রবিবার, ২২ মে ২০২২
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | ঢাকা | শিরোনাম » চাল, বাদাম ও ভুট্টায় ক্যানসারের উপাদান
চাল, বাদাম ও ভুট্টায় ক্যানসারের উপাদান
গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের উত্তরাঞ্চলে চাল, বাদাম ও ভুট্টার ৬০টি নমুনার মধ্যে ৯টিতে লিভার ক্যানসারের জন্য দায়ী বিষাক্ত অ্যাফ্লাটক্সিনের উপস্থিতি রয়েছে। আর ময়মনসিংহে সবজি ও দুগ্ধজাত খাবারে মিলেছে লিস্টেরিয়া মনোসাইটোজেনিস নামক রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া।
এ ছাড়া কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের লইট্টা শুঁটকিতে ক্ষতিকর ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি মিলেছে। আর কিছু অঞ্চলে গরুর দুধে সামান্য পরিমাণে অ্যামোক্সিসিলিন অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি ধরা পড়েছে।
গতকাল শনিবার (২১ মে) রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে এক কর্মশালায় গবেষণার এসব ফলাফল তুলে ধরা হয়। নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থায়নে অরেঞ্জ নলেজ প্রোগ্রামের অধীন পাঁচটি পৃথক গবেষণায় এসব ফলাফল উঠে এসেছে।
খাদ্যশস্যে যকৃৎ ক্যানসারের জন্য দায়ী অ্যাফ্লাটক্সিন নামক উপাদানের উপস্থিতি নিয়ে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক তাজুল ইসলাম চৌধুরী। গবেষণায় আমদানি করা ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত চাল, বাদাম, আটা, মসুর ডাল, মুগ ডাল, ভুট্টা ও সরিষায় বিষাক্ত অ্যাফ্লাটক্সিনের পরীক্ষা করা হয়। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ঈশ্বরদী, নাটোর, বগুড়া, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়ের গুদাম ও পাইকারি বাজার থেকে ৬০টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
সংগৃহীত নমুনার ৯টিতে অ্যাফ্লাটক্সিন পাওয়া গেছে। এসবের চারটিতে ছিল নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি উপস্থিতি। মূলত বাদাম ও ভুট্টাতেই এর উপস্থিতি বেশি। আর চালের একটি নমুনায় তা পাওয়া গেছে।
মনোসাইটোজেনিস নামক ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি নিয়ে আরেকটি গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক মো. তৌহিদুল ইসলাম। গবেষণায় ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা, ত্রিশাল, ফুলবাড়িয়া, সদর ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। গবেষণায় শসা, টমেটো, গাজরের ৮৫টি ও দুগ্ধজাত পণ্য আইসক্রিম, দই ও পনিরের ৮৩টি নমুনা ব্যবহৃত হয়।
গবেষণায় নমুনার ১৯ দশমিক ২ শতাংশ শসা, ১০ শতাংশ টমেটো ও ৩ দশমিক ৪ শতাংশ গাজরে এ ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আর দুগ্ধজাত পণ্যের মধ্যে ৭ দশমিক ১ শতাংশ আইসক্রিমে ও ৪ শতাংশ দইয়ে লিস্টেরিয়া মনোসাইটোজেনিস ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
অন্য একটি গবেষণায় ক্ষতিকর ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া খুঁজতে মূলত চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের কাঁচা লইট্টা, আধা ও পুরোপুরি শুকনো লইট্টা শুঁটকি পরীক্ষা করা হয়। সেখানে শতভাগ লইট্টার নমুনাতেই এই ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। গবেষণা অনুসারে ৪৫টি নমুনার ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগ সৃষ্টিকারী এই ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়। আর ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ নমুনায় অ্যান্টিবায়োটিক সহনশীল ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া রয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক গবেষক মো. শাহেদ রেজা বলেন, শুঁটকি ধোয়ার পানিতে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি থাকলে শুঁটকি ভালো করে না শুকানো হলে ও বেশি তাপমাত্রায় রান্না না করলে তা পেটে গেলে শরীরে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হতে পারে। এ ছাড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের স্থান, গুদাম, শুঁটকির বস্তায়ও এ ক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়াটি পাওয়া যায়। কিছু অঞ্চলে ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় লইট্টা সেদ্ধ করা হয় না, তাই সেখানে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেশি।
এ ছাড়া সিপ্রোফ্লোক্সাসিন ও অ্যামোক্সিসিলিন অ্যান্টিবায়োটিক পরীক্ষার জন্য মানিকগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের স্থানীয় বাজারের খুচরা বিক্রেতা এবং পাবনা ও সিরাজগঞ্জের দুধ সংগ্রহ কেন্দ্র ও খামার থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এ গবেষণার মূল গবেষক বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মনজুর মোরশেদ আহমেদ।
অন্যদিকে, সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে ভারী ধাতু আর্সেনিক, সিসা, ক্রোমিয়াম ও ক্যাডমিয়ামের পরীক্ষা করা হয়। পশুর নদের সাতটি বিভিন্ন স্থান এবং এ নদীসংলগ্ন সাতটি বিভিন্ন খাল ও ছোট নদী থেকে কাদামাটি ও পানি সংগ্রহ করা হয়। পাশাপাশি ১০ প্রজাতির মাছেও এসব উপাদান পরীক্ষা করা হয়।
গবেষণা অনুসারে, মোংলা বন্দর, বন্দরের কাছাকাছি সিমেন্ট কারখানার পাশে নদীতীর, মোংলা ঘাটের মোহনা ও বাণীশান্তা বাজারে নির্ধারিত মাত্রার বেশি ভারী ধাতু পাওয়া গেছে। তবে মাছের মধ্যে যে পরিমাণ উপস্থিতি মিলেছে, তা আশঙ্কাজনক নয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুল কাইউম সরকার। আরও ছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের ডিন অলোক কুমার পাল। প্যানেল আলোচক হিসেবে ছিলেন অরেঞ্জ নলেজ প্রোগ্রাম প্রকল্পের উপদেষ্টা ক্যামিয়েল আলবার্টস ও খাদ্যনিরাপত্তা পরামর্শক রোনাল্ড ভ্যান দে হিউভেল প্রমুখ।