বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম | ছবি গ্যালারী | শিরোনাম » দেশে প্রথম বিচিবিহীন পেয়ারার জাত উদ্ভাবন
দেশে প্রথম বিচিবিহীন পেয়ারার জাত উদ্ভাবন
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রটি সূচনা লগ্ন থেকে কৃষিজ বিভিন্ন জাত উদ্ভাবন করে চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ সাত বছরের গবেষণায় বিচিবিহীন পেয়ারার নতুন জাত উদ্ভাবন করে সফলতা অর্জন করেছে। উদ্ভাবিত নতুন জাতের এ পেয়ারার নাম দেওয়া হয়েছে ‘বারি পেয়ারা-৪’। নতুন এ জাতের পেয়ারার চাষ সম্প্রসারণ করা গেলে পেয়ারা চাষে বিপ্লব আসবে বলে মনে করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত গবেষণা কেন্দ্রটি এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের ১৯টি নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে। রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা সাত বছরের প্রচেষ্টায় বিচিবিহীন বারি পেয়ারা-৪ উদ্ভাবন করেছেন। এ পেয়ারার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এতে কোনো বিচি থাকে না। দেখতে লম্বাটে গাঢ় সবুজ রঙের পেয়ারা পুরোটা খাওয়া যায়। পাশাপাশি অমৌসুমি ফল হিসেবে দেশের বাজারে সবসময় এ পেয়ারা পাওয়া যাবে। উচ্চ ফলনশীল এ ফলটি খুবই সুস্বাদু। এটি নাশপাতি এবং আপেলের বিকল্প হিসেবে দেখছেন গবেষকরা। ফলে এটি দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে মনে করেন তারা।
রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র সূত্র জানা গেছে, উদ্ভাবিত বারি পেয়ারা-৪ উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুর ফল। সব রকমের মাটিতে এ পেয়ারা চাষ করা যায়। তবে জৈব পর্দাথ সমৃদ্ধ দো-আঁশ থেকে ভারী এঁটেল মাটি, যেখানে পানি নিষ্কাশনের বিশেষ সুবিধা রয়েছে, সেখানে এ পেয়ারা ভালো জন্মে। ফলটির আকার ৭ থেকে ১০ সেন্টিমিটার মতো হয়ে থাকে। গড় ওজন দেড় থেকে আড়াইশ’ গ্রাম পর্যন্ত হয়। এতে টিএসএস শতকরা ৯ দশমিক ৫ ভাগ। ফলটি ৮ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত সাধারণ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায়। প্রতি হেক্টর জমিতে এ পেয়ারার ৩২ টন ফলন হবে।
আরও জানা গেছে, এ জাতের পেয়ারায় রোগবালাইয়ের আক্রমণ তেমন দেখা যায়নি। তবে মাঝেমধ্যে ছাতরা পোকার আক্রমণ দেখা যায়। আক্রমণের প্রথম অবস্থায় আক্রান্ত পাতা ও ডগা ছাঁটাই করলেই রোগ দমন করা যায়।
এ নতুন জাতের পেয়ারার বিষয়ে রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলতাফ হোসেন জানিয়েছেন, দেশে সারা বছরই কম বেশি পেয়ারা চাষ হলেও নতুন উদ্ভাবিত এ জাত মূলত গ্রীষ্মকালীন ফল। এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এতে কোনো বিচি থাকে না। সেপ্টেম্বর মাসে যখন দেশে পেয়ারাসহ অন্য ফল তেমন পাওয়া যায় না, তখন এ ফলটি আহরণ শুরু হয়। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আহরণ করা গেলেও অমৌসুমি ফল হিসেবে সারা বছরই কম বেশি এ জাতের পেয়ারা গাছে থাকবে।
তিনি আরও বলেন, এটি পার্বত্য এলাকাসহ সারা দেশে চাষের উপযোগী। নাশপাতি ও আপেলের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হলে এই ফল দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
রাঙামাটি রাইখালী পাহাড়ী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মহিদুল ইসলাম বলেন, গত তিন বছর ধরে সারা দেশের হার্টিকালচার সেন্টার ও কৃষি গবেষণা কেন্দ্রগুলোতে মাতৃ চারা গাছ দেওয়া হচ্ছে। আশা করছি, আগামী দুয়েক বছরের মধ্যে এসব গাছ থেকে কলম পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করা যাবে। কৃষকদের মধ্যে যে ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে, তখন সেটি দেওয়া সম্ভব হবে।
কৃষকদের মধ্যে এ জাতটি ছাড়িয়ে দিতে নতুন আরেকটি মাতৃ বাগান সৃষ্টির কথা উল্লেখ করে রাঙামাটি বনরূপা হর্টিকালচটার সেন্টারের উপ-পরিচালক ড. আব্দুল জব্বার বলেছেন, আশা করছি আগামী বছর দুয়েকের মধ্যে কৃষকদের হাতে চারা দিতে পারব।
এ বিষয়ে রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক তপন কুমার পাল বলেন, আমরা কৃষি সম্প্রসারণে কাজ করি। রাইখালি গবেষণা কেন্দ্রের নতুন জাতের বারি-৪ বা বিচিবিহীন পেয়ারার জাতটির বিভিন্ন হর্টিকালচার সেন্টার মাতৃ গাছের বাগান সৃষ্টি করছে। আগামী ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে চারা করা সম্ভব হবে। তখন আমরা কৃষক পর্যায়ে এ চারা বিতরণ শুরু করব। এর ফলে মানুষের মধ্যে পেয়ারা সম্পর্কে ধরণাই বদলে যাবে।
তিনি বলেন, আমি নিজে খেয়ে দেখেছি, পেয়ারাটি না দেখলে কেউ বলতে পারবে না তিনি কি নাশপাতি খাচ্ছেন না কি পেয়ারা খাচ্ছেন। আমি বিশ্বাস করি, এ ফলটির ব্যাপক চাহিদা থাকবে। বিশেষ করে বিচিমুক্ত ও উন্নত স্বাদের কারণে এর প্রচুর চাহিদা থাকবে। ফলে কৃষকরা ব্যাপক ভাবে লাভবান হবেন।
এ বিষয়ে রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের রাইখালী এলাকার কৃষক মো. রফিক হোসেন জানান, পাহাড়ে অনেক রকম ফলের ফলন হলেও বিচিবিহীন পেয়ারার কথা প্রথম শুনলাম। সারা বছরই এ পেয়ারা বাজারে বিক্রি করা যাবে, এই তথ্য আমাদের আশাবাদী করছে।