চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের কেজি ৩ টাকা
আমের রাজধানীখ্যাত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩-৫ টাকা কেজি দরে আম বিক্রি হচ্ছে। জেলার সদর, শিবগঞ্জ ও গোমস্তাপুরে সোমবার (১৬ মে) মধ্যরাতে হওয়া ঝড়-বৃষ্টিতে অনেক বাগানের আম ঝরে পড়েছে। এসব আম কম দামে কিনে পাঠানো হচ্ছে রাজধানী ঢাকায়।
মঙ্গলবার দেখা গেছে, বিভিন্ন গ্রাম থেকে কম দামে আম কিনে সেগুলো বস্তাভর্তি করে আড়তে নেওয়া হচ্ছে। তারপর পাঠানো হচ্ছে রাজধানী ঢাকায়।
ঝড়ে পড়া আমের সিংহভাগই অপরিপক্ব। ছোট ও মাঝারি সাইজের এসব অপরিপক্ব আম বিক্রি হচ্ছে ১১০-২০০ টাকা মণ দরে। গ্রামের নারী-পুরুষ ও কিশোর-কিশোরীর কুড়ানো এসব আম পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনে আড়তে নিচ্ছেন। পরে আড়ত থেকে ট্রাকযোগে এসব আম যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।
সদর উপজেলার মহিপুর বাজার, শিবগঞ্জের চককীর্তি, নাচোলের মল্লিকপুর, গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের মকরমপুর ব্রিজ, কাঞ্চনতলা, বোয়ালিয়া বাজার, ঘাটনগর ও মিনিবাজার মোড়ে গ্রাম থেকে আম কিনে জড়ো করা হয়েছে। পরে এগুলো বস্তা ভর্তি করে রাতে ট্রাকযোগে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে।
আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা জানায়, সোমবার মধ্যরাতে জেলায় কালবৈশাখী বৃষ্টি হয়। এ সময় গাছ থেকে অনেক অপরিপক্ব আম ঝরে পড়ে। এসব আম গ্রামের মানুষজন কুড়িয়ে ৩-৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে। আমের জাতভেদে একেক রকম দামে বিক্রি হয়েছে এসব আম। ফসলী আম ৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও অন্যান্য গুটি জাতের আম বিক্রি হয়েছে ৩-৪ টাকা কেজি দরে।
নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামের আমচাষি আল আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রায় ৭ বিঘা জমিতে মাঝারি সাইজের প্রায় ৫৭টি আমগাছ রয়েছে। এসব গাছে ঝুলছে আশ্বিনা, ফজলি, ক্ষিরসাপাত, লক্ষণভোগ জাতের আম। হঠাৎ সোমবার রাতে ব্যাপক বৃষ্টির সঙ্গে ঝড় হয়। এতে অনেক আম পড়ে নষ্ট হয়। এসব আম গ্রামের অনেকেই কুড়িয়ে ৩-৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছে।
সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের মহিপুর গ্রামের সাইদুল ইসলাম জানান, গতকাল রাতে ঝড়ে চার বস্তা আম কুড়িয়েছিলাম। তিন টাকা কেজি করে এসব আম বিক্রি করেছি। বাড়িতে কিছু ফজলি আম রেখে সবগুলো বিক্রি করেছি। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত ৬০০ টাকার আম বিক্রি করেছি।
গোমস্তাপুর উপজেলার বেলাল বাজার এলাকার জুলকার নাইন বলেন, ঝড়ে ১০ মণ আম কুড়িয়েছিলাম। তবে আম কেনার মতো মানুষ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। পরে জানতে পারলাম, পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসেছে আম কিনবে। তাই তাদের কাছে ৩-৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলাম।
পাইকারী ব্যবসায়ী তহরুল ইসলাম বলেন, ঝড়ে পড়া আম তেমন কাজে লাগে না। তাছাড়া আমগুলো পরিপক্ব নয়। তাই আচার করেন অনেকেই। তবে অনেক বেশি আম হওয়ার কারণে বাধ্য হয়েই বিক্রি করতে হয়। আমরাও কম দামে এসব আম পাই। পরে এগুলো রাজধানী ঢাকায় ট্রাকে করে পাঠিয়ে দেই। ঢাকায় এসব আমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। মঙ্গলবার দুই ট্রাক আম কিনেছি।
তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ও রাতে আম ভর্তি দুটি ট্রাক ঢাকায় রওনা দিয়েছে। এখানে ১১০-২০০ টাকা মণ দরে কিনলেও ঢাকায় ৪০০-৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হবে। তবে আমের জাত হিসেবে দাম ভিন্ন আছে। যেমন আশ্বিনা, লক্ষণভোগ গুটি আমের কেজি ৩-৪ টাকা আর ফজলি আম ৫ টাকা কেজি দরে কেনা হয়েছে।
আরেক পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুল মাজেদ বলেন, ঝড়ে পড়া আমে দাগ পড়ে নষ্ট হয়ে যায়। তাই বেশির ভাগ সময় আম পরিপক্ব থাকলে তা স্থানীয় জুস ফ্যাক্টরিতে চলে যায়। তবে এখন আম অপরিপক্ব হওয়ায় জুসের পাল্প করা যাবে না। তাই কম দামে কিনে ট্রাকে করে ঢাকায় পাঠিয়ে দেই।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সোমবার রাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে। তবে গোমস্তাপুরে ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলক বেশি। ঝড়ে আম ও লিচুর অনেক ক্ষতি হয়েছে। অনেক অপরিপক্ব আম গাছ থেকে ঝরে পড়েছে। এসব আম তেমন কোনো কাজে না আসায় কম দামে বিক্রি হয়।
প্রসঙ্গত, এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হয়েছে। প্রায় ৫৫-৬০ লাখ গাছে চলতি মৌসুমে কৃষি বিভাগ আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৩ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর জেলায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আড়াই লাখ মেট্রিক টন এবং তার আগের বছর ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়েছিল।