মঙ্গলবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | ছবি গ্যালারী | ঢাকা | শিরোনাম » স্বর্ণ শিল্পের উন্নয়নে গোল্ড ব্যাংক ও গোল্ড এক্সচেঞ্জ দরকার
স্বর্ণ শিল্পের উন্নয়নে গোল্ড ব্যাংক ও গোল্ড এক্সচেঞ্জ দরকার
স্বর্ণ ব্যবসাকে আরো এগিয়ে নিতে এবং রপ্তানির পথ সুগম করতে দেশে গোল্ড ব্যাংক ও গোল্ড এক্সচেঞ্জ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। এতে স্বর্ণ বন্ধক রেখে ঋণ নিতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে প্রতিদিন স্বর্ণের বাজারমূল্য নির্ধারণ করাও সম্ভব হবে।
আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) নতুন কার্যালয় উদ্বোধনকালে বক্তারা এ আহ্বান জানান।
বিজ্ঞাপন
রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কার্যালয়টি উদ্বোধন করেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে একটা গোল্ড ব্যাংক দরকার। ’ এটা দারুণ এক যুগান্তকারী চিন্তা। এটা ঠিক যে, বাংলাদেশের যারা স্বর্ণকার, স্বর্ণ শিল্পী, তাঁদের হাতের কাজ অনেক সুন্দর। একসময় মসলিন যেমন বিখ্যাত ছিল। সেদিন সংসদে এটাও আলোচনা হয়েছে-বাংলাদেশে যারা স্বর্ণের কাজ করেন, তাঁদের কাজ অনেক সুন্দর। যা দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারেও খ্যাতি লাভ করা সম্ভব।
মন্ত্রী বলেন, ‘ভ্যালু অ্যাড (মূল্য সংযোজন) করা যায়, এমন পণ্যে আমাদের নজর দেওয়া দরকার। অসংখ্য হাতের কাজ করা মানুষ আছেন, যাঁরা শত শত বছর ধরে উত্তরাধিকার সূত্রে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত। ফলে আমাদের ভালো একটা সুযোগ আছে। ’
বাণিজ্যমন্ত্রী এ সময় গোল্ড ব্যাংক ও গোল্ড এক্সচেঞ্জ গড়ে তোলার বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তৈরি করে আমার কাছে দিন। আমরা কাজ শুরু করি। ’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন দেশের শীর্ষ শিল্প পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। সভাপতিত্ব করেন বাজুস সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীর। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা।
আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যবসায়ীদের বিষয়ে সজাগ আছেন। ব্যবসায়ীরা কিছু চাইলে তিনি কখনোই না করেন না। আমি বিশ্বাস করি, আপনারা যে গোল্ড ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ চেয়েছেন; বাণিজ্যমন্ত্রীকে নিয়ে তাঁর কাছে চাইলে প্রধানমন্ত্রী ফিরিয়ে দেবেন না। তিনি বলেন, সব কিছুর ব্যাংক হয়েছে, গোল্ড ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ কেন হবে না। ’
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এ দেশ স্বাধীন করেছেন। কিন্তু স্বাধীনতার সুফল তিনি এনে দিতে পারেননি। কারণ আততায়ীরা তাঁকে হত্যা করেছে। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। না হলে, ৫০ বছর কেন দেরি হবে একটা গোল্ড রিফাইনারি করতে। ’ তিনি বলেন, ‘বাজুসের প্রেসিডেন্ট যেটা বললেন স্বর্ণের কোনো নীতিমালা ছিল না। এখন নীতিমালা হয়েছে। গোল্ড রিফাইনারি হবে এবং বাংলাদেশ গর্ব করে বলতে পারবে আমাদেরও একটি গোল্ড রিফাইনারি আছে। ইটস এ প্রেস্ট্রিজ (এটা মর্যাদার বিষয়)। আমাদের ৪০টি ইন্ডাস্ট্রি আছে। তার পরও আমি মনে করি, গোল্ড রিফাইনারি করা যুগান্তকারী কাজ। ’
বসুন্ধরার চেয়ারম্যান বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির আমলে এই গোল্ড রিফাইনারি অনুমোদন পেয়েছে। এটি বাংলাদেশে ইতিহাস হয়ে থাকবে। টিপু মুনশির মতো একজন ব্যবসায়ী বাণিজ্যমন্ত্রী না হলে এই উপলব্ধি হতো না যে দেশে একটি গোল্ড রিফাইনারি দরকার। আমি মনে করি, দেশের ঘরে ঘরে জুয়েলারি কারখানা হবে। বাংলাদেশের স্বর্ণশিল্পীরা পৃথিবীর বিখ্যাত হবেন। পুরো ভারতবর্ষে বাংলাদেশের স্বর্ণশিল্পীরা কাজ করেন। আমাদের জুয়েলারি শিল্প দিয়ে গার্মেন্ট শিল্পকে ছাড়িয়ে যেতে পারব। আমরা যদি শুধু চীন ও ইউরোপে রপ্তানি করতে পারি, তাহলে আমাদের টাকা রাখার জায়গা থাকবে না। গার্মেন্টের দাম কম, স্বর্ণের প্রচুর দাম। এর ভ্যালু অ্যাডিশন প্রচুর। কিছু কিছু স্বর্ণের ভ্যালু অ্যাডিশন ৩০, ৪০ ও ৫০ শতাংশ। যেখানে আমাদের গার্মেন্টের ভ্যালু অ্যাডিশন ৫, ৭ ও ৮ শতাংশ। তাই আমি ব্যবসায়ীদের বলব, আপনারা রপ্তানির দিকে মনোযোগ দিন। ’
আহমেদ আকবর সোবহান আরো বলেন, ‘আমি ব্যবসায়ী মানুষ। অনেক খাতে ব্যবসা করি। আমি বলি, দেশের ৯০.৯৯ শতাংশ ব্যবসায়ী এখন খুশি। আমরা সবাই ভালো ব্যবসা করছি। মানুষ ভালো জীবন যাপন করছে। ভালো কাপড় পরছে। এসব কার বদলে। গত ১৩ বছরে দেশে কত পরিবর্তন হয়েছে আপনারা সবাই জানেন। আপনারা জানতে চান, দেখবেন একজন ব্যবসায়ীও বলবেন না, আমার ব্যবসা খারাপ। সারা দুনিয়ায় কোথাও হাসি নেই। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ পুরো গতিতে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ’
বাজুস সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, ‘আমি বাণিজ্যমন্ত্রী এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, জুয়েলারি শিল্পে অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে প্রধানমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা একবার বসতে পারলে জুয়েলারি ব্যবসায়ী ভাইদের যত সমস্যা আছে তার সমাধান হয়ে যাবে। ’
বাজুস সভাপতি বলেন, ‘আমাদের দেশে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত স্বর্ণ বন্ধক রেখে লোন নেওয়া যেত। এই ধারাটি বন্ধ হয়ে গেছে। এটা আবার চালু করতে ভালো নীতি সহায়তা দরকার। আমরা চাই বাজুসের মাধ্যমে একটি গোল্ড ব্যাংক ও একটি গোল্ড এক্সচেঞ্জ করা হোক। গোল্ড এক্সচেঞ্জ থাকলে সেখানে প্রতিদিন স্বর্ণের দাম নির্ধারণ হবে। আর গোল্ড ব্যাংক গড়ে তুলতে বাংলাদেশ ব্যাংকেরও সহায়তা দরকার। সর্বোপরি আমরা এ খাতটির উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রত্য সহায়তা চাই। তিনি হস্তপে না করলে এই খাতটির উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। ’
এই খাতের উন্নয়নের জন্য ব্যবসায়ীদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বাজুস সভাপতি। তিনি বলেন, ‘স্বর্ণ ব্যবসায়ী ভাইদের কাছে অনুরোধ, আপনারা কারখানা গড়ে তোলায় মনোযোগ দেন। আপনারা সবাই এত দিন ট্রেডিং করেছেন, এখন সময় এসেছে ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলার। আমরা শুধু স্বর্ণ আমদানি করব কেন? রপ্তানির দিকেও যেতে হবে। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে প্রচুর বাংলাদেশি স্বর্ণশিল্পী আছেন। তথারা চান দেশে এসে কাজ করতে। সবাই একটি করে কারখানা গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন। আমদানির পরিবর্তে রপ্তানির পরিকল্পনা করেন। ’
বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, ‘বাইতুল মোকাররমে আমাদের ৫০০ বর্গফুটের একটি অফিস ছিল। আজ বসুন্ধরা সিটিতে এসে দেখলাম ১০ হাজার বর্গফুটের অফিস। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে এটা হয়েছে। তাহলে সামনে জুয়েলারি খাতের কত উন্নতি হবে তা অনুমান করা যায়। আশা করি বর্তমান সভাপতির নেতৃত্বে এ শিল্পে নবীন ও প্রবীণদের নিয়ে দেশে একটি বিপ্লব ঘটবে। ’