সোমবার, ১০ জানুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | ঢাকা | শিক্ষা ও প্রযুক্তি | শিরোনাম | স্বাস্থ্য » ‘এক’ কারণে বন্ধ হতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান!
‘এক’ কারণে বন্ধ হতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান!
মহামারি করোনা শুরুর পর প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরপর গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর সারা দেশে একযোগে খুলে দেওয়া হয় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এছাড়া ১৫ অক্টোবরের পর ধারাবাহিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্তের কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী।
কয়েক মাস করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় থাকলেও পরবর্তীতে চোখ রাঙাতে থাকে নতুন ধরণ ডেল্টা ও ওমিক্রন। বর্তমানে ভয়াবহ এক পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব। এছাড়া দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। ফলে আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ইতোমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হবে নাকি খোলা থাকবে তা নিয়ে সরব সরকার। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও পরামর্শক কমিটি এ নিয়ে কথা-বার্তা বলেছে। তাদের একটিই বক্তব্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখলে যদি সংক্রমণ বাড়ে বা দেশে সংক্রমণ যদি আবারও আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পায় তাহলে বন্ধ করে দেওয়া হবে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
এ বিষয়ে গতকাল রোববার (৯ জানুয়ারি) এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যতক্ষণ সম্ভব ততক্ষণ সরাসরি শিক্ষা কার্যক্রম চলবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের বিষয়ে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, যদি মনে হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখলে সংক্রমণ বাড়বে, তখন আমরা বন্ধ করে দেব হয়তো। এছাড়া যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করতেই হয়, তখন আমরা ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করে দেব। কোনো গুজবে কান দিবেন না। কিন্তু যতক্ষণ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে আমরা বন্ধ করব না। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরে যাক।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, হুট করে নয়, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামত অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আজ কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সঙ্গে আমাদের মিটিং আছে। শিক্ষার্থীদের করোনার টিকাদান কার্যক্রম জোরেশোরে চলছে। সবাইকে টিকার আওতায় নিয়ে এসে কিভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যায়, সে চেষ্টাই করছি আমরা।
এদিকে গতকাল রোববার (৯ জানুয়ারি) রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির বৈঠকে অনুষ্ঠত হয়।
বৈঠক শেষে পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, বর্তমানে যেভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় চলছে সেভাবেই চলবে।
তিনি বলেন, যেহেতু এখন সংক্রমণের হার ৬ শতাংশের বেশি, তাই বিশেষ বিবেচনায় রেখে এই ব্যবস্থাগুলো নিয়ে স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে চলছে সেভাবেই চলবে। তবে যদি কোনও কারণে সংক্রমণ পরিস্থিতি খারাপের দিকে যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করার বিষয়ে চিন্তা করা হবে।
ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, ‘স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় যদি আমরা বন্ধ করে দেই এবারও, তাহলে ইম্পেক্ট (প্রভাব) আবার অনেক বেশি। আবার খোলা রেখে যদি সংক্রমণ বেড়ে যায় তাহলেও সমস্যা।’
বর্তমান পরিস্থিতিতে লকডাউন হবে কি না তা নিয়ে কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, ওমিক্রনে মৃত্যুহার কম হওয়ায় আপাতত সরকার লকডাউন নিয়ে ভাবছে না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের মানুষদের বিদেশ যাওয়া আসার বিষয়ে নিরুৎসাহিত করছি। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ভ্রমণে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে। বলেন, অনেক মানুষ বেশি সাবধান থাকতে চায় তাই তারা লকডাউন চাচ্ছেন। তবে ভালো খবর হচ্ছে ওমিক্রনের আক্রান্তদের মৃত্যুহার অনেক কম।
এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য কঠোর সতর্কবার্তা দিয়েছেন। এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, সংক্রমণ অতিমাত্রায়, অতি দ্রুতগতি ছাড়াচ্ছে এক্ষেত্রে আমাদের কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা আগেই বলেছিলাম গণজমায়েত কমাতে হবে, সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী করতে হবে। কিন্তু আফসোসের বিষয়, কোনো একটা লোকও এসব বিষয়ে কর্ণপাত করেনি। যার ফলে দেশে সংক্রমণের হার বাড়ছে। একই সঙ্গে হাসপাতালের রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। সংক্রমণ রোধে প্রজ্ঞাপন জারির কথাও বলেন তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা যতই নির্দেশনা পাঠাই না কেন, জনগণের ওপর নির্ভর করবে তারা এটা মানছে কি না। কাজেই নিজেদেরই সচেতন হতে হবে। শিশুরা সংক্রমিত হচ্ছে, এমনকি বয়স্করাও সংক্রমিত হচ্ছে। সংক্রমণ মোকাবিলায় আমাদের দায়িত্বশীল হতে হবে।
এছাড়া দেশে প্রতিনিয়ত সংক্রমণ বাড়ার পেছনে ডেল্টা ও ওমিক্রন দুটি ধরনেরই প্রভাব রয়েছে। অন্তত এক মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পর্যটনকেন্দ্র, নির্বাচনসহ জনসমাগমস্থল বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এক মাসের জন্য বন্ধ রাখা যেতে পারে। সমাজে যেসব বিষয়ে জনসমাগম হয়ে থাকে, সেসব কিছুই আপাতত কমপক্ষে এক মাসের জন্য স্থগিত করে দেওয়া উচিত।
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, এখন যে সংক্রমণ হচ্ছে, তার একটা সংখ্যা নিশ্চিতভাবেই ওমিক্রন দিয়ে শনাক্ত হচ্ছে। ওমিক্রন ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এখনো ডেল্টাকে রিপ্লেস করতে পারেনি। এখনও পর্যন্ত ডেল্টাই প্রধানত বিস্তার করছে।
তবে আক্রান্তের হার বাড়ার পেছনে দীর্ঘদিন ধরে মানুষের স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষাসহ সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে উপচেপড়া ভিড়কে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।