বুধবার, ৩ নভেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | ছবি গ্যালারী | ঢাকা | শিক্ষা ও প্রযুক্তি | শিরোনাম » নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টির দুর্নীতি: আজিম-কাশেমের তদন্ত শুরু
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টির দুর্নীতি: আজিম-কাশেমের তদন্ত শুরু
দেশের অন্যতম শীর্ষ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বোর্ড অব ট্রাস্টি-র সদস্য আজিম-কাশেমের দুর্নীতি, অনিয়ম এবং স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। সেই জের ধরে এই সিন্ডিকেটের দুর্নীতি এবং আর্থিক জালিয়াতির বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে দুদক।
গত ১৬ অক্টোবর একটি সংবাদ সম্মেলন এবং ২৭ অক্টোবর দুদকের সম্মুখে একটি মানববন্ধনব করে আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশন এবং দুদকের নিকট দুর্নীতির প্রমাণসহ স্মারকলিপি জমা দেয়। উক্ত বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে সৈয়দ ইকবাল হোসেন-কে নিয়োগ প্রদান করেছে দুদক।
তাদের দুর্নীতি বিষয়ে অভিযোগগুলো হলো-
১। আজিম-কাশিম সিন্ডিকেট পূর্বাচল সংলগ্ন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ২৫০ বিঘা নিচু জমি কিনে প্রায় ৪২০ কোটি টাকা লোপাট করেছে। তারা ২০১৪ সালে আশালয় হাউজিং এন্ড ডেভলপার্স লিমিটেডের কাছ থেকে ৮০ কোটি টাকার জমি ৫০০ কোটি দিয়ে কিনে এই টাকা আত্নসাত করে। আবার সেই নিচু জমি ভরাটের নামেও ২০-২৫ কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। আজিম-কাশিম সিন্ডিকেট যে ডেভলাপার্স কোম্পানির কাছে থেকে জমি কিনেছে, সেই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রত্যেকে ১৪ কোটি টাকারও বেশি কমিশন নিয়েছে। আশালয় হাউজিং কোম্পানির ডাচ বাংলা ব্যাংকের বনানয় শাখার অ্যাকাউন্ট নং-১০৩১২০০০০০০৮৭১ এবং ইউসিবিএল-এর অ্যাকাউন্ট নং-৯৫১১০১০০০০০৮৪১৩ থেকে তারা এই কমিশন নেন।
২। সাধারণ শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি থেকে অবৈধভাবে ট্রাস্টি বোর্ডের ৯ সদস্যের জন্য ২৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যয়ে বিলাসবহুল ৮টা রেঞ্জ রোভার ও একটী মার্সিডিস বেঞ্জ গাড়ি ক্রয় করে। এই গাড়ির চালকদের বেতন, রক্ষণাবেক্ষন এবং তেলের খরচ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ড থেকেই বহন করা হয়।
৩। ২০১৮ সাল থেকে বোর্ড অব ট্রেস্টি-র সদস্যরা সিটিং এলাউন্স বাবদ প্রতিটি বোর্ড অব ট্রাস্টির মিটিংয়ে ১ লক্ষ এবং অন্যান্য মিটিংয়ে ৫০ হাজার টাকা করে নিয়ে আসছে। বিভিন্ন পত্রিকায় এ নিয়ে রিপোর্ট হলে তারা তা ৫০ হাজার টাকা এবং ২৫ হাজার টাকা করে নেয়। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কর্তৃক সিটিং এলাউন্স ফি যথাক্রমে ১০ হাজার এবং ৮ হাজার টাকা নির্ধারিত আছে। তারা এমনকি কোন কমিটির সদস্য না হয়েও ঐ মিটিংয়ে উপস্থিত হয়ে এবং অনলাইন মিটিং করেও এলাউন্স গ্রহণ করে।
৪। আজিম-কাশেম ছাড়াও এই সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যরা হলেন- প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বেনজির আহমেদ, রেহেনা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান ও আজিজ আল কায়সার টিটো। আজিম-কাশেম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অমান্য করে আটটি কমিটির বিপরীতে ২৫টি কমিটি গঠন করে অতিরিক্ত সিটিং এলাউন্স আদায় করে/ এ সকল কমিটির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সকল ক্ষমতা নিজেদের হাতে কুক্ষিগত করে রেখেছে।
৫। বিশ্ববিদ্যালয়য়ের আর্থিক সম্পত্তির উপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট অর্থের ২০২১ সালের ৩১ আগস্টের হিসার অনুযায়ী ৪৩ ভাগেরো বেশি (৪০৮ কোটি ৪০ লাখ) টাকা নিজেদের মালিকানাধীন সাউথইস্ট ব্যাংকে জমা রেখেছে। কাশেম-আজিম এবং তাদের স্ত্রীরা উক্ত ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য।
৬। তারা প্রতি সেমিস্টারে বিশ্ববিদ্যালয়য় মঞ্জুরি কমিশনের নির্দেশনা অমান্য করে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করে আসছে। ইউজিসি এ কারণে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ অনুষদে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য একটি পরামর্শমূলক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে। এছাড়া আইন অনুষদে বাএ কাউন্সিলের অনুমোদন (৩০ জন প্রতি সেমিস্টার) এর অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করে।
৭। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ট্রাস্টি বোর্ডের এই সিন্ডিকেট জঙ্গিবাদী কার্যক্রমকে বরাবর উৎসাহ প্রদান করে এসেছে। ফলশ্রুতিতে হিজব্যত তাহরীরসহ দেশের ভয়ংকর সব জঙ্গি সংগঠনের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে দাঁড়িয়েছে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যাল। তার উজ্জ্বল প্রমাণ হলো লেখক রাজীব হায়দারের হত্যাকান্ড সহায়তাকারী সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গি নাফিস ইমতিয়াজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মদদে ১০ বছর পর আবারও ভর্তির সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।