খোশ আমদেদ মাহে রমজান
খোশ আমদেদ মাহে রমজান। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সুসংবাদ নিয়ে এল মাহে রমজান। গতকাল শনিবার বাংলাদেশের আকাশে ১৪৪৩ হিজরী সনের পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেছে। আজ রোববার প্রথম রোজা। গত রাতেই প্রথম তারাবিহ নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সউদী আরবসহ বিভিন্ন দেশে গতকাল প্রথম রোজা পালিত হয়েছে। রমজান মাস ইবাদতের বিশেষ মৌসুম।
বৈশ্বিক করোনাত্তোর বিধি নিষেধমুক্তভাবে এবার ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মসজিদে তারাবিহ নামাজসহ অন্যান্য ইবাদত বন্দেগি পালন করতে পারবেন। ২০২০ সালে রমজানের প্রায় এক মাস আগে করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়লে ওই বছর মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে শুধু ইমাম মুয়াজ্জিন ছাড়া কেউ একত্রে তারাবিহসহ অন্যান্য ইবাদত বন্দেগি মসজিদে করতে পারেননি। করোনা পরিস্থিতি উন্নত হওয়ায় এবার মানুষ এ বরকতময় মাসটি ধর্মীয় ভাবগাম্ভির্যের মধ্যদিয়ে ইবাদত বন্দেগি করার জন্য আগভাগেই প্রস্তুতি নিয়েছেন।
মাহে রমজান আল্লাহতায়ালার এমনই এক বরকতময় ও নেয়ামতপূর্ণ মাস, যার বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে অন্য কোনো মাসেরই তুলনা চলে না। রোজা হচ্ছে মাহে রমজানে অবশ্য পালনীয় ফরজ আমল। যার পুরস্কার স্বয়ং আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা নিজে দেবেন। আল্লাহতায়ালা কোরআন মাজিদে বলেন, ‘রমজান মাস, এতে মানুষের দিশারি এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে, তারা যেন এই মাসে রোজা পালন করে।’ ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য রোজার বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেওয়া হয়েছিল; যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৫ ও ১৮৩)।
মানবজীবনে রোজা একজন বান্দার আত্মীক ও শারীরিক কল্যাণের ও উন্নতির গুরুত্বপূর্ণ পন্থা। তদুপরি, আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা তাঁর অপার ক্ষমা, দয়া আর অপরিসীম করুণা দিয়ে রমজান মাসকে বান্দাদের উপহার দিয়েছেন।
প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানসহ সওয়াবের নিয়তে রমজানে রোজা পালন করে, তার পূর্বের গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়।’ ‘যে ব্যক্তি ইমানের সহিত সওয়াবের আশায় রমজানে রাত জেগে ইবাদত করে, তার পূর্বের গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়।’ ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে জেগে ইবাদত করবে, তার অতীতের গোনাহ মাফ করে দেয়া হবে।’ (বুখারি, প্রথম খণ্ড, হাদিস : ৩৭, ৩৬ ও ৩৪)।
‘সাওম’ অর্থ বিরত থাকা; এর বহুবচন হলো ‘সিয়াম’। ফারসি, উর্দু, হিন্দি ও বাংলায় সাওমকে ‘রোজা’ বলা হয়। ইসলামি পরিভাষায় সাওম বা রোজা হলো ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইবাদতের উদ্দেশে পানাহার ও যৌনসম্ভোগ থেকে বিরত থাকা। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘আর তোমরা পানাহার করো যতক্ষণ রাত্রির কৃষ্ণরেখা হতে উষার শুভ্ররেখা স্পষ্টরূপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়। অতঃপর নিশাগম পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ করো।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৭)।
প্রাপ্তবয়স্ক তথা সাবালক, সাধারণ বুদ্ধিমত্তা বা স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন, রোজা পালনে সক্ষম সুস্থ সব নারী ও পুরুষের জন্য রমজান মাসে রোজা পালন করা বাধ্যতামূলক বা ফরজ ইবাদত। ঋতুমতী নারী, সন্তানপ্রসবকারী মা, অসুস্থ ব্যক্তিরা এই রোজা পরবর্তী সময়ে কাজা আদায় করবেন। এমন অক্ষম ব্যক্তি, যাদের আবার সুস্থ হয়ে রোজা পালনের সামর্থ্য লাভের সম্ভাবনা বিদ্যমান নেই, তারা রোজার জন্য ফিদিয়া প্রদান করবেন। অর্থাৎ প্রতিটি রোজার জন্য একটি সদকাতুল ফিতরের সমান দান করবেন। জাকাত গ্রহণের উপযুক্তদেরই এই ফিদিয়া প্রদান করা যাবে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জান্নাতে রায়্যান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন শুধু রোজাদারেরাই প্রবেশ করবে। তাদের প্রবেশের পরে এই দরজাটি বন্ধ করে দেয়া হবে। রোজাদার ছাড়া আর কেউ এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (বুখারি, খণ্ড: ৩, হাদিস: ১,৭৭৫)।
রমজান মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত পবিত্র একটি মাস। যে মাস আমল ও ইবাদতের মাধ্যমে ভরপুর ও সজিব রাখা সকলেরই কর্তব্য। রমজানের রোজা পালনের বিধান ইসলামের অন্যতম ফরজ। মানব জীবনের রমজান মাস ও রোজার রয়েছে বিরাট ভূমিকা। ফলে রমজান মাসকে রোজা পালন ও ইবাদতের মাধ্যমে মানব জীবনকে সুন্দর, কল্যাণময় ও ভারসাম্যপূর্ণ করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করা অপরিহার্য, যার মাধ্যমে প্রতিটি মুসলিম নর-নারী শারীরিক ও আত্মীক উন্নতির পাশাপাশি ইহ ও পরকালীন সাফল্য পেতে পারেন।
রমজানের সঙ্গে সম্পৃক্ত দুটি ওয়াজিব, যথা: সদকাতুল ফিতর প্রদান করা এবং ঈদের নামাজ আদায় করা। রমজানের বিশেষ সুন্নাতগুলো হলো রজব মাস ও শাবান মাস বরকতের জন্য এবং রমজানপ্রাপ্তির জন্য দোয়া করতে থাকা; রজব ও শাবান মাস থেকে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করা, রজব ও শাবান মাসে অধিক পরিমাণে নফল রোজা রাখা ও নফল নামাজ আদায় করা, শাবান মাসের চাঁদের তারিখের হিসাব রাখা; রমজানের চাঁদ দেখা; সাহরি খাওয়া, তাহাজ্জত নামাজ আদায় করা, ইফতার করা ও করানো, ২০ রাকাত তারাবিহ নামাজ আদায় করা, কোরআন কারিম বেশি বেশি তিলাওয়াত করা এবং ইতিকাফ করা; রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোয় শবে কদর সন্ধান করা এবং ঈদের জন্য শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা।
তারাবিহ নামাজ রমজানের বিশেষ আমল। পুরুষদের তারাবিহ নামাজ মসজিদে জামাতে আদায় করা সুন্নাত। ওজরের কারণে মসজিদে যাওয়া সম্ভবপর না হলে এবং জামাত করা না গেলে তখন একা পড়লেও পূর্ণ সওয়াব পাওয়া যাবে। অনুরূপ পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজও বিশেষ অবস্থায় একাকী আদায় করা যাবে। এতেও পরিপূর্ণ সওয়াব পাওয়া যাবে। এদিকে, ইসলামিক ফাউন্ডেশন চলমান মুসল্লিদের সুবিধার্থে রমজানের তারাবিহ নামাজ সকল মসজিদে একই পদ্ধতিতে পড়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।