বৃহস্পতিবার, ৭ এপ্রিল ২০২২
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | বিনোদন | শিরোনাম » দক্ষিণী সিনেমা আমাদের দেশে কেন এত জনপ্রিয়?
দক্ষিণী সিনেমা আমাদের দেশে কেন এত জনপ্রিয়?
মূলত চারটি ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা। সেগুলো হলো তামিল, তেলুগু, মালয়লাম ও কন্নড়। তামিল-তেলুগু ভাষার সিনেমাগুলো বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়। সম্প্রতি তাদের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। শিবাজি থেকে শুরু করে রজনীকান্ত, কমল হাসান এবং এ প্রজন্মের আল্লু অর্জুন ও বিজয় থালাপতি। বেশ ফ্যানবেজ তৈরি করেছেন বাংলাদেশে।
দক্ষিণী সিনেমা আমাদের দেশে জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। সেগুলো হলো- গল্প, অভিনয়, অ্যাকশন। আর তার সঙ্গে তারকাদের লাইফস্টাইল।
গল্প: দক্ষিণ ভারতের সিনেমার গল্প বেশ শক্ত হয়। বিভিন্ন মাধ্যমে এ সিনেমাগুলো আমাদের দেশের দর্শক দেখেন। ভিন্ন ভাষার সিনেমা হলেও এর সঙ্গে রিলেট করতে পারেন দর্শকরা। তাই দক্ষিণ ভারতের সিনেমাগুলো এ দেশে বেশ জনপ্রিয়। রাজনৈতিক, সামাজিক, রোমান্স, থ্রিলার, কমেডি, অ্যাকশান, ড্রামা- যে ঘরানার সিনেমাই হোক না কেন? দর্শক খুব সহজের গল্পে ঢুকে যেতে পারেন। গল্পগুলো এমন ভাবে সাজানো তাতে মনে হয় এটি আমাদের দেশের কোনো অঞ্চলেরই ঘটনা। সিনেমা জীবনের প্রতিচ্ছবি। তার প্রমাণ দক্ষিণী সিনেমাতেই খুঁজে পাচ্ছেন আমাদের দেশের দর্শকরা।
বিজয়, সুরিয়া, ধানুস, বিক্রম, এনটিআর, মহেশবাবু, আল্লু অর্জুন, রামচরণ, জুনিয়র এনটিআরসহ অনেক তারকার বহু ভক্ত আছে এ দেশে। তামিল সিনেমার গল্প যেসব বিষয়কে নিয়ে করা হয় সেগুলো নিয়ে আমাদের দেশে দেখাই যায় না। কী নেই দক্ষিণী সিনেমায়? পুলিশের সফলতা ও দুর্নীতি, সেনাবাহিনীর ত্যাগ-দেশপ্রেম, কৃষকদের দুরবস্থা, ধর্ষণ, চিকিৎসা ব্যবস্থার অসংগতি, সরকারের নির্বাচন ব্যবস্থার অসংগতি, নারীর ক্ষমতায়ন, নেতাদের ক্ষমতার অপব্যবহার, আরও কত কী!
অভিনয়: দক্ষিণ ভারতের নায়করা একটি চরিত্রের জন্য বেশ পরিশ্রম করেন। সেটা পর্দায় তাদের দেখলেই বোঝা যায়। প্রতিটি চরিত্রে তারা বেশ প্রাণবন্ত থাকেন। স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাবলীল অভিনয় করেন তারা। চরিত্রে এমনভাবে ঢুকে যান তাতে মনে হয় বাস্তব কোনো একটি চরিত্রকে আপনি পর্দায় দেখছেন। আর সেটাকেই দর্শক লুফে নেয়।
চেন্নাই শহর হচ্ছে তামিল সিনেমা প্রধান কেন্দ্র। আর তেলুগু ছবির প্রধান কেন্দ্র হায়দরাবাদ। তামিল-তেলুগু ভাষায় কিছুটা মিল থাকায় দুই ইন্ডাস্ট্রির অনেক তারকা দুই জায়গায় কাজ করেন। বাংলাদেশের বেশকিছু সিনেমার কালার গ্রেডিং করা হয়েছে তামিল-তেলুগু থেকে। অনেকে আবার দুই দেশের টেকনিয়াশন দিয়েও কাজ করাচ্ছেন।
অ্যাকশন: তামিল সিনেমার অ্যাকশন মানেই ফ্যান্টাসি। একটা সময় দক্ষিণী সিনেমায় ধুন্ধুমার মারপিট দেখা যেত। এখন তার আমুল পরিবর্তন এসেছে। বাস্তবতার সঙ্গে এর মিল না থাকলেও আমাদের দর্শক সহজেই বুঁদ হয়ে যায় এসব অ্যাকশনে। কিছুদিন আগে অ্যাকশন দৃশ্যে হুবহু বানিয়ে আলোচনায় ছিলেন মাদারীপুরের ছয় তরুণ। লজিস্টিক সাপোর্ট থাকার পরও আমাদের দেশের নির্মাতারা বড়পর্দায় এসব অ্যাকশন দেখাতে পারেন না। অন্যদিকে শুধু মোবাইল আর কিছু অ্যাপস ব্যবহার করেই হুবহু তামিল সিনেমার অ্যাকশন দৃশ্য বানিয়ে ফেলছেন অনেকে, যা নিয়ে রীতিমতো আলোচনা শুরু হয়েছে নেটদুনিয়া। এটা থেকেই দক্ষিণ ভারতের সিনেমার অ্যাকশনের জনপ্রিয়তা অনুমান করা যায়।
বলিউডে প্রভাব: দক্ষিণ ভারতের সিনেমার জয়জয়কারের প্রভাবে পড়েছে বলিউডে। সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত দক্ষিণী সিনেমাগুলোর কাছে হার মেনেছে বিটাউনের সিনেমা। সালমান-শাহরুখ ভক্তরাও এখন ব্রিবত হন- অযৌক্তিক অ্যাকশন, মানহীন গল্প, সেই টিপিক্যাল প্রেম এসবের কারণে।
নতুন যারা আসছেন তারাও খুব বেশি ভাঙতে পারছেন না। একজন নাচে ভালো তো অ্যাকশনে দুর্বল। আবার একজন অ্যাকশন ভালো করেন তো অভিনয়ে ভালো না। অন্যদিকে দক্ষিণী সিনেমায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন রজনীকান্ত থেকে শুরু করে এ প্রজন্মের আল্লু-প্রভাসরা। বলিউড একের পর এক বায়োপিক নির্মাণ করেও দর্শক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে। উল্টো দিকে গল্প, অভিনয়, সিনেমাটোগ্রাফি, অ্যাকশন আর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে বেশ এগিয়ে আছে দক্ষিণী সিনেমা।
দেশে জনপ্রিয়তার কারণ: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দক্ষিণী সিনেমা নিয়ে অনেক গ্রুপ দেখা গেছে। দেশে দক্ষিণী সিনেমা জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে এসব গ্রুপের ভূমিকাও কম নয়। গ্রুপে ব্যক্তি উদ্যেগে এসব সিনেমার ইতিবাচক রিভিউ করেন। ফলে দেশের অনেকে এসব সিনেমা দেখায় আগ্রহী হয়ে উঠেন। তামিল, তেলুগু ভাষায় না হলেও হিন্দি ডাবিং করা সিনেমাগুলো বেশ উপভোগ করেন তারা। গেল কয়েক বছরে বলিউডের সিনেমা থেকে দক্ষিণী সিনেমাগুলো বেশি আলোচিত হয়েছে বাংলাদেশে। প্রভাষের ‘বাহুবলী’, যশের ‘কেজিএফ: চ্যাপটার ওয়ান’, জুনিয়র এনটিআরের ‘আরআরআর’ কিংবা দুলকার সালমানের সিনেমা দেখেননি- এমন লোক পাওয়া দুষ্কর!
দক্ষিণী সিনেমা এ দেশে জনপ্রিয়তার আরও একটি কারণ হলো- ফ্যানবেজ। প্রিয় তারকার নতুন সিনেমার জন্য মুখিয়ে থাকেন ভক্তরা। আরআরআর, কেজিএফ চ্যাপ্টার-২ তারই প্রমাণ। একটু পেছনে যদি যাই, প্রভাষ তার বাহুবলী সিনেমার জন্য পাঁচ বছর কোনো সিনেমায় অভিনয় করেননি। তার ভক্তরাও অপেক্ষা করেছেন। ফলাফল মিষ্টি হয়েছে। বাহুবালী মুক্তির পর হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন ভক্তরা।