রবিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২১
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | ঢাকা | শিরোনাম » এয়ারপোর্টে প্রবাসীদের টার্গেট করে অপহরণ-ছিনতাই
এয়ারপোর্টে প্রবাসীদের টার্গেট করে অপহরণ-ছিনতাই
স্বল্প সময়ের জন্য বাংলাদেশে আসা বিদেশি ও প্রবাসীদের টার্গেট করা হয় এয়ারপোর্টে নামার পরই। গাড়ির জন্য অপেক্ষায় থাকা প্রবাসীদের গাড়ি দিয়ে সহযোগিতার নামে গাড়িতে তুলে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করা হয়। আবার কখনও সখ্যতা গড়ে চক্রের সদস্যরা টার্গেট করা প্রবাসীদের চেতনানাশক দ্রব্য খাইয়ে অজ্ঞান করে ঢাকার বাইরে ফেলে দেয়। লুট করা হয় সঙ্গে থাকা সব মালামাল।
আজ রোববার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান, অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি জানান, রাজধানী ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকেন্দ্রিক সম্প্রতি সংঘঠিত দুটি ডাকাতির ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সন্ধান পায় ডিএমপির গোয়েন্দা উত্তর বিভাগ। গ্রেপ্তার করা হয় চক্রের তিন সদস্যকে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মো. মাসুদুল হক আপেল, আমির হোসেন হাওলাদার ও মো. শামীম।
গতকাল শনিবার (১৬ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর হাতিরঝিল থানাধীন মীরবাগ এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে পাঁচটি পাসপোর্ট, দুটি এনআইডি কার্ড, দুটি এটিএম কার্ড, একটি আইপ্যাড, একটি ওয়ার্ক পারমিট কার্ড, একটি বিএমইটি কার্ড, একটি অফিস আইডি কার্ড, একটি স্টিলের চাকু ও নগদ ৫৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
ডিবি বলছে, প্রবাসীদের টার্গেট করে বিমানবন্দরকেন্দ্রিক অর্ধশতাধিক ডাকাতি, ছিনতাই ও অপহরণের পর মালামাল লুটের ঘটনা ঘটলেও মামলা হয়েছে মাত্র সাতটি। দ্রুত বিদেশ ফিরে যাওয়ার তাড়া থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীরা ঝামেলা মনে করে মামলা করছেন না।
তিনি বলেন, গত ৭ সেপ্টেম্বর মো. লিটন সরকার নামে এক প্রবাসী মিশর থেকে টার্কিশ এয়ারলাইনসের একটি বিমানে বাংলাদেশে আসেন। তিনি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে গোলচত্বরে ফুটওভার ব্রিজের নিচে এসে বাসার উদ্দেশে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করেন।
এ সময় অজ্ঞাতনামা ৫-৬ জন লোক ধারালো চাকু দিয়ে ভয় দেখিয়ে তার সঙ্গে থাকা হ্যান্ডব্যাগ ও লাগেজ নিয়ে চলে যায়। হ্যান্ডব্যাগ ও লাগেজে থাকা তার একটি পাসপোর্ট, মিশরের ভিসা, বিমানের টিকিট, ৮ আনা ওজনের স্বর্ণের চেইন, দুটি মোবাইল সেট, একটি স্মার্ট কার্ডসহ নগদ ৪০ হাজার টাকা নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।
পরবর্তীতে ডাকাত দলের সদস্যরা তাকে ঘটনাস্থল থেকে একটি বাসে তুলে ঘটনার বিষয়ে কাউকে কোনো কিছু না জানানোর জন্য ভয়ভীতি দেখায়। এ ঘটনায় গত ১৫ অক্টোবর বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা হয়।
অন্যদিকে ৫ অক্টোবর ব্রিটেন থেকে ঢাকায় নামেন ওমর শরিফ। নাটোরের বড়াইগ্রাম যাওয়ার সময় বিমানবন্দর এলাকা থেকে অপহৃত হন তিনি। তাকে ঢাকার বাইরে নামিয়ে দেওয়া হলেও তার পাসপার্টসহ প্রয়োজনীয় সব মালামাল লুট করা হয়।
পৃথক ঘটনায় মামলা হলে তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগ। গোয়েন্দা তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ডাকাতির ঘটনায় সম্পৃক্ত চক্রের ওই তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রবাসীরা ঠিক কী কী কারণে ছিনতাইকারী চক্রের টার্গেট হচ্ছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, চক্রের সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, বিমানবন্দরকেন্দ্রিক তারা গত এক বছরেই অর্ধশতাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলার তথ্য পাওয়া যায়। চক্রের মূল হোতা মাসুদুলের বিরুদ্ধেই রয়েছে সাতটি মামলা।
হাফিজ আক্তার বলেন, প্রবাসীদের টার্গেট করে চক্রটি ৫০ থেকে ৬০টি ডাকাতি, ছিনতাই ও অপহরণের পর মালামাল লুটের ঘটনা ঘটিয়েছে। কিন্তু এ-সংক্রান্ত মাত্র হয়েছে সাতটি। দ্রুত বিদেশ ফিরে যাওয়ার তাড়া থাকায় ক্ষতিগ্রস্থ প্রবাসীরা ঝামেলা মনে করে মামলা করছেন না। আবার ১০ থেকে ১৫ দিনের জন্য বাংলাদেশে ঘুরতে আসা বিদেশিরাও দ্রুত পাসপোর্ট তুলে ফিরে যাচ্ছেন, যে কারণে ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা কম হচ্ছে। আর এই সুযোগটাই নিয়েই সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র বিমানবন্দরকেন্দ্রিক প্রবাসী ও বিদেশিদের টার্গেট করে ছিনতাই ডাকাতির ঘটনা ঘটাচ্ছে।