শনিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | নারায়ণগঞ্জ | ফতুল্লা | শিরোনাম » এতিম হয়ে যাওয়া পূর্ণিমার পাশে ইউএনও
এতিম হয়ে যাওয়া পূর্ণিমার পাশে ইউএনও
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বিস্ফোরণে নিহত মঙ্গলীর মেয়ে পূর্ণিমার পাশে দাঁড়িয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফা জহুরা। নিজে অসুস্থ থাকলেও পূর্ণিমার খবর শুনেই তার চিকিৎসায় ডাক্তার পাঠিয়েছেন তিনি। একই সাথে দিয়েছেন চিকিৎসার জন্য ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা।
ফতুল্লায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন মঙ্গলী রানী। দুই মেয়ে ও শাশুড়িকে নিয়ে থাকতেন ফতুল্লার শিয়াচরে একটি ভাড়া বাসায়। তাদের গ্রামের বাড়ি সিলেটের ছাতকে। অসুস্থ স্বামীর মৃত্যুর পর জীবিকার খোঁজে বড় মেয়ে পূর্ণিমাকে নিয়ে এক বছর আগে ফতুল্লায় আসেন মঙ্গলী।
ইউএনও এ খবর শুনেই সিলেটের ছাতকের ইউএনওকে ফোনে অনুরোধ করেছেন যেন পূর্ণিমাকে থাকার জন্য একটি বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেন। ছাতকের ইউএনও তাকে আশ্বস্ত করেছেন বিষয়টি তিনি দ্রুত দেখবেন।
পূর্ণিমাকে নিয়েই শুক্রবার সকালে হেঁটে পূর্ব শিয়াচর এলাকায় একটি বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। সেই বাড়ির নিচতলায় হঠাৎ বিস্ফোরণ হয়, দেয়াল ধসে পড়ে তাদের ওপর। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে মৃত্যু হয় মঙ্গলীর। আর ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই বাড়ির নিচতলায় থাকা আরেক পোশাকশ্রমিক মায়া রানীর।
মায়ের মরদেহ মর্গে রেখেই দুপুরে বাড়ি ফেরে ১১ বছরের পূর্ণিমা। তিনি বলেন, ‘রাস্তা দিয়ে হাইট্টা যাওয়ার সময় ওই বিল্ডিংটা ফাইট্টা দেয়াল আইয়া মায়ের উপরে পড়ছে। আমার মাথায় ও পায়ে পড়ছে। এরপর আর কিছু জানি না। পরে আমারে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসছে। তয় টাকার লেইগা আমার পা বেন্ডিস করতে পারে নাই, খালায় (প্রতিবেশী) কইছে পড়ে করব।’
পূর্ণিমা জানায়, বাবার মৃত্যুর পর মা-ই সংসারের হাল ধরেন। ফতুল্লায় পোশাক কারখানায় কাজ নেন তিনি। পূর্ণিমা স্থানীয় একটি স্কুল ভর্তি হয়েছিল। দুই মাস আগে বাড়ি থেকে তার ছোট বোন ৬ বছরের স্বর্ণিমাকে নিয়ে দাদিও তাদের সঙ্গে থাকতে চলে আসেন। চারজনের সংসার সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন মঙ্গলী। সংসারের খরচ জোগাতে স্কুল ছেড়ে মায়ের সঙ্গে সেও পোশাক কারখানায় কাজে যোগ দেয়।
মঙ্গলী রানীর ছোট মেয়েকে জড়িয়ে বসে আছেন তার শোকাচ্ছন্ন শাশুড়ি। সে জানায়, তার জন্ডিস হয়েছিল কিছুদিন আগে। প্রতিবেশীদের পরামর্শে এক কবিরাজের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছিল। সেই কবিরাজের কাছে যেতেই শুক্রবার সকালে মায়ের সঙ্গে বের হয় সে। পথে মাকে হারিয়ে ফেলে চিরতরে।
মাহারা পূর্ণিমার চোখে এখন অন্ধকার। বৃদ্ধ দাদি ও ছোট বোনকে কীভাবে সামলাবে, সংসারইবা কীভাবে চলবে, সে চিন্তায় যেন শোকও ভুলে গেছে ছোট্ট মেয়েটি।
বিস্ফোরণের এ ঘটনায় ৮ জন দগ্ধ ও আহত হয়েছেন। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এতে নিহত দুজনের পরিবারকে শেষকৃত্যের জন্য ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে ভবনটিও ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সিলগালা করে দেয়া হয়েছে।