শনিবার, ২৮ আগস্ট ২০২১
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | শিরোনাম | সম্পাদকীয় » সীমান্ত সুরক্ষিত রাখা যাচ্ছে না কেন: ভয়ংকর ইয়াবা-আইস
সীমান্ত সুরক্ষিত রাখা যাচ্ছে না কেন: ভয়ংকর ইয়াবা-আইস
‘মিয়ানমার থেকে ইয়াবার পথেই আসছে আইস’ শিরোনামে গণমাধ্যমে যে খবর বের হয়েছে, তাতে সরকারের মাদকবিরোধী অভিযানের ব্যর্থতাই ফুটে উঠেছে। মাদকের বিরুদ্ধে সরকার ধারাবাহিক অভিযান চালাচ্ছে, বিপুলসংখ্যক মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হচ্ছে, কিন্তু দেশে মাদকের প্রকোপ কমেনি।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসি জানায়, বাংলাদেশে বর্তমানে ৭০ লাখের বেশি মানুষ মাদক সেবন বা ব্যবহার করে থাকে। একসময় ধারণা করা হতো, কেবল হতাশাগ্রস্ত তরুণেরাই মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে থাকেন; কিন্তু বিভিন্ন অভিযানে যেসব মাদকসেবী ধরা পড়েছে, তাতে দেখা যায় সব বয়স ও শ্রেণি-পেশার মানুষ মাদক নিয়ে থাকেন। এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক সদস্যও এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন।
বাংলাদেশে যে বিপুল পরিমাণ মাদক ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর কোনোটা দেশে তৈরি নয়। দেশের বাইরে থেকে জল, স্থল ও আকাশপথে এসব মাদক আসে, অনেক সময় ধরাও পড়ে। একসময় ফেনসিডিল ছিল প্রধান মাদক এবং বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ভারতীয় ভূখণ্ডে অনেক ফেনসিডিল কারখানা গড়ে উঠেছিল। কিন্তু ২০০০ সালের দিকে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আসার পর মাদকসেবী ও জোগানদারেরা এর প্রতি বেশি আকর্ষণ বোধ করেন। মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে প্রতিবছর কোটি কোটি ইয়াবা বড়ি আসতে থাকে।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ৩ কোটি ৮৪ লাখের মতো ইয়াবা উদ্ধার করেছে। এর আগের বছর ২০১৯ সালে উদ্ধার করা হয়েছিল ৩ কোটি ৪৪ লাখ ইয়াবা। প্রশ্ন হলো স্থলসীমান্তের পাহারায় বিজিবি আছে, জলপথের পাহারায় কোস্টগার্ড আছে, আকাশপথের পাহারায়ও নির্দিষ্ট বাহিনী আছে।
সে ক্ষেত্রে সীমান্ত ও বিমানবন্দরে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের যোগসাজশ ছাড়া মাদক ঢুকতে পারার কথা নয়। একসময় ফেনসিডিলের স্থান দখল করেছিল অধিক ক্ষতিকর মাদক ইয়াবা। হালে সেই ইয়াবার স্থান দখল করেছে আইস, এলএসডি ইত্যাদি; যা ইয়াবার চেয়েও কয়েক গুণ বেশি ক্ষতিকর।
মিয়ানমার থেকে ১১ লাখ রোহিঙ্গার আগমন আমরা ঠেকাতে পারিনি। নিজ দেশ থেকে উৎপীড়িত হয়ে এসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে এবং সরকার মানবিক কারণেই তাদের আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু মিয়ানমার থেকে ইয়াবা, আইসসহ অন্যান্য মাদক আসা আমরা কেন ঠেকাতে পারছি না? মাদক যে বাংলাদেশ ও এর জনগণের জন্য ভয়ংকর ক্ষতি বয়ে আনছে, তা কি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানেন না?
একদিকে সরকার মাদকের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা দেখানোর কথা বলে, অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলেই এমন লোক আছেন, যাঁরা ইয়াবা সম্রাট হিসেবে পরিচিত। তাঁদের আইনের আওতায় না এনে লোকদেখানো অভিযান ও চুনোপুঁটিদের গ্রেপ্তার করলে কোনো ফায়দা হবে না। মাদক চোরাচালান ও সেবনকরীদের বিরুদ্ধে সরকারের কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধ’ যে কী ভয়ংকর পরিণাম নিয়ে আসতে পারে, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহার মৃত্যুই তার প্রমাণ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেকের বিরুদ্ধে মাদক চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ আছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারলে বা তাদের রেখে আর যা-ই হোক মাদকবিরোধী অভিযান সফল হতে পারে না। সীমান্তপথে মাদক আসা বন্ধ করুন, আপনাতেই দেশে মাদক সেবন ও ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। প্রশ্ন হচ্ছে মাদক চোরাচালান বন্ধে সীমান্ত সুরক্ষিত রাখা যাচ্ছে না কেন? সীমান্ত রক্ষায় নিয়োজিতদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।