বুধবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | জাতীয় | ঢাকা | শিরোনাম » নিষ্পত্তি হওয়া দরখাস্ত পুনর্বিবেচনার ক্ষমতা আমার নাই : আইনমন্ত্রী
নিষ্পত্তি হওয়া দরখাস্ত পুনর্বিবেচনার ক্ষমতা আমার নাই : আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আইনে আছে শর্তযুক্ত, শর্তমুক্ত। খালেদা জিয়ার দরখাস্ত শর্তযুক্ত শর্তে নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। সরকারকে আইনের মধ্যে থেকে কাজ করতে হয়। অনেকে বলছেন, ওই দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগের কথা। কিন্তু সেই দরখাস্ত নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। আমি বারবার বলে আসছি, একটা নিষ্পত্তি করা দরখাস্ত, আইন অনুসারে পুনর্বিবেচনা করার ক্ষমতা আমার নাই।
বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচা বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) বার্ষিক সাধারণ সভায় এ কথা বলেন তিনি।
ক্র্যাব সভাপতি মিজান মালিকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আরিফের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, যে মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন সেটি কিন্তু আওয়ামী লীগ করে নাই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মামলা হয়েছে। ২০১২ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন সেই মামলার প্রতিবেদন দেয়। মামলাটির বিচার কার্যক্রম চলাকালীন তারা অন্তত দশবার হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে আবেদন করেছে মামলা স্থগিত করার জন্য। অনেক বিচারকের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেছেন। সব কিছুর পর রায় হয়েছে। একটি মামলায় বিচারিক আদালতে সাজা পাঁচ বছর, হাইকোর্টে সেটি বেড়ে ১০ বছর হয়েছে। আরেকটা মামলায় পরে খালেদা জিয়ার সাত বছর সাজা হয়েছে।
আইনমন্ত্রী বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) যখন সাজা ভোগ করছিলেন তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দুটি বিশেষ শর্তে সাজা স্থগিত রেখে মুক্তি দেন।
তিনি আরও বলেন, আইনে আছে শর্তযুক্ত, শর্তমুক্ত। খালেদা জিয়ার দরখাস্ত নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। সরকারকে আইনের মধ্যে থেকে কাজ করতে হয়। এই যেটা দরখাস্ত সেটি নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। আমার কথা হলো আমি যেটা বারবার বলে আসছি, একটা নিষ্পত্তি করা দরখাস্ত, আইনে পুনর্বিবেচনা করার ক্ষমতা আমার নাই।
তবে মন্ত্রী বলেন, পুনরায় যদি একটি দরখাস্ত করা হয় সেটি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আমি এখানেও বলছি, সংসদেও বলেছি। শর্তযুক্ত শর্তে তিনি সাজা স্থগিতে যে মুক্তি পেয়েছেন সেটি যদি না মেনে পুনরায় জেলের যেতে চান সেটাও হতে পারে। কিন্তু এই অবস্থায় ফৌজদারি কার্যবিধির কোথাও নাই যে, তাকে আমরা আগের দরখাস্ত বিবেচনা করে বিদেশ যাবার সুবিধা করে দিতে পারি, সেটা নাই।
অনেকে বলছেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা কারো বিদেশ যাওয়া বন্ধ করে না। কিন্তু আমি কখনো বলি নাই যে তাকে (খালেদা জিয়া) বিদেশে পাঠানো যাবে না। কিন্তু একবার নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত আবার পুনর্বিবেচনা সুযোগ ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় নাই।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, এভারকেয়ার হাসপাতাল তার (খালেদা জিয়া) প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তারা সম্প্রতি সর্বশেষ টেকনোলজির একটি ক্যাপসুল আমদানি করেছেন। যেটা খেয়ে ফেললে ভেতরে গিয়ে ক্যামেরা কাজ করবে। ভেতরের সব অবস্থান ক্যামেরাবন্দি হবে। আমি তার সর্বশেষ অবস্থা জানি না, তবে যতটুকু জানি তার শারীরিক অবস্থা আগের চাইতে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এখানে তিনি যতোটুকু সম্ভব সুচিকিৎসা পাচ্ছেন। সেখানে সরকারের কোনো হাত নেই।
নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত একপ্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা আছে যে, নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। গত দুইবার নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটা সিদ্ধান্তে এসেছিলেন যে, সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। দলগুলো নামগুলো দিতে পারবেন।
তিনি বলেন, ১০টি নাম সার্চ কমিটি সুপারিশ করতে পারবে, সেই দশটি নাম থেকে পাঁচজনকে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নিয়োগ দেবেন। এটা অ্যাক্টের উপরে হয়েছে, এটা আইন না। এটার উপরে দুটি নির্বাচন হয়েছে। তবে আমিও মনে করি, আইন হওয়া উচিত। সুজনের প্রতিনিধিও গিয়েছিল। আমি পরিষ্কার বলেছি, নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত আইন হওয়া দরকার। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে সব সংসদ সদস্যকে সংসদে পাচ্ছিলাম না। সংসদ সদস্যদের পাশ কাটিয়ে কোনো অর্ডিন্যান্স করব না।
তিনি আরও বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি ইতোমধ্যে ডায়ালগ শুরু করেছেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি এই নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এরমধ্যে যেহেতু সংসদ আইন করতে পারবে না, আগে যে পদ্ধতিতে হয়েছে সেই নিয়মে হতে পারে, অথবা ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি রয়েছে। এই কমিটি নির্বাচন কমিশন ১০ জনকে নির্বাচন করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে পারেন। সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নাম পাঠাতে পারেন। আমি মনে করি নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই।
বিচারপতি নিয়োগে কোনো বিষয় প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, দুটি বিষয়ে কখনো রাষ্ট্রপতিকে জিজ্ঞাসা করতে হয় না বা পারেন না। এটা তার সর্বময় ক্ষমতা, এক- প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করা এবং দ্বিতীয়ত, বিচারপতি নিয়োগ করা। যে কাজটা রাষ্ট্রপতির, সেটি আমি করে বলব! আমি তো সরকারের মন্ত্রী। বিচারপতি নিয়োগে রাষ্ট্রপতি তার সুবিবেচনা ও আইন অনুযায়ী ক্ষমতার প্রয়োগ করে যা ভালো মনে হবে সেই সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে আমি মনে করি, আপিল বিভাগে অনেকেরই প্রধান বিচারপতি হবার যোগ্যতা রয়েছে। আর সরকার এসব নিয়ে কোনো চিন্তায় নেই।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, কোনো একটা ঘটনা ঘটলে আমরা নিজস্ব চ্যানেলে খবর নিই, খবর দিতাম। এখন সাংবাদিকরা অনেক কিছু জানছে, আবার সোশ্যাল মিডিয়াতে আগে চলে আসছে। যে কারণে সাংবাদিকতাও চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। সাংবাদিকদের সুবিধার জন্য র্যাব মিডিয়া সেন্টার কারওয়ান বাজারে আনা হয়েছে।
যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। এদেশের নির্যাতিত মানুষের পক্ষে, নির্যাতনকারীদের বিপক্ষে, বস্তুনিষ্ঠতার সঙ্গে। সব কথাই আমরা বলব, লিখব, তবে আমরা ন্যায়ের পক্ষে থেকে। রিপোর্টারদের দায়িত্ব অনেক বেশি। আজ যারা ক্রাইম বিটে কাজ করছেন তাদের দায়িত্ব অনেক বেশি। লেখনী, সংবাদ উপস্থাপনে আমরা এমন কিছু করব না যাতে দেশের ক্ষতি হয়। পাঠক, দর্শকের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে কাজ করতে হবে। আমাদের শেষ পর্যন্ত ভরসা পাঠকের আস্থা-বিশ্বাস। যদি আমরা ব্যর্থ হই তাহলে পরিহাসে পরিণত হবো।
তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে। যখন ক্ষতিগ্রস্ত হই তখন মনে হয়, প্রয়োজন নেই, দেশের জন্য প্রয়োজন আছে। কিন্তু এই সুযোগে কোনো সাংবাদিক যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, এই আইনের যেন অহেতুক প্রয়োগ না হয়।
তিনি আরও বলেন, অপমানজনক হলেই আমাদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা হয়ে যায়। যেকেউ কারো পক্ষে মামলা করেন বসেন, আর হুলিয়া, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। অথচ আমাদের হয়রানির মধ্যে পড়তে হয়। বিষয়টি নিশ্চয় আইনমন্ত্রী বিবেচনা করবেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) কর্নেল আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু।