শিরোনাম:
ঢাকা, শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১
N2N Online TV
সোমবার, ২৩ মে ২০২২
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক | ছবি গ্যালারী | শিরোনাম » অস্ত্রের বিনিময়ে খাদ্য, সর্বনাশা এক পশ্চিমা ফিকির
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক | ছবি গ্যালারী | শিরোনাম » অস্ত্রের বিনিময়ে খাদ্য, সর্বনাশা এক পশ্চিমা ফিকির
২৭৭ বার পঠিত
সোমবার, ২৩ মে ২০২২
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

অস্ত্রের বিনিময়ে খাদ্য, সর্বনাশা এক পশ্চিমা ফিকির

---

বিশ্ববাজারে গম ও ভোজ্যতেলের গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহকারী দেশ ইউক্রেন। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের কারণে দেশটি এই দুই পণ্যের কোনোটিই রফতানি করতে পারছে না। কারণ, ইউক্রেনের কৃষ্ণসাগরীয় বন্দরগুলো অবরুদ্ধ করে রেখেছে রাশিয়া। বন্দরগুলো দিয়েই বেশির ভাগ পণ্য রফতানি করত বিশ্বের বৃহৎ শস্য উৎপাদক ইউক্রেন।

রফতানি করতে না পারায় ইউক্রেনে গুদামগুলো শস্যে পরিপূর্ণ রয়েছে। এর মধ্যে নতুন ফসল তোলার সময় এসেছে। আগের ফসল যেখানে গুদামে পড়ে আছে, সেখানে নতুন ফসল তোলা নিয়ে দেশটির কৃষকরা উদ্বিগ্ন।

ইউক্রেনে যুদ্ধ ও জাতিসংঘের আশঙ্কা

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ইউক্রেনে প্রায় দুই কোটি টন শস্য আটকে আছে, অথচ রফতানি করতে পারছে না।

জাতিসংঘ আশঙ্কা করছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট তীব্র হতে পারে। এর মধ্যে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে। চলমান সংঘাতের ফলে অপুষ্টি, ক্ষুধা ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় লাখ লাখ মানুষ ভুগতে পারে।

গত সপ্তাহে খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক ‘গ্লোবাল ফুড সিকিউরিটি কল টু অ্যাকশনে’র বৈঠকে জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, টানা দু-বছর করোনা মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তন ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে ৭ কোটি ৬০ লাখ মানুষ খাদ্য সংকটে রয়েছে, যা আগের তুলনায় দ্বিগুণ।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সাড়ে ১২ কোটি ক্ষুধার্ত মানুষের খাদ্যের জোগান দেয়। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ খাদ্যশস্য তারা ইউক্রেন থেকে আমদানি করে।

জাতিসংঘের আবেদন ও রাশিয়ার শর্ত

ইউক্রেনের বন্দর অবরোধ প্রত্যাহার করতে রাশিয়ার কাছে আবেদন জানিয়েছিল জাতিসংঘ। কিন্তু রাশিয়া উল্টো তাদের শর্ত জুড়ে দিয়েছে। মস্কো জানিয়েছে, ইউক্রেনের রফতানির পথ উন্মুক্ত দেখতে চাইলে রাশিয়ার ওপর যেসব নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে সেগুলোও পর্যালোচনা করতে হবে। রাশিয়ার অভিযোগ, বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির জন্য পশ্চিমারাই দায়ী। যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে মুক্ত বাণিজ্যের পথ বাধাগ্রস্ত করে। ফলে বিশ্ব চরম খাদ্য সংকট ও মুদ্রাস্ফীতিতে পড়েছে।

বর্তমান পরিস্থিতির জন্য পশ্চিমারা কতটা দায়ী

অভিযোগ রয়েছে, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী ও তীব্র করছে পশ্চিমা বিশ্ব। কূটনৈতিক আলোচনা এড়িয়ে তারা ইউক্রেনে যুদ্ধ চলতে সব ধরনের অস্ত্র সামগ্রী সরবরাহ করছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘ হলে পৃথিবীর কেউ এর ভয়াবহতা থেকে রেহাই পাবে না। রাশিয়ার দাবি, পশ্চিমারা এই যুদ্ধে ইউক্রেনের সঙ্গে শামিল হয়েছে। ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়ে ও মস্কোর ওপর নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তারা এ যুদ্ধ চালিয়ে নিচ্ছে। চীনা সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের মতে, রাশিয়ার পরাজয় না হওয়া পর্যন্ত পশ্চিমারা এই যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী করতে পারে। এখনো ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানো অব্যাহত রেখেছে তারা। গত ৮ মে কিয়েভ সফরে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো দেশটিতে নতুন অস্ত্র ও সরঞ্জাম পাঠানোর ঘোষণা দেন। সিএনএনের দাবি, যুদ্ধ চলতে থাকলে শুধু আমেরিকা-আফ্রিকা নয়, সব দেশেই তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা দেখা দেবে।

পশ্চিমাদের অস্ত্র সরবরাহ নীতি ও কূটকৌশল

বৈশ্বিক খাদ্য সংকট মোকাবিলায় ইউক্রেনে আটকে থাকা শস্যের দিকে নজর রয়েছে পশ্চিমাদের। ইউক্রেনের লাখ লাখ টন গম মুক্ত করতে ও সেগুলো ইউরোপীয় বন্দরগুলোতে পাঠাতে পশ্চিমা নেতাদের আহ্বান জানিয়েছেন কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানিয়া জোলি। কিন্তু ইউক্রেন শুধু ইউরোপেই শস্য রফতানি করে না। এটি সারা বিশ্বের জন্যই রফতানিকারক দেশ। চীনা একজন বিশেষজ্ঞ গ্লোবাল টাইমসকে বলেছেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, পশ্চিমারা বিশ্বের স্বার্থরক্ষার চেয়ে নিজেদের স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। ইউক্রেনের গম মুক্ত করে তারা (পশ্চিমা) নিজেদের খাদ্য সংকট মোকাবিলার চেষ্টা করছে। ইউক্রেনের এই দুরবস্থায় তারা ইউক্রেনে স্বল্পমূল্যে খাদ্য ক্রয় করতে চায়। এটি একধরনের ‘লুট’ বলা চলে। এতে পশ্চিমাদের স্বার্থপর আচরণ স্পষ্ট হয়েছে।

ইউক্রেনে অস্ত্রের জোগান দিয়ে ও এর খাদ্যশস্য পেতে মরিয়া পশ্চিমাদের অবস্থান এটা প্রমাণ করে যে, তারা শুধু লাভের গুড় খেতে চায়। কোনো ব্যর্থতা বা ক্ষতির বিন্দুমাত্র দায় নিতে চায় না। এমনকি সমস্যা সমাধানে তাদের গভীর মনোযোগও দেখা যায় না। গ্লোবাল টাইমসের মতে, ইউক্রেনে পশ্চিমাদের সমর্থন, সহযোগিতা ও সহানুভূতিশীল দৃশ্যমান হলেও মূলত তারা পূর্ব ইউরোপীয় দেশটিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

বৈশ্বিক খাদ্য সংকটের অবসান ঘটবে কীভাবে

বিশ্বজুড়ে খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করতে হলে রাশিয়াকে অবশ্যই ইউক্রেনের বন্দরে আটকে থাকা পণ্যের রফতানির অনুমতি দিতে হবে। এমনকী রাশিয়ার ওপরও বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউক্রেনে যত তাড়াতাড়ি শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায়, তত দ্রুত এ সংকট দূর হবে। ইউক্রেন ও রাশিয়ার কৃষি ও বাণিজ্যে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে হবে। সেক্ষেত্রে পশ্চিমাদের উদার নীতি গ্রহণ করতে হবে এবং জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে।



আর্কাইভ