজের মতো মিডিয়াতে সম্প্রতি যে ভিডিও ও ছবি প্রকাশ করা হয়েছে সেগুলোতে প্রচুর ড্রোন দেখা যাচ্ছে। এর বেশিরভাগেরই কলাকৌশল সম্ভবত অনেকেরই জানা।
অর্থাৎ জেরুজালেম পোস্ট বলতে চাইছে যে, ইরানের হাতে থাকা ড্রোনগুলো সম্ভবত নতুন কোনো প্রযুক্তির নয়।
ক্যামেরায় দেখানোর জন্য ড্রোনগুলোকে আলাদাভাবে সাজানোও হয়। ইংরেজিতে নামও লেখা হয়- যেমন ফোটরস ড্রোন। এসব ড্রোনের কিছু ছবি নিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছেন ড্রোন ও মিসাইল বিশেষজ্ঞ তাল ইনবার। তিনি একটি ছবি পেয়েছেন যেখানে ইরানি একটা ড্রোন দেখা যাচ্ছে যার সাথে রাডার পড রয়েছে। আর আরেকটি এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল হামলায় সক্ষম। আরকটি ছবি দেখে তার ধারণা হয়েছে সেটা ফোটরস ড্রোন, আর সেটার সাথে ক্রুজ মিসাইল যুক্ত রয়েছে। এছাড়াও আরও কিছু ছবিতে হামলায় সক্ষম ড্রোন দেখা যাচ্ছে।
এটা পরিষ্কার যে ইরান একটা বার্তা দিতে চাচ্ছে যে তাদের তৈরি ড্রোন এখন মিসাইল বহনে এবং নজরদারিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম বহনে সক্ষম।
কিন্তু এখানে প্রশ্ন আছে যে, তাদের প্রযুক্তিগুলো আসলেও কাজ করে কি না, এগুলো সক্রিয় কি না। না কি স্রেফ লোক দেখানোর জন্য ইরান এগুলো তৈরি করেছে।
অস্ত্রব্যবহার যোগ্য ড্রোন তৈরি করা ও সেগুলো ঠিকঠাক কাজ করাটা কঠিন কাজ। দূর থেকে ড্রোনগুলো নিয়ন্ত্রণ করা নিয়েও জটিলতা আছে।
জেরুজালেম পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদিও ২০১৯ সালে ইরান সৌদিতে ড্রোন হামলা চালিয়ে তাদের সক্ষমতা দেখিয়েছে। এছাড়া ইসরায়েলকেও তারা হুমকি দিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, তুরস্ক, চীন ছাড়াও অন্যান্য যেসব দেশ মনুষ্যবিহীন এ ধরনের যান ব্যবহার করে আসছে, তাদের সাথে ইরানের এ প্রযুক্তির কতটা মিল রয়েছে তা স্পষ্ট নয়।