মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | জাতীয় | শিরোনাম | স্বাস্থ্য » দেশে বর্তমানে আক্রান্তদের ২০ শতাংশেরই ওমিক্রন
দেশে বর্তমানে আক্রান্তদের ২০ শতাংশেরই ওমিক্রন
দেশে বর্তমানে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ২০ শতাংশের দেহে ওমিক্রন ধরন শনাক্ত হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)-এর জেনােম সিকোয়েন্সিং রিসার্চ প্রজেক্টের প্রধান পৃষ্ঠপােষক (সুপারভাইজার) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মাে. শারফুদ্দিন আহমেদ এ তথ্য জানান।
কেভিড-১৯-এর জেনােম সিকোয়েন্সিং গবেষণার উদ্দেশ্য এর জেনােমের চরিত্র উন্মোচন, মিউটেশনের ধরন এবং বৈশ্বিক কোভিড-১৯ ভাইরাসের জিনােমের সঙ্গে এর আন্তঃসম্পর্ক বের করা এবং বাংলাদেশি কোভিড-১৯ জেনােম ডাটাবেস তৈরি করা। এই রিপোর্ট বিএসএমএমইউ-এর চলমান গবেষণার ছয় মাস ১৫ দিনের ফলাফল, আমরা আশা করি, পরবর্তী
সপ্তাহগুলােতে চলমান হালনাগাদকৃত ফলাফল জানাতে পারব।
২৯ জুন ২০২১ থেকে ৮ জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত কোভিড-১৯ আক্রান্ত সারা দেশব্যাপী রােগীদের ওপর এই গবেষণা পরিচালিত হয়। এই গবেষণায় দেশের সব বিভাগের রিপ্রেজেন্টেটিভ স্যাম্পলিং করা হয়। গবেষণায় মােট ৭৬৯ কোভিড-১৯ পজিটিভ রােগীর ন্যাযযাফ্যারিনজিয়াল সােয়াব স্যাম্পল থেকে নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে করােনা ভাইরাসের জেনােম সিকোয়েন্সিং করা হয়।
বিএসএমএমইউ-এর গবেষণায় ৯ মাস থেকে শুরু করে ৯০ বছরের বয়স পর্যন্ত রােগী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এর মধ্যে ২১ থেকে ৫৮ বছর বয়সের রােগীদের সংখ্যা বেশি। যেহেতু কোনও বয়সসীমাকেই কোভিড ১৯-এর জন্য ইমিউন করছে না, সে হিসেবে শিশুদের মধ্যেও কোভিড সংক্রমণ রয়েছে।
আরও পাওয়া গেছে, কোভিড আক্রান্ত রােগীদের মধ্যে যাদের কো-মরবিডিটি রয়েছে যেমন- ক্যান্সার, শ্বাসতন্ত্রের রােগ, হৃদরােগ, ডায়াবেটিস; তাদের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি পেয়েছিলাম। পাশাপাশি ষাটোর্ধ্ব বয়সের রােগীদের দ্বিতীয়বার সংক্রমণ হলে সে ক্ষেত্রে মৃত্যুঝুঁকি বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে।
কোভিড-১৯-এর জেনােম সিকোয়েন্সিং বিশ্লেষণ গবেষণায় জুলাই ২০২১-এ দেখা যায়, মােট সংক্রমণের প্রায় ৯৮ শতাংশ হচ্ছে ইন্ডিয়ান বা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। ১ শতাংশ হচ্ছে সাউথ আফ্রিকান বা বেটা ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা সংক্রমণ, ১ শতাংশ রােগীর ক্ষেত্রে আমরা পেয়েছি মরিসাস ভ্যারিয়েন্ট অথবা নাইজেরিয়ান ভ্যারিয়েন্ট। জুলাই ২০২১ থেকে ডিসেম্বর ২০২১-এর প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত জিনােম সিকোয়েন্স এ প্রাপ্ত ডাটা অনুযায়ী ৯৯ দশমিক ৩১ শতাংশ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট, একটি করে ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন - আলফা বা ইউকে ভ্যারিয়েন্ট এবং বেটা বা সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট এবং অন্য একটি স্যাম্পল এ শনাক্ত হয় 20B ভ্যারিয়েন্ট, যা SARS-COV-2-এর একটি ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট।
৮ ডিসেম্বর ২০১১ থেকে ৮ জানুয়ারি ২০২২ এ পর্যন্ত সংগৃহীত স্যাম্পলের ২০ শতাংশই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট এবং ৮০ শতাংশ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়। পরবর্তী মাসে এই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট গুণিতক হারে বৃদ্ধির আশঙ্কা করা যাচ্ছে। প্রকৃত ফলাফল আমরা এ মাসেই আপনাদের অবগত করবাে।
ওমিক্রন ভাইরাস ডায়াগনােসিসের জন্য RT-PCR-এর মাধ্যমে ৩টি জিন- S, N2, E দেখা হয় (BBC রিসার্স)। এর মধ্যে S জিনটি ডিটেকটেড না হলে ওমিক্রনের সম্ভাবনা বেশি কিন্তু WIJO Guidlines অনুসারে জিনােম সিকোয়েন্সিং-এর মাধ্যমে করতে হবে।
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট-এর চেয়ে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট-এ অনেক বেশি ইনফেকশন ছড়াচ্ছে বলে প্রতীয়মান। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ভাইরাসের জেনেটিক কোড এ ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট এর চেয়ে বেশি ডিলিশন মিউটেশন পাওয়া গেছে, যার বেশিরভাগ ভাইরাসটির স্পাইক প্রােটিন রয়েছে। এই স্পাইক প্রােটিন-এর ওপর ভিত্তি করে বেশিরভাগ ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়। স্পাইক প্রােটিন-এর
বদলের জন্যই প্রচলিত ভ্যাকসিনেশনের পরেও ওমিক্রন সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকে যায়।
আমাদের জিনােম সিকোয়েন্সিং-এ কোনো কোনাে ওমিক্রন আক্রান্ত রােগীর দুই ডােজ ভ্যাকসিন দেওয়া ছিল।
তৃতীয়বারের মতো সংক্রমণ রােগী পাওয়া গেছে
হাসপাতালে ভর্তি রােগী থেকে সংগৃহীত স্যাম্পলে আমার জিনােম সিকোয়েন্স করে পেয়েছি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। যেহেতু ওমিক্রন সংক্রমণে মৃদু উপসর্গ হয়েছে, সেটা হাসপাতালে ভর্তি রােগীতে ওমিক্রন না পাবার কারণ হতে পারে।
পাশাপাশি মৃদু উপসর্গের রােগীদের মধ্যে টেস্ট না করার প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে। তাই আমাদের প্রাপ্ত ফলাফলের চেয়েও অনেক বেশি ওমিক্রন আক্রান্ত রােগী আনডিটেক্টেড অবস্থায় আছে বলে মনে করছি।
প্রত্যেক করােনা ভাইরাস ভ্যারিয়েন্ট বিপজ্জনক এবং তা মারাত্মক অসুস্থতা এমনকি মৃত্যুও কারণও হতে পারে। পাশাপাশি ভাইরাসের নিয়মিত মিউটেশনের আমাদের প্রচলিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঝুঁকিপূর্ণ করতে পাওে তাই করােনা সংক্রমণ প্রতিরােধে স্বাস্থ্যবিধি ও টিকা গ্রহণ করতে হবে।
করােনা জেনােম সিকোয়েন্সিং বিএসএমএমইউ-এর সম্মানিত গবেষকবৃন্দ-
সুপারভাইজার: অধ্যাপক ডা. মো. শরফুদ্দিন আহমেদ, মাননীয় উপাচার্য, বিএসএমএমইউ।
প্রধান গবেষক ডা. লায়লা আনজুমান বানু, অধ্যাপক, জেনেটিক্স এন্ড মলিকিউলার বায়ােলজি ও চেয়ারম্যান, এনাটমি বিভাগ, বিএসএমএমইউ ।
করােনা জেনােম সিকোয়েন্সিং বিএসএমএমইউ-এর সাথে যুক্ত গবেষণা টিম এর অন্যান্য সদস্যবৃন্দ-
ডা. জিন্নাত আরা ইয়াসমীন, সহযােগী অধ্যাপক, এনাটমি বিভাগ, ডা, বিষ্ণু পদ দে, সহকারী অধ্যাপক, প্যাথলজি বিভাগ, ডা. মাে। মহিউদ্দিন মাসুম, সহকারী অধ্যাপক, এনাটমি বিভাগ, ডা, ইলােরা শারমিন, সহকারী অধ্যাপক, ফার্মাকোলজি বিভাগ, ডা, আবিদা সুলতানা, রেসিডেন্ট, ফেইজ- বি, এনাটমি বিভাগ, ভা, নাহিদ আজমীন, এমফিল, থিসিস, এনাটমি বিভাগ, অধ্যাপক ডা. আফজালুন নেছা, অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, ভাইরােলজি বিভাগ, সােয়েব হােসেন, মেডিক্যাল টেকনােলজিস্ট, জেনােম রিসার্চ সেন্টার, বিএসএমএমইউ, শ্যামল চন্দ্র বিশ্বাস, ল্যাব এ্যাটেনডেন্ট, জেনােম রিসার্চ সেন্টার, বিএসএমএমইউ, অমল গনপতি, ফ্ল্যাবােটমিষ্ট, ল্যাবরেটরি সার্ভিস সেন্টার, বিএসএমএমইউ। করােনা জেনােম সিকোয়েন্সিং বিভাগ।