শুক্রবার, ১৫ অক্টোবর ২০২১
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | ঢাকা | শিরোনাম » সময়ের আগেই চালু হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র?
সময়ের আগেই চালু হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র?
দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুতগতিতে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট ২০২৪ সালে এবং দ্বিতীয় ইউনিট ২০২৫ সালে চালু হওয়ার কথা থাকলেও তা কয়েক মাস আগেই চালু হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক শওকত আকবর। তিনি জানান, কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলায় ২০২৩ সালের শেষ দিকেই এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হবে বলে তারা আশা করছেন।
প্রকল্প পরিচালক শওকত আকবর বৃহস্পতিবার বলেন, প্রথম ইউনিটটি ২০২৩ সালেই চালু হবে বলে আশা করছি। সে অনুসারে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রথম ইউনিট চালু হওয়ার ছয় থেকে আট মাস পর দ্বিতীয় ইউনিট চালু হবে।
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হবে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ গাইডলাইন অনুসারে যথাযথভাবে করা হচ্ছে কি না, তা পরিদর্শনের জন্য আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পাঁচটি মিশনের মধ্যে প্রথম মিশন আগামী মাসে পরিদর্শনে আসবে। মিশনগুলো পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রায় ১৯টি অবকাঠামোর কাজ পরিদর্শন করবে। এছাড়া পরিদর্শনের আওতায় আছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও সুরক্ষাব্যবস্থা এবং প্রাতিষ্ঠানিক ও অপারেটিং স্টাফদের দক্ষতার মতো বিষয়গুলো। পরিদর্শনে সন্তুষ্ট হলে তারা পরমাণু জ্বালানি আনার ব্যাপারে সবুজ সংকেত দেবে।
শওকত আকবর বলেন, রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভ্যাসেল স্থাপনের পর জ্বালানি আনার বিষয়টিই হবে সবচেয়ে বড় কাজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি গত ১০ অক্টোবর এই প্রেসার ভ্যাসেল স্থাপনের কাজ উদ্বোধন করেন।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার গাইডলাইন মেনে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে পরমাণু জ্বালানি আনার ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করবে রাশিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
প্রকল্প পরিচালক আকবর বলেন, বাংলাদেশে জ্বালানি আসার পর তা সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় পাবনার বেস স্টেশনে নেওয়া হবে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য এই পরমাণু জ্বালানি আনা হতে পারে। তখন বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরীক্ষামূলক পরিচালন শুরু হতে পারে।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘আমরা আইএইএ-এর গাইডলাইন মেনেই অবকাঠামো তৈরি করছি। এখন পর্যন্ত তারা আমাদের কাজে সন্তোষ প্রকাশ করেছে।’
বিকিরণের ঝুঁকি সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘প্রকল্পের অবকাঠামো এমনভাবে নকশা করা হয়েছে, তাতে স্বাভাবিক কার্যক্রম চলার সময় এখান থেকে নির্গত বিকিরণের পরিমাণ এতই কম হবে যে, তা এখানকার কর্মীদের জন্য কখনো নির্ধারিত স্তরের ওপরে উঠবে না।’
সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় নিরাপত্তাব্যবস্থা ছাড়াও এই বিদ্যুৎ প্রকল্পের নকশায় নিরাপত্তার পাঁচটি স্তর আছে। নকশার পাশাপাশি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সহায়তাকারী দেশ রাশিয়ার পক্ষ থেকে এমন নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে যে, স্বাভাবিক কিংবা জরুরি পরিস্থিতিতে বিকিরণ সীমা কখনোই চুল্লি ভবনের আশপাশের ৩০০ মিটার অতিক্রম করবে না। এটি আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য মাত্রা।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৩০০ মিটারের বাইরে বা সাইটের কর্মীদের জন্য বিকিরণের ঝুঁকি নেই।’
বাংলাদেশের ইতিহাসে রূপপুর প্রকল্পই সবচেয়ে বড় এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে সর্বোচ্চ ব্যয়বহুল প্রকল্প। এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচের এই প্রকল্পে ৯০ ভাগ টাকা ঋণ দিয়েছে রাশিয়া। একই সঙ্গে আন্তঃরাষ্ট্রীয় কয়েকটি চুক্তির মাধ্যমে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করছে রুশ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি এটি পরিচালনার জন্য জনবলও দিচ্ছে রাশিয়া।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করে। ২০১০ সালে রাশিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিয়ে ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট হয়। একই বছর জাতীয় সংসদে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। ২০১২ সালে বাংলাদেশ অ্যাটমিক এনার্জি রেগুলেটরি অ্যাক্ট পাস করা হয়। ২০১৩ সালে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম পর্যায়ের কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ধাপে ধাপে প্রকল্পটি এখন আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে।