শুক্রবার, ২২ এপ্রিল ২০২২
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | ময়মনসিংহ | শিরোনাম » সরিষাবাড়ীতে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের মারামারি,আহত- ১
সরিষাবাড়ীতে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের মারামারি,আহত- ১
নিজস্ব প্রতিনিধি, জামালপুর : জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে দুই শিক্ষকের মারামারিতে একজন আহত হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ২নং পোগলদিঘা ইউনিয়নের মালিপাড়া এলাকায় ১৮নং মালিপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার(১৯ এপ্রিল) পনে ১টার দিকে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে এঘটনা ঘটে।
বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকেরা জানান,বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্লাশ শেষে তৃতীয় ক্লাশে যাওয়ার প্রাক্কালে সহকারী শিক্ষক রোবায়েত হোসেন বিপুল ও সহকারী শিক্ষক শফিকুল ইসলাম এর মধ্যে রেজিস্ট্রার খাতার সাদা পাতায় ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য আছমা ও সালমা বেগমের স্বাক্ষর নেওয়াকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষ বাঁধে।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার(১৪ এপ্রিল) সন্ধ্যার পর অভিভাবক সদস্য আছমা ও সালমা’র বাড়ীতে গিয়ে সহকারী শিক্ষক শফিকুল ইসলাম (১৬ এপ্রিল) শনিবার “মা সমাবেশ” হওয়ার কথা বলে একটি রেজিস্ট্রার খাতার সাদা পাতায় স্বাক্ষর নিয়ে আসে।
পরবর্তীতে শনিবার সকালে মা সমাবেশের উদ্দেশ্য সালমা এবং আছমা বেগম বিদ্যালয়ে গেলে মা সমাবেশের কোন কার্যক্রমই দেখতে পান না। তখন বিদ্যালয়ের দপ্তরী সেলিম রেজাকে মা সমাবেশের রেজিস্ট্রার খাতাটি দেখাতে বললে সেটি আর অফিস কক্ষে কোথাও খোঁজে পাওয়া যায়না।
এমতাবস্থায় বিষয়টি সকল শিক্ষকই জেনে যায় এবং পরে সহকারী শিক্ষক রোবায়েত হোসেন বিপুল স্বাক্ষরের বিষয়টি শিক্ষক শফিকুল ইসলাম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি অপ্রাসঙ্গিক কিছু কথা বলেন এবং এরি পরিপ্রেক্ষিতে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি একপর্যায়ে সংঘর্ষ বাঁধে। পরে স্কুলের আশপাশের লোকজন এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে বলে জানান।
স্থানীয়রা বলেন, শিক্ষকেরা বিদ্যালয়ের আশপাশের বাসিন্দা হওয়ার কারণে তাঁরা বিদ্যালয়েও সময়মত আসেন না এবং পাঠদানেও ফাঁকি দেন বলে জানান। লাভলু নামে একজন বলেন, আমার বাড়ী স্কুলের পাশেই। আমি প্রায়ই পুরুষ শিক্ষকদের অনুপস্থিত দেখি। আর শিক্ষকেরাই যদি শিক্ষাঙ্গণে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে তাহলে ছাত্ররা কি শিখবে ?
এদিকে অত্র ওয়ার্ডের কোহিনূর মেম্বার জানান, ঘটনার দিন তিনি স্কুলের নিকটবর্তী একটি স্থানে সড়ক সংস্কারের কাজ করাচ্ছিলেন। এমন সময় হঠাৎ চিল্লাচিল্লি শুনতে পেয়ে স্কুলের দিকে এগিয়ে যান এবং দেখতে পান সহকারী শিক্ষক শফিকুল এর পক্ষ নিয়ে ম্যানেজিং কমিটির বহিস্কৃত সভাপতি এস এম মাহবুবুল আলম মজনু ক্ষিপ্ত হয়ে বারবার মারতে যাচ্ছেন আরেক সহকারী শিক্ষক রোবায়েত হোসেন বিপুলকে।
এমন পরিস্থিতি দেখে সবাইকে তিনি শান্ত থাকতে বলেন এবং বিষয়টি পরবর্তীতে শোনা যাবে বলে দুই পক্ষকেই সরিয়ে দেন।
তবে এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে কোহিনুর মেম্বার বলেন, শিক্ষকদের এমন অমানবিক আচরণ অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আমি ভালো বলে মনে করছিনা। কেননা- যারা সভ্যতা শিক্ষা দেয়ার কারিগর, তারাই যদি অসভ্যতা করে, তাহলে আগামী প্রজন্ম কি শিখবে এখানে ?
বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তিনি আরো বলেন, অত্র বিদ্যালয় এর ম্যানেজিং কমিটির বহিস্কৃত সভাপতি এস এম মাহবুবুল আলম মজনু সরকারি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা বহির্ভূত একজন সভাপতি হওয়ায় তাকে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটি ইতিমধ্যে বহিষ্কার করেছেন এবং স্কুলের প্রধান শিক্ষক জ্যোৎস্না আক্তার তার সুবিধার্থে এর জন্য তথ্য গোপন করে তাকে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বানানোর অনুমতি দিয়েছিলেন বলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাহিদা ইয়াসমীন তাকে শোকজ করেন।
সর্বোপরি বিদ্যালয়টিতে নানাবিধ সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার কারণে সঠিক ভাবে পাঠদান হচ্ছে না এবং এ কারণেই স্কুলের শিক্ষার্থী সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে বলে জানান এলাকাবাসী।
মারামারি বিষয়ে সহকারী শিক্ষক শফিকুল ইসলামকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, শিক্ষক রোবায়েত হোসেন বিপুল কয়েক বছর যাবৎ তার কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা ধার নিয়েছে কিন্তু পরিশোধ করছে না। আর এ টাকা চাইতে গেলে তার সাথে সংঘর্ষ বাধে।
কিন্তু অপরদিকে সরকারি শিক্ষক রোবায়েত হোসেন বিপুল জানান, টাকা ধার নেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। সে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি’র সিন্ডিকেটের লোক। সে ইতিপূর্বেও স্কুলের নানা অনিয়মের সাথে জড়িত ছিল এবং বর্তমানেও আছে। সে অভিভাবক সদস্যদের কাছ থেকে মা সমাবেশের কথা বলে রেজিস্টার খাতায় সাদা পাতায় কেন স্বাক্ষর নিয়ে এসেছে। এ বিষয়টি জানতে চাইলেই সে আমাকে মারতে আসে এবং আমাকে আহত করে। আমি এ বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসার কে অবগত করেছি। তারা এই বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার নাহিদা ইয়াসমিনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, বিষয়টি আমরা জেনেছি এবং জেলা শিক্ষা অফিসারকে অবগত করেছি। তিনি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবেন।
তবে উল্লেখ্য যে, স্কুলের প্রধান শিক্ষক জোৎস্না আক্তারকে শোকজ করার কারণে তাকে বিদ্যালয়ে পাওয়া যায়নি এবং তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। পাশাপাশি বহিস্কৃত সভাপতি মাহবুবুল আলম মজনু’র মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তার ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়।