রবিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | জাতীয় | ঢাকা | শিরোনাম » শহীদ মিনার নির্মাণ প্রকল্পের বাজেট বরাদ্দ করেছিল আওয়ামী লীগ
শহীদ মিনার নির্মাণ প্রকল্পের বাজেট বরাদ্দ করেছিল আওয়ামী লীগ
আওয়ামী লীগ শহীদ মিনার নির্মাণ প্রকল্পের বাজেট বরাদ্দ করেছিল বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে একুশে পদক প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি। এতে জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দেশবরেণ্য ২৪ জন বিশিষ্ট নাগরিককে একুশে পদক তুলে দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক গুণীজনদের ২০২২ সালের একুশে পদক তুলে দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, গবেষণা, সাংস্কৃতিক চর্চা থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলন— এসব ক্ষেত্রে যারা অবদান রাখছেন… আমি জানি সবাইকে আমরা (সম্মাননা) দিতে পারি না। তবুও আমাদের প্রচেষ্টা হচ্ছে যারা এক সময় অবদান রেখেছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই হয়ত হারিয়েও যাচ্ছিলেন, আমরা তাদেরও খুঁজে বের করে সম্মান জানানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। এতে করে ইতিহাস বিকৃতির হাত থেকে আমাদের দেশের মানুষ মুক্তি পায়।
তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনে রক্তদানের মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রামে ধাপে ধাপে বাঙালিকে উদ্বুদ্ধ করেছেন জাতির পিতা শেখ মুজিব। সেজন্য আমরা একটি আলাদা জাতিরাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পেরেছি। বাঙালি যে একটি জাতিসত্তা, তাদের আলাদা সংস্কৃতি আছে, আমাদের আলাদা ভাষা আছে, সেটাই প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন তিনি এবং সেভাবেই একটি রাষ্ট্র গড়তে চেয়েছিলেন। যে রাষ্ট্রটি হবে বাঙালিদের রাষ্ট্র, আমাদের রাষ্ট্র। আমরা সেখানে স্বাধীনভাবে আমাদের সংস্কৃতি চর্চা করতে পারব, আমাদের ভাষা সাহিত্য বিকশিত হবে এবং আমরা একটা জাতিসত্তা হিসেবে বিশ্ব দরবারে আত্মমর্যাদা নিয়ে পরিচিত হব।
পাকিস্তানি বাহিনীর লক্ষ্য ছিল আমাদের ধ্বংস করে দেওয়া— উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা কেবলমাত্র ধর্মের অজুহাতে ১২শ মাইল দূরত্ব নিয়ে দুটি খণ্ডকে এক করার চেষ্টা করেছিল। সেজন্য যাদের ভাষা থেকে সবকিছু আলাদা, তাদের এক করার জন্য সবার প্রথমে ভাষার ওপর আঘাত হানে। সেই সংগ্রামের মাধ্যমেই আজ স্বাধীনতা অর্জন করেছি আমরা। এ অর্জনে প্রত্যেককে সরাসরি কিংবা পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন। তাদের এ অবদান চিরস্মরণীয়।
তিনি বলেন, দেশের তৃণমূলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বর্তমান সরকার কাজ করে চলেছে। আমরা চাই অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে। আমাদের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি যেন আন্তর্জাতিকভাবে আরও বিকশিত হতে পারে, সেটাই আমাদের চেষ্টা থাকবে। সেই প্রচেষ্টাতেও আমরা সফলতা অর্জন করব বলে আমি বিশ্বাস করি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।
সরকার প্রধান বলেন, আজ যত গুণীজন এখানে পুরস্কৃত হয়েছেন তাদের অনেকেই সেই ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৬৯, ৭০, ৭১ এর মুক্তি সংগ্রামের সবক্ষেত্রেই অবদান রেখেছেন। তাদের খুঁজে বের করে সম্মানিত করার মাধ্যমে আজকের নতুন প্রজন্মের কাছে তাদের সেই অবদান সম্পর্কে জানানো এবং তাদের পরিচিত করে তোলা হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। যেখানে সব ধর্ম, বর্ণের মানুষ তার অধিকার নিয়ে বসবাস করবে। দেশের সব মানুষ শিক্ষায়, অর্থনৈতিকভাবে, সাংস্কৃতিক, শারীরিকভাবে সাফল্য অর্জন করবে। বিশ্ব দরবারে বিজয়ী জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে চলবে এটাই ছিল জাতির পিতার আকাঙ্ক্ষা এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। ‘৭৫ এরপর সেই চেতনা লুণ্ঠিত হয়। আমরা আরও পিছিয়ে পড়ি।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরই আমরা উদ্যোগ নিই সেই চেতনা ফিরিয়ে আনতে। ৫৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস হিসেবে ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এমনকি শহীদ মিনার নির্মাণ প্রকল্পের বাজেট বরাদ্দ করেছিল আওয়ামী লীগ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পরে আওয়ামী লীগ সরকার এসে ২১ ফেব্রুয়ারিকে শুধু আমাদের দিবস নয়, বরং সারা বিশ্বে যারা মাতৃভাষাকে ভালোবাসে এবং মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছে, তাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। যার কারণে বিশ্বব্যাপী দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।
গুণীজনরা পথ দেখান মন্তব্য করে তিনি বলেন, আপনাদের অবদান বিভিন্ন ক্ষেত্রে, যার জন্য আমাদের এ অগ্রযাত্রা সম্ভব হয়েছে। তাই সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাই। আপনাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমাদের নতুন প্রজন্ম যেন দেশের কল্যাণে কাজ করে, সেটাই আমি চাই।
এ বছর ভাষা আন্দোলনে দুজন, মুক্তিযুদ্ধ ক্যাটাগরিতে চার জন, শিল্পকলায় সাত জন, ভাষা ও সাহিত্যে দুজন, সমাজসেবায় দুজন, গবেষণায় চার জন (দলগতভাবে তিন জন) একুশে পদক পেয়েছেন। এছাড়া সাংবাদিকতা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, শিক্ষায় একজন করে পদক পেয়েছেন।
পদক বিজয়ীরা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর কাছ থেকে নিজ নিজ পদক গ্রহণ করেন এবং মরণোত্তর একুশে পদক বিজয়ীদের পক্ষে তাদের পরিবারের সদস্যরা এ পদক গ্রহণ করেন।