রবিবার, ১০ এপ্রিল ২০২২
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক | ছবি গ্যালারী | শিরোনাম » জনসমর্থনেই টিকে থাকবেন ইমরান খান
জনসমর্থনেই টিকে থাকবেন ইমরান খান
নানা নাটকীয়তার পর অবশেষে অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এর মাধ্যমে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হবেন বলেই মনে করা হচ্ছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এ অনাস্থা ভোটের মধ্য দিয়েই ইমরান খানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেতে পারে। তবে পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের মতামতকে প্রাধান্য দিলে বলতে হয়, প্রধানমন্ত্রিত্ব হারালেও পাকিস্তানের রাজনীতির মাঠ থেকে এখনই বিদায় নিচ্ছেন না ইমরান।
৩২ বছর বয়সী মুজাহিদ আলী। কাজ করেন ইসলামাবাদের তুলনামূলক মধ্যবিত্ত একটি এলাকার এক সেলুনে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে জিতেছিলেন ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ইমরান খান। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দেশটির রাজনীতিতে একটি নতুন ও তৃতীয় শক্তি হিসেবে পরিবর্তন আনতে পারবে, এই আশা থেকে অন্য অনেকের মতো ইমরানকে ভোট দিয়েছিলেন মুজাহিদও। কারণ, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের আধিপত্যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
কিন্তু পাকিস্তানে জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের জন্য এখন ইমরান খানের দল পিটিআইকেই দায়ী করছেন মুজাহিদ আলী। সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘আপনি সারাদিন কাজ করে ৫০০ রুপি উপার্জন করতে পারেন, কিন্তু এখন এক কেজি ঘি কিনতেও ৫০০ রুপি লাগে। আগে যা ছিল ১৮০ রুপি। তবে প্রধানমন্ত্রীর (ইমরান খান) ক্ষমতাচ্যুত হওয়া দুঃখজনক।’
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরান খানের স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন শাহবাজ শরীফ। তিন দফায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন শাহবাজের ভাই নওয়াজ শরীফ, বর্তমানে যিনি দুর্নীতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত। অস্বীকার করে আসলেও নানা অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন শেহবাজ শরীফও। মুজাহিদ আলীর মতে, শরীফ পরিবার দুর্নীতিগ্রস্ত হলেও তারা দরিদ্র মানুষকে সাহায্য করে।
মুজাহিদের সেলুনে চুল কাটার জন্য অপেক্ষা করছিলেন আলী মালিক নামে ২৭ বছর বয়সী এক যুবক। তিনিও ২০১৮ সালে ইমরান খানকে ভোট দিয়েছিলেন, সমর্থন করেন এখনো। পাকিস্তানের চলমান অর্থনৈতিক দুর্দশার কথা উল্লেখ করে আলী বললেন, ‘এই কঠিন সময় সহ্য করতে হবে। আমাদের উচিত ইমরান খানের পাশে দাঁড়ানো।’
ইমরান খানের প্রতি এখনো অনেকের সমর্থন থাকলেও, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় নিয়েই সব অভিযোগ তাদের। কেউ কেউ ইমরানকে অযোগ্য উল্লেখ করে বলছেন, পাকিস্তানে গরিবদের পুরোপুরি সর্বনাশ হয়ে গেছে।
তবে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির জন্য শুধু ইমরান খানের সরকার দায়ী, এমন অভিযোগের বিরোধিতাও করছেন অনেকে। ইরাম ও নওরীন নামে দুই গৃহিণী বিবিসিকে বলেন, শুধু পাকিস্তানে নয়, করোনা মহামারির পর বিশ্বের সব দেশেই সবকিছুর দাম বেড়েছে।
তবে প্রতিবেশী অন্য দেশগুলোর তুলনায় পাকিস্তানে নিত্যপণ্যের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে ইমরান খানের নীতির প্রতি পুরোপুরি সন্তুষ্ট না হলেও, তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পদক্ষেপ যে জনমতের ওপর ভিত্তি করে নেওয়া হয়নি সে বিষয়ে একমত অনেকে। পাকিস্তানের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর একাংশ মনে করছে, বিরোধীদের এমন পদক্ষেপ তাদের দেশের ‘অভিজাত রাজনৈতিক কৌশল’ ছাড়া কিছুই নয়।
ধারণা করা হয়, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সহায়তায় ২০১৮ সালে ক্ষমতায় এসেছিলেন ইমরান খান। কিন্তু সেই সম্পর্কে এখন ফাটল ধরেছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। ফলে ইমরান খানের এই দুর্বলতার সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা।
যদিও সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কে টানাপোড়েনের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে পাকিস্তানের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিয়ে ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন ইমরান খান। তার দাবি, তিনি একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার, যারা পাকিস্তানের শাসনে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে।
ইমরান সম্ভবত একটি পাশ্চাত্যবিরোধী আখ্যান তৈরি করার চেষ্টা করছেন এবং তার অনেক অনুরাগী-অনুসারীরা তা বিশ্বাসও করছেন।
ইসলামাবাদের একটি রেস্তোরাঁয় বন্ধুদের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন ২৫ বছর বয়সী সোহেল আখতার। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ইমরান খানকে ভোট দিয়েছিলেন সোহেল ও তার বন্ধুরা। তারা সবাই ইমরানের প্রতি অনুগত।
সোহেল বিবিসিকে বলেন, ‘আমি চেয়েছিলাম পাকিস্তান বিশ্ব মঞ্চে সম্মানিত হোক। ইমরান খান কীভাবে ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন সেটি দেখুন। আগে আমরা দাসের মতো ছিলাম।’
কিন্তু ইমরান খানের প্রতি পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর অবস্থান এবং তার ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য তারা আসলেই দায়ী কি না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হলে কিছুটা দ্বিধায় পড়ে যান সোহেল ও তার বন্ধুরা।
অর্থনীতির দুর্বল অবস্থা ইমরান খানের জনপ্রিয়তা নিঃসন্দেহে কমিয়ে দিলেও, অনেক সাধারণ মানুষের সমর্থন নিয়ে পাকিস্তানের রাজনীতিতে তিনি শক্তিশালী হিসেবেই টিকে থাকবেন বলে মনে হচ্ছে।