শনিবার, ২০ নভেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | ধর্ম | শিরোনাম » ফেরেশতারা যাদের কল্যাণে দোয়া করেন
ফেরেশতারা যাদের কল্যাণে দোয়া করেন
মহান আল্লাহর রহস্যময় সৃষ্টি ফেরেশতা। যারা সার্বক্ষণিক মহান আল্লাহর নির্দেশ পালনে ব্যস্ত থাকে। কিছু ফেরেশতা এমন আছে, যারা মহান আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের জন্য দোয়া করতে থাকে। আজকে আমরা সে আমলগুলো সম্পর্কে জানব, যে আমলগুলো করলে ফেরেশতাদের দোয়া পাওয়া যায়।
১. সৎপথে চলা : যারা ঈমান আনে, আল্লাহর নির্দেশ পালনকরত সৎপথে চলে এবং আল্লাহর কাছে তাওবা করে, আল্লাহর ফেরেশতারা তাদের জন্য দোয়া করতে থাকেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আরশ ধারণ করে আছে এবং যারা এর চারপাশে আছে, তারা তাদের রবের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে প্রশংসার সঙ্গে এবং তার ওপর ঈমান রাখে, আর মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে, হে আমাদের রব, আপনি দয়া ও জ্ঞান দ্বারা সব কিছুকে পরিব্যাপ্ত করে রেখেছেন। অতএব যারা তাওবা করে এবং আপনার পথ অবলম্বন করে, আপনি তাদের ক্ষমা করুন। আর জাহান্নামের শাস্তি থেকে আপনি তাদের রক্ষা করুন।’ (সুরা গাফির, আয়াত : ৭)
২. জামাতে নামাজ আদায় : যারা মসজিদে গিয়ে জামাতের সহিত নামাজ আদায় করে, ফেরেশতারা তাদের জন্যও দোয়া করেন। এদের তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন : এক. যারা মসজিদে প্রথম কাতারে নামাজ আদায় করে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৯৮৭)। দুই . যারা কাতারের ডান দিকে নামাজ পড়ে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫৭৮)। তিন. যারা কাতারের মাঝখানে খালি জায়গা পূরণ করে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৯৮৫)
৩. দ্বিনি শিক্ষায় ব্যস্ত : রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা রহমতের দোয়া করেন, যারা মানুষকে কল্যাণকর বিষয় (দ্বিনি জ্ঞান) শেখায়। এমনকি গর্তের পিপীলিকা ও সাগরের মাছ তাদের জন্য রহমত ও মাগফিরাতের দোয়া করে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৬০৯)
৪. রোগীর শুশ্রূষাকারী : রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো মুসলিম যদি অন্য কোনো মুসলিম রোগীর সেবা-যত্ন করে তাহলে আল্লাহ তাআলা তার কাছে ৭০ হাজার ফেরেশতা প্রেরণ করেন। এসব ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। সে ব্যক্তি দিনের যেকোনো সময় রোগীর পরিচর্যা করে, সন্ধ্যা পর্যন্ত ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করে। অনুরূপ যে ব্যক্তি রাতের যেকোনো সময় রোগীর পরিচর্যা করে, সকাল পর্যন্ত তারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে।’ (মুসতাদরাক হাকেম, ইবনে হিব্বান ও সহিহ তারগিব ওয়াত তারহিব : ৩/১৯৭)
৫. রাসুল (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ : আবদুল্লাহ বিন আমের বিন রাবিয়া তাঁর পিতা (আমের) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, আমি রাসুল (সা.)-কে মিম্বরে বক্তব্য দিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি দরুদ পেশ করবে ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করবে। তারা ততক্ষণ পর্যন্ত দোয়া করতে থাকবে যতক্ষণ সে দরুদ পেশ করতে থাকে। সুতরাং কম হোক বেশি হোক, যার ইচ্ছা সে দরুদ পড়তে পারে।’ (সহিহুল জামে, হাদিস : ৫৭৪৪)
৬. মুসলিম ভাইয়ের জন্য দোয়া : রাসুল (সা.) বলেছেন, কোনো মুসলিম তার অনুপস্থিত ভাইয়ের জন্য দোয়া করলে তা কবুল করা হয় এবং তার মাথার কাছে একজন ফেরেশতা নিযুক্ত থাকে। যখন সে তার ভাইয়ের জন্য কল্যাণের দোয়া করে তখন নিযুক্ত ফেরেশতা বলে, আমিন। অর্থাত্ ‘হে আল্লাহ, কবুল করুন এবং তোমার জন্য অনুরূপ (তোমার ভাইয়ের জন্য যা চাইলে আল্লাহ তোমাকেও তা দান করুন)।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৮৮)
৭. নিয়মিত দান-সদকাকারী : রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘প্রতি সকালে মানুষ যখন ঘুম থেকে উঠে দুজন ফেরেশতা আসেন। তাঁদের একজন বলেন, ‘হে আল্লাহ, খরচকারীর ধন আরো বাড়িয়ে দিন।’ আর দ্বিতীয়জন বলেন, ‘হে আল্লাহ, কৃপণকে ধ্বংস করে দিন।’ (মুসলিম, হাদিস : ২২২৬)
৮. অজু করে ঘুমালে : রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি অজু করে রাতযাপন করেন তাঁর শিয়রে একজন ফেরেশতা রাতযাপন করেন। তিনি যখন ঘুম থেকে জাগ্রত হন (কোনো কোনো বর্ণনা মতে, যতবার ঘুমের ভেতর নড়াচড়া করেন) তখন ওই ফেরেশতা বলতে থাকেন, হে আল্লাহ, অমুককে মাফ করে দিন। কেননা তিনি পবিত্র অবস্থায় রাতযাপন করেছেন।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ১০৫১)
৯. রোজা রাখতে সাহরি গ্রহণ : রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘সাহরি খাওয়া বরকতের বিষয়। তোমরা তা পরিত্যাগ কোরো না। এমনকি এক ঢোক পানি পান করে হলেও (সাহরি খাও)। কারণ যারা সাহরি খায় আল্লাহ তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা তাদের জন্য দোয়া করে।’ (মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ১১৮৭)
মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।