বুধবার, ৬ এপ্রিল ২০২২
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | নারায়ণগঞ্জ | নারায়ণগঞ্জ সদর | শিরোনাম » আসামির স্ত্রী-শ্যালিকাকে শ্লীলতাহানি পুলিশ কনস্টেবলের
আসামির স্ত্রী-শ্যালিকাকে শ্লীলতাহানি পুলিশ কনস্টেবলের
নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালত ভবনে এক হাজতি আসামির স্ত্রী ও কিশোরী শ্যালিকাকে প্রকাশ্যে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে আহাদ নামে এক কোর্ট পুলিশ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে এ ঘটনায় আদালতজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। তবে ঘটনার পর কনস্টেবল আহাদ ধরা পড়ার ভয়ে আদালত থেকে পালিয়ে যান।
ভুক্তভোগী নারী ও তার ছোট বোন সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার দেলপাড়া এলাকার বাসিন্দা। মঙ্গলবার ওই নারীর স্বামী হাজতি আসামি সুমন মিয়াকে আদালতে হাজির করার নির্ধারিত দিন ছিল। স্বামীকে দেখতে ১৬ বছর বয়সী ছোট বোনকে সঙ্গে নিয়ে আদালতে গেলে শ্লীলতাহানির শিকার হন তারা।
আদালতের আইনজীবীরা জানান, নির্যাতিতা নারী ও তার কিশোরী বোন ঘটনার সময় নিজেদের সম্ভ্রম রক্ষা করতে দৌড়ে জেলা আদালতের কয়েকজন আইনজীবীর কাছে যান। পরে সেখানে ঘটনার বর্ণনা করেন।
এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট মাসুদ উর রউফ, সুমন মিয়া, মৃণাল কান্তি বাপ্পি, মোস্তফা করিম ও বাদল পোদ্দার।
অ্যাডভোকেট মোস্তফা করিম দুপুর আড়াইটায় ফেসবুকে তার ব্যক্তিগত আইডিতে এ ঘটনার বিষয়ে ছবিসহ একটি স্ট্যাটাস দিলে মুহূর্তের মধ্যে এ খবর ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অ্যাডভোকেট সুমন মিয়া সময় নিউজকে বলেন, দেলপাড়া এলাকার বাসিন্দা হাজতি আসামি সুমন মিয়ার স্বজনরা মামলার শুনানির তারিখ থাকায় আদালতে তাকে একনজর দেখতে মঙ্গলবার সকালে কোর্ট পুলিশের গারদখানায় গিয়েছিলেন। বেলা ১১টার সময় সুমন মিয়াকে গারদখানা থেকে আদালতে হাজির করতে পুলিশ পাহারায় জেলা জজ আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলায় নেওয়া হচ্ছিল। পুলিশের হেফাজতে থাকা সুমন মিয়ার সঙ্গে হাঁটতে থাকেন তার স্ত্রী ও শ্যালিকাসহ নারী স্বজনরা। এ সময় সুযোগ পেয়ে পুলিশ কনস্টেবল আহাদ সুমনের স্ত্রী ও শ্যালিকার শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় প্রকাশ্যে কয়েকবার হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি করেন।
তিনি বলেন, উপায়ান্তর না দেখে ওই নারী ও তার ছোট বোনকে নিয়ে দৌড়ে বিশেষ পিপির কার্যালয়ের সামনে আলোচনারত আইনজীবী মাসুদ উর রউফ, সুমন মিয়া, মৃণাল কান্তি বাপ্পি ও বাদল পোদ্দারের কাছে গিয়ে চিৎকার দিয়ে কান্নাকাটি শুরু করেন।
অ্যাডভোকেট সুমন মিয়া আরও বলেন, ওই নারী আমাদের সামনে এসে কান্নাকাটি করে ঘটনার বর্ণনা করার সময় অভিযুক্ত কনস্টেবল আহাদ দৌড়ে আদালত থেকে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করে কোর্ট পুলিশের অভিযুক্ত কনস্টেবল আহাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন আইনজীবীরা।
ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া আইনজীবী মোস্তফা করিম সময় নিউজকে বলেন, ওই নারী যখন চিৎকার দিয়ে এসে হুমড়ি খেয়ে পড়েন তখন আমি খুব কাছেই ছিলাম। ওই নারীর মুখে ঘটনার বিস্তারিত শুনেছি। আমাদের সামনেই কনস্টেবল আহাদ দৌড়ে পালিয়ে গেছে। শুনেছি তার বাড়ি গাজীপুর।
এ বিষয়ে আসামি সুমন মিয়ার নির্যাতিতা স্ত্রীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ওই নারী সময় নিউজকে বলেন, আমরা ছয় বোন। আমাদের বাবা, মা এবং কোনো ভাই নেই। আমার স্বামীও এক মামলায় হাজতে আছে। আমাদের সঙ্গে ওই পুলিশ কনস্টেবল যে অনৈতিক আচরণ ও অন্যায় করেছে আমি এর ন্যায়বিচার চাই। কিন্তু আমরা খুব অসহায়। আমাদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নাই।
‘আমার শরীরে হাত তো দিয়েছেই, আমার ১৬ বছর বয়সী নাবালক বোনটার সঙ্গে এই আচরণ করেছে। কিন্তু আমি কোথায় গেলে এর বিচার পাব,’ বলেন তিনি।
তিনি আরও জানান, ঘটনার পর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কোর্ট পুলিশের বড় অফিসার পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি অনেকবার ফোন দিয়ে তাকে দেখা করতে বলেছেন। এ ঘটনা কোনো সাংবাদিক বা অন্য কাউকে জানাতে নিষেধ করেছেন। তিনি এর সুরাহা করবেন বলে আশ্বাস দিচ্ছেন। তবে কোর্ট পুলিশের বড় অফিসার পরিচয় দেওয়া সেই ব্যক্তির কথায় কোনো ভরসা পাচ্ছেন না বলে জানান ওই নারী।
কনস্টেবল আহাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে রাতে নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। রাত সাড়ে ১০টা থেকে তিনি ফোন বন্ধ করে রাখেন।
এ ব্যাপারে জেলার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান সময় নিউজকে বলেন, আমি ঢাকায় পুলিশ হেড কোয়ার্টারে মিটিংয়ে গিয়েছিলাম। ঢাকা থেকে ফিরে শহরের যানজট নিরসন পরিস্থিতি দেখতে কয়েকটি চেকপোস্ট ভিজিট করি। সন্ধ্যার পর ফেসবুকে এক সাংবাদিকের পোস্টের রেফারেন্সে এ বিষয়ে জানতে পারি। বিষয়টি আমরা যাচাই বাছাই করছি।