সোমবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | ছবি গ্যালারী | ঢাকা | শিরোনাম » মেডিকেল ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় রফতানি পণ্য: বাণিজ্যমন্ত্রী
মেডিকেল ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় রফতানি পণ্য: বাণিজ্যমন্ত্রী
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, কোভিড অতিমারির কারণে বৈশি^ক বাজারে মেডিকেল ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের (এমপিপিই) চাহিদা বেড়ে ২০২১ সালে সামগ্রিক বৈশি^ক চাহিদার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৯৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আগামীতে কোভিডের প্রভাব কমে গেলেও বিশ্ব বাজারে এর যথেষ্ট চাহিদা থাকবে। এই পরিস্থিতিতে এমপিপিইকে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময় রপ্তানি পণ্য হিসেবে সরকার বিবেচনা করছে।
সোমবার সরকারি-বেসরকারি সংলাপের প্ল্যাটফর্ম বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) আয়োজিত ‘প্রবৃদ্ধির সুযোগ সম্প্রসারণ: মেডিকেল ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (এমপিপিই) উৎপাদন ও রপ্তানি’ শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডেলয়েট এর সহযোগিতায় বিল্ড ওয়েবিনারের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
ওয়েবিনারে অন্যান্যের মধ্যে বিল্ড চেয়ারপার্সন আবুল কাসেম খান, রপ্তানিমূখী পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান,আইএফসির ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর নুজহাত আনোয়ার,ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহাবুবুর রহমান, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুারে্যর ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি শামীম আহমেদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের সহযোগি অধ্যাপক ড. মহিদুস সামাদ খান প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
বিল্ড ও ডেলয়েট পরিচালিত দু’টি গবেষণা প্রতিবেদন অনুষ্ঠানে প্রকাশ করা হয়।
বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফেরদৌস আরা বেগম এবং ডেলয়েট এর পার্টনার শুবাহাম গুপ্তা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এমপিপিইর বৈশি^ক বাজারের তিন থেকে পাঁচ শতাংশ মার্কেট শেয়ার দখল করা মানে বাংলাদেশের রফতানিতে বড় প্রবৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হওয়া। কেবলমাত্র যুক্তরাষ্ট্র বা চীনের মত বড় অর্থনীতির দেশ নয়, মালয়েশিয়া কিংবা ভিয়েতনামের মত উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশও এমপিপিই তৈরি ও রপ্তানিতে ভাল করছে। এসব দেশ মানসম্মত পণ্য তৈরি করে বড় বড় বাজারে প্রবেশে করেছে। বাংলাদেশকেও এখন মানসম্মত পণ্য তৈরি সেসব সম্ভাবনাময় বাজারে ঢুকতে হবে।
টিপু মুনশি বলেন, টেকসই রফতানি নিশ্চিতকরণে সরকার বাজার ও পণ্য বৈচিত্র্যকরণে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। সেখানে এমপিপিই পণ্য বৈচিত্র্যকরণ ও রফতানি আয় সম্প্রসারণে বিশেষ অবদান রাখতে পারে বলে দূঢ়ভাবে বিশ^াস করি। এমপিপিই পণ্য উৎপাদন ও রফতানির ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অন্যান্য সংস্থা অগ্রাধিকারভিত্তিতে সহযোগিতা দেবে বলে তিনি জানান।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, বৈশি^ক বাজারের চাহিদার সুযোগ কাজে লাগাতে কৌশলগত উপায়ে এমপিপিই খাতকে সম্প্রসারণ করতে হবে। তিনি এ খাতের উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি খাতের সমন্বয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বিল্ড চেয়ারপারসন আবুল কাসেম খান বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বর্তমানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো তৈরি পোশাক খাতের উপর থেকে অতিনির্ভরতা কমিয়ে রপ্তানি বৈচিত্র্য নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে আমাদের জন্য সবচেয়ে ভালো কৌশল হলো নিজেদের শক্তির জায়গাগুলোতে বেশি গুরুত্বারোপ করা। বাংলাদেশ যেহেতু তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল, প্লাস্টিক এবং ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে আগে থেকেই স্বয়ংসম্পূর্ণ, সেক্ষেত্রে আমরা এমপিপিই উৎপাদনের ক্ষেত্রে অনেকাংশেই এগিয়ে আছি। সুতরাং রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণে এমপিপিই খাতে জোর দেয়া আমাদের জন্য অবশ্যই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
আইএফসির ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর নুজহাত আনোয়ার বলেন, কোভিডের প্রভাব থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে ব্যবসায় খাতকে উৎপাদন ও রপ্তানি আয় বাড়াতে নানা উদ্ভাবনী ও টেকসই উপায় খুঁজে বের করতে হবে।
বিল্ডের গবেষণা প্রতিবেদনের উপর উপস্থাপনা প্রদান করেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফেরদৌস আরা বেগম। উপস্থাপনায় তিনি বলেন, বাংলাদেশ এরই মধ্যে ১২টি এমপিপিই পণ্য উৎপাদনে যথেষ্ট অগ্রগতি সাধন করেছে, যার মধ্যে ৮টি পণ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তালিকায় রয়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর নাগাদ, ৪৩টি প্রতিষ্ঠান সার্জিক্যাল মাস্কের জন্য এবং ৫৭টি প্রতিষ্ঠান পিপিই গাউনের জন্য ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (ডিজিডিএ) কাছ থেকে নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) লাভ করেছে।
তিনি জানান, এমপিপিই পণ্যের মান বজায় রাখার ক্ষেত্রে বড় ধরনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যার ফলে এসব পণ্য উৎপাদনে শক্তিশালী কারিগরি দক্ষতা আবশ্যক।
সুবাহাম গুপ্তা তার প্রবন্ধে বলেন, এমপিপিই পণ্য উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি ও বাজার উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে নেতৃত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে বেসরকারি খাতকে টেকনিক্যাল ও টেস্টিং সম্পর্কিত নলেজ ব্যবস্থাপনা, মার্কেট ইনটিলিজেন্স ও শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোর সাথে যৌথ উদ্যোগে বৈশি^ক যোগাযোগ বৃদ্ধিতে মনযোগি হতে হবে।