শুক্রবার, ২৬ নভেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | ধর্ম | শিরোনাম » মসজিদ তৈরি ও সংরক্ষণ যে কারণে মর্যাদাপূর্ণ
মসজিদ তৈরি ও সংরক্ষণ যে কারণে মর্যাদাপূর্ণ
মহান আল্লাহর আনুগত্যের ব্যাবহারিক প্রশিক্ষণ ও সামষ্টিক আত্ম-নিবেদনের স্থান ‘মসজিদ’, ‘বায়তুল্লাহ’ বা আল্লাহর ঘর। পবিত্র কোরআনে আছে, ‘নিশ্চয়ই মসজিদসমূহ আল্লাহর।’ (সুরা : জিন, আয়াত : ১৮)
মসজিদকে ভালোবাসা, মসজিদে বেশি সময় অবস্থান, মসজিদ পবিত্র-পরিচ্ছন্ন, মসজিদের উন্নতি সাধন, মসজিদের আদব রক্ষা করা ইত্যাদি মসজিদের হক ও মসজিদ আবাদ রাখার শর্ত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘প্রথম দিন থেকেই মসজিদের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে তাকওয়ার ওপর…।’ (তাওবা, আয়াত : ১০৮)
ইসলামের শর্ত মেনে যে মসজিদ নির্মিত হয়, স্থান সংকুলান না হওয়া, ভগ্নদশা, জড়াজীর্ণাবস্থা ইত্যাদি গুরুতর সমস্যা ছাড়া তা ভেঙে ফেলা জায়েজ নয়। তবে পুরনো মসজিদের সংস্কারে অসুবিধা নেই।’ (রদ্দুল মুহতার : ১৪/৪৩২)
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহর কঠোর হুঁশিয়ারি, ‘ওই ব্যক্তির চেয়ে অধিক অত্যাচারী আর কে আছে, যে আল্লাহর মসজিদসমূহে আল্লাহর জিকির (ও ইবাদত) করতে বাধা দেয় এবং সেগুলো নষ্ট ও বিরান করতে চেষ্টা করে?’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১১৪)।
মসজিদ আবাদ তথা সম্মান ও পবিত্রতার তাৎপর্য প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা (ঈমানদাররা) এ রকম ঘরসমূহে (ইবাদত-বন্দেগি করে) যেগুলোর আদব-সম্মান রক্ষা করার জন্য এবং যেগুলোতে আল্লাহর জিকর করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৩৬)
মসজিদ নির্মাণ, সংরক্ষণ অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত ও সৌভাগ্যের বিষয়। প্রিয়নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি শুধু আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য (অন্য কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে নয়) মসজিদ তৈরি করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে ওইরূপ ঘর তৈরি করবেন।’ (বুখারি)
এ প্রসঙ্গে হজরত জাবির ইবনু আব্দুল্লাহর (রা.) এক বর্ণনায় আছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো মসজিদ তৈরি করবে—হোক না তা ‘কাতাত’ পাখির বাসার সমান বা তার চেয়েও ছোট, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করবেন।’
হাদিসের ব্যাখ্যাকারীদের সিদ্ধান্ত হলো, মসজিদ নির্মাণে সাহায্য-সহায়তা মসজিদ নির্মাণ সমতুল্য ফলদায়ী পুণ্যময় ইবাদত ও মর্যাদাপূর্ণ। প্রিয়নবী (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য মসজিদ নির্মাণ করবে, আল্লাহ তার জন্য (জান্নাতে) একটি ঘর তৈরি করবেন, যা তার তুলনায় দৈর্ঘ-প্রস্থে বড় হবে।’ (আহমদ)
আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, ‘একজন কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা ছিল। সে মসজিদ ঝাড়ু দিত। এক রাতে সে মারা গেল। সকালে যখন তা রাসুলকে (সা.) জানানো হলো, তখন তিনি (সা.) বলেন, ‘তোমরা আমাকে রাতে জানাওনি কেন?’ তারপর তিনি (সা.) সাহাবিদের নিয়ে তার কবরের পাশে গেলেন, (জানাজার) তাকবির পড়লেন এবং তার জন্য দোয়া করলেন।’ (ইবনু মাজাহ)
এতে বোঝা গেল, মসজিদ ঝাড়ু দেওয়াও বরকতময়, স্বয়ং নবী করিম (সা.) ওই নিগ্রো মহিলার জন্য দোয়া করেছিলেন।
‘ইসলামী শরিয়া’ অনুযায়ী, যে স্থানে একবার মসজিদ হয়ে যায় তা কিয়ামত পর্যন্তই মসজিদ হিসেবে গণ্য হবে’। এছাড়া যেখানে নামাজ আদায় করা হয়েছে, ওই স্থান অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করাও অবৈধ। (সুরা বাকারার ১১৪ নম্বর আয়াত, মুসলিম শরিফের প্রাসঙ্গিক অধ্যায়, ফাতহুল কাদির, ফাতওয়া রশিদিয়া : ৫/৪৪৬, আদাবুল মাসজিদ : ৩৯, আশরাফুল ফাতওয়া : ৩/৩২৮ ইত্যাদি)
হানাফি মাজহাব মতে যেসব মসজিদের কার্যক্রমে জামে মসজিদের শর্ত ও বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান, ওই সব মসজিদ স্ব-স্থানে বিদ্যমান অবস্থায় আবাদ রাখা একান্ত জরুরি। জড়াজীর্ণ মসজিদের সংস্কার ও মুসল্লিদের ইবাদতের জন্য অধিকতর উপযোগী করা ‘জরুরিয়াতে দ্বিন’ বা ধর্মীয় বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ কাজের অংশ। মসজিদ পবিত্র স্থান। যেখানে নামাজ আদায় করা হয়েছে, তার হেফাজত করা একটি ঈমানী দায়িত্ব।
মসজিদ স্থানান্তর অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। মসজিদ এক স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে, চাইলেই ওই মসজিদ স্থানান্তর করা যায় না। সুরা বনি ইসরাঈলের প্রথম আয়াতে উল্লিখিত ‘মসজিদে আকসা’ বা ‘বায়তুল মুকাদ্দাস’, ভারতের বাবরি মসজিদ ও বিশ্বের অন্যান্য স্থানের বিপন্ন, বিধ্বস্ত, বিলুপ্ত মসজিদ উদ্ধার ও রক্ষায় মুসলমানদের দীর্ঘ সংগ্রামের মূল প্রেরণা হলো, মসজিদ স্থানান্তরের বিরুদ্ধে মুসলিম উম্মাহর সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত ও অনড় অবস্থান।