বুধবার, ২০ অক্টোবর ২০২১
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | ছবি গ্যালারী | ঢাকা | শিরোনাম » পুষ্টি বিষয়ে প্রশিক্ষণ পেল ২ লক্ষাধিক শ্রমিক
পুষ্টি বিষয়ে প্রশিক্ষণ পেল ২ লক্ষাধিক শ্রমিক
নিউট্রিশন অব ওয়ার্কিং ইউমেন প্রকল্পের আওতায় দেশের দেশের পোশাক শিল্পে কর্মরত ২ লাখ ২ হাজার ২৩০ জন শ্রমিককে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
বুধবার ২০ অক্টোবর তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের পুষ্টি বিষয়ক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। গুলশানের হোটেল লেকশোরে ‘ন্যাশনাল রাউন্ড টেবিল ডিসকাসন অন ওয়ার্কপ্লেস নিউট্রিশন ইন দ্যা রেডিমেড গার্মেন্টস সেক্টর ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় বিকেএমইএ ও নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনালের (এনআই) যৌথ উদ্যোগে।
বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাই কমিশনার বেনোয়া প্রিফন্তে, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপারিচালক গৌতম কুমার, আইএলও কান্ট্রি ডিরেক্টর টুয়োমো পোটিয়াইনেন, এনআই এর কান্ট্রি ডিরেক্টর সাইকা সিরাজ, গেইন-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. রুদাবা খন্দকার, প্রফেসর ড. নাজমা শাহীন এবং সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিক বিশেষ করে নারীদের রক্ত শুন্যতা দূর করার পাশাপাশি পুষ্টি সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে ২০১৯ সালে নিউট্রিশন অব ওয়ার্কিং উইমেন প্রকল্পে চুক্তিবদ্ধ হয় বিকেএমইএ ও এনআই। গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার অর্থায়ন ও এনআই এর কারিগরি সহায়তায় ৩২ মাসের এই প্রকল্পে বিকেএমইএ’র সদস্যভুক্ত ১১৬টি কারখানার ২ লক্ষ ১০ হাজার শ্রমিকের মাঝে ১০ মিলিয়ন আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়। যা পোশাক শিল্পে কর্মরত নারীদের পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জাতীয় উৎপাদন ও রপ্তানিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
সভাপতির বক্তব্যে বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, নিউট্রিশন অব ওয়ার্কিং ইউমেন প্রকল্প বাস্তবায়নে ২৬ জন মাস্টার ট্রেইনার ও কারখানা পর্যায়ে ৬৫৪ জন নারী কর্মকর্তাসহ ৬৪৫ জন নিউট্রিশন ট্রেইনার তৈরি করা হয়। যারা ৫ হাজার ৭৭৮ টি ব্যাচে ২ লক্ষ ২ হাজার ২৩০ জন শ্রমিককে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। যার মধ্যে ১ হাজার ৩৪৯ জন গর্ভবতীসহ নারী শ্রমিক রয়েছেন ১ লক্ষ ৫১ হাজার ৬৭২ জন। পাশাপাশি পুষ্টি
বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী রয়েছেন ১১ হাজার ৫৫৬ জন যারা শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছেন।
এছাড়াও রক্ত শুন্যতা, হাত ধোয়া, খাদ্যাভ্যাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শ্রমিকদের সচেতন করে তুলতে পোস্টার, ব্যাজ, কলম সরবরাহ করা হয়। তিনি আরও বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পের বড় অংশই নারী। তাদের পুষ্টি সরবরাহ ও রক্ত শুন্যতা দূর করতে বিকেএমইএ ও এনআই যে উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রসংসার দাবীদার। এর মাধ্যমে উৎপাদনে ইতিবাচক প্রভাব রাখার পাশাপাশি সুস্থ-সবল জাতি গঠনেও কাজ করছে এই প্রকল্প। নিন্ম মধ্যম আয়ের দেশ থেকে ২০৩১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে তালিকাভুক্তিতে যা সন্দেহাতীতভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
২০২১ সালের অক্টোবরে প্রকল্পটির মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম শেষ হয়ে যাবে। তবে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের পুষ্টি সচেতনতা নিশ্চিত করতে বিকেএমইএ, এনআই এবং ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন-ন্যাশনাল নিউট্রিশন সার্ভিস ১৬ জুন ২০২০ সালে তিন বছর মেয়াদি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে যা ২০২৩ সাল পর্যন্ত চলমান থাকবে।
প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে শ্রমিকের পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে বিশেষ অতিথি পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন সরকার সুস্থ সবল জাতি গঠনে বদ্ধপরিকর। এ লক্ষ্যে যারা কাজ করছেন তাদের সাধুবাদ জানাই। তিনি বলেন, মোট জনসংখ্যার ৫১% নুন্যতম পুষ্টির প্রয়োজন মেটাতে পারে না। তাই অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় পুষ্টিকে সমন্বিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রয়োজনীয় কার্যক্রমের রূপরেখা উপস্থাপন করা হবে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাই কমিশনার বেনোয়া প্রিফন্তে এই কার্যক্রমকে ফলপ্রসু করতে কাজ করা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা, নিউটিশন ইন্টার ন্যাশনাল এবং বিকেএমইএ’র প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন যারা টেকসই উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে তিনি দুটো মিশন নিয়ে এসেছিলেন। একটি পুষ্টি অন্যটি স্বাস্থ্য।
বিকেএমইএর পুষ্টি কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত হতে পেরে তিনি নিজেকে সফল মনে করেন। শ্রম অধিদপ্তরের মহাপারিচালক গৌতম কুমার মনে করেন শ্রমিকরাই এই খাতের প্রধান চালিকাশক্তি। তাই শ্রমিকদের কল্যাণে তাদের পুষ্টি চাহিদা ও সচেতনতার মতো কার্যক্রম টেকসই উন্নয়নের জন্য অন্যতম হাতিয়ার বলে তিনি মনে করেন।
শ্রমিক অধিকার নিয়ে কাজ আন্তর্জাতিক সংগঠন আইএলও’র কান্ট্রি ডিরেক্টর টুয়োমো পোটিয়াইনেন বলেন কর্ম পরিবেশ উন্নয়নের জন্যও শ্রমিকের পুষ্টি বিষয়ক সচেতনতা জরুরি। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়নের মাইল ফলক স্পর্ষ করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
নারী গার্মেন্টস কর্মীদের পুষ্টি সরবরাহ ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে নিউট্রিশন অব ওয়ার্কিং উইমেন প্রকল্পকে মাইল ফলক হিসেবে উল্লেখ করেন এনআই এর কান্ট্রি ডিরেক্টর সাইকা সিরাজ। যা বর্তমান ও ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গড়ার জন্য জরুরি বলে তিনি উল্লেখ করেন। এক্ষেত্রে এনআই সহযোগিতা করতে বদ্ধ পরিকর।
সমাপনী বক্তব্যে বিকেএমইএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মনসুর আহমেদ বলেন, বিকেএমইএ এবং এনআই যৌথভাবে যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ণ করছে তার ফলশ্রুতিতে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ধারনার পরিবর্তন হচ্ছে। যার মাধ্যমে উৎপাদনে ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকলকে তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।