মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল ২০২২
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম | ছবি গ্যালারী | শিরোনাম » কুমিল্লা সিটিতে ভোট নিয়ে ইসির সিদ্ধান্ত আজ
কুমিল্লা সিটিতে ভোট নিয়ে ইসির সিদ্ধান্ত আজ
যথাসময়ে উদ্যোগ না নিয়ে সময়সংকটের মধ্যে আজ মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আইন অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই নির্বাচন সম্পন্ন করতে চাইলে দ্রুত নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে এ নগরীতে রোজার মধ্যেই নির্বাচনী প্রচার চলবে এবং ঈদের কয়েক দিন পরেই ভোট গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া এই নির্বাচন হবে আগের কে এম নুরুল হুদার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মতোই কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে নতুন ইসির প্রথম পরীক্ষা।
পাঁচ বছর আগে ওই নির্বাচনে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অংশ নেয়। কিন্তু এবার বিএনপি তাদের দলীয় প্রার্থী দেবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সে ক্ষেত্রে এ নির্বাচন পুরোপুরি অংশগ্রহণমূলক করার বিষয়টিও নতুন ইসির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ।
এ বিষয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সম্প্রতি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন করব না, এটা আমাদের অবস্থান। এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়নি। কিছুদিন আগে অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আমরা বর্জন করেছি। ’
ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নতুন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় দ্রুত পেরিয়ে যাচ্ছে বলে জানানো হয়। এরপর নির্বাচন কমিশনের কোনো সভাও হয়নি এবং বিষয়টি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তও হয়নি। আজ সকাল ১১টায় শুরু হতে যাওয়া কমিশনসভার আলোচ্যসূচিতে প্রথমেই রয়েছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এ ছাড়া বাকি থাকা পৌরসভা ও ইউপির সাধারণ নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের অন্যান্য নির্বাচন ও উপনির্বাচন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিষয়েও আলোচনা হবে।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ নির্বাচন যথাসময়ে হওয়ার বিষয়ে এক মাস ধরেই সংশয় প্রকাশ করে আসছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে চিঠি পাওয়া যায়নি। রোজার মধ্যে নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়েও এসব কর্মকর্তা দ্বিধান্বিত। অন্যদিকে স্থানীয় সরকার বিভাগের বক্তব্য ছিল, গত নভেম্বরেই এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেওয়া হয় এবং সে সময় কে এম নুরুল হুদার কমিশন এ নির্বাচন নিয়ে অনাগ্রহ প্রকাশ করে। এ অবস্থায় স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রত্যাশা ছিল, নতুন কমিশন দায়িত্ব নিয়ে এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নেবে। এ ক্ষেত্রে নতুন করে আবারও নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ জানানোর কোনো প্রয়োজন নেই।
তবে শেষ পর্যন্ত কমিশনের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে আবারও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ গতকাল সোমবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা আজকেই স্থানীয় সরকার বিভাগের চিঠি পেয়েছি। চিঠিতে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নিয়ে একটি মামলার কথা উল্লেখ করো হয়েছে। এ বিষয়ে মঙ্গলবারের (আজ) নির্বাচন কমিশনের সভায় সিদ্ধান্ত হতে পারে। ’
এ সম্পর্কে স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘একটি মামলা আছে, কিন্তু ওই মামলার কারণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে আদালতের কোনো স্থগিতাদেশ নেই। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের অন্য কোনো সমস্যা না থাকলে আমরা আশা করছি, আইনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হবে। ’
কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. দুলাল তালুকদার গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রোজার মধ্যে নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনা এবং নির্বাচনী প্রচারে কোনো বাধা আছে বলে মনে করি না। আমরা নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুত। ভোটার তালিকাও হালনাগাদ হয়ে গেছে। তফসিল ঘোষণা হলে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ভোটার তালিকার সিডি দেওয়া যাবে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। ’
প্রসঙ্গত, গতবার ২০১৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি এই সিটির নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করে ৩০ মার্চ ভোট গ্রহণ করা হয়। সে সময় নির্বাচিতদের প্রথম সভা হয় ১৭ মে। তাঁদের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৬ মে। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইনে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলা আছে। সে হিসাবে কুমিল্লা সিটির নির্বাচনের সময় শুরু হয়ে গেছে গত ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই।
ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা আরো জানান, গতবার ভোটগ্রহণের ৩৮ দিন আগে তফসিল ঘোষণা করা হয়। এবারও প্রায় একই সময় হাতে রেখে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করতে হবে। ভোটগ্রহণের জন্য ১৬ মে পর্যন্ত সময় থাকলেও তার আগেই নির্বাচন সম্পন্ন করা দরকার। কারণ ভোটগ্রহণের দিন কোনো কেন্দ্রের ভোট যদি স্থগিত করা হয় তাহলে সেই কেন্দ্রের ভোট পুনঃগ্রহণের জন্যও সময় লাগবে। নির্বাচিতদের শপথ নিতে হবে ১৬ মের আগেই।
কুমিল্লায় নির্বাচনী হাওয়া : এদিকে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা না হলেও কুমিল্লা নগরীতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে এক মাস আগে নির্বাচনী তত্পরতা শুরু হয়েছে। বিএনপির প্রার্থীরা অনেকটা নীরব থাকলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। এই দলের অন্তত ছয়জন নেতা এরই মধ্যে মাঠে নেমে বিভিন্নভাবে নিজেদের প্রার্থী হিসেবে জানান দেওয়ার চেষ্টা করছেন। যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে। নিজেদের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জানান দিতে নগরীজুড়ে পোস্টার লাগিয়েছেন।