রবিবার, ৩ অক্টোবর ২০২১
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | শিরোনাম | স্বাস্থ্য » ভেজাল ওষুধের বাণিজ্য বন্ধ হোক
ভেজাল ওষুধের বাণিজ্য বন্ধ হোক
রোগ প্রতিকারে, দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্ত হলে বা অন্য যে কোনো শারীরিক জটিলতায় জীবন বাঁচাতে ওষুধের গুরুত্ব অপরিসীম। সঠিক ওষুধ সেবন যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিয়ে আমাদের স্বাভাবিক করে তোলে। সেজন্য ওষুধ তৈরি, সরবরাহ, বিপণন অতি গুরুত্বপূর্ণ এক বিষয়। বাংলাদেশও ওষুধশিল্প সম্ভাবনার আলো দেখছে।
উইকিপিডিয়ার মতে, দেশ জুড়ে ৯৮ শতাংশ ওষুধের চাহিদা পূরণ করে ১৬০টিরও অধিক দেশে ওষুধ রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় সম্ভব হচ্ছে। এখানে প্রবৃদ্ধির হার ৯ শতাংশের ওপরে। বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরীণ ওষুধের বাজার ১৩ হাজার কোটি টাকা এবং আন্তর্জাতিক বাজার ৬৫০ কোটি টাকারও বেশি। এত সব সম্ভাবনার মাঝেও ওষুধের উপাদানে সঠিক মাত্রার ঘাটতি, ভেজালের মিশ্রণ ও নকল ওষুধ ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে আতঙ্কিত জনসমাজ। দেশের মোট চাহিদার প্রায় ২০ শতাংশ ভেজাল ওষুধ সরবরাহ হচ্ছে। আর অধিক মুনাফার আশায় ওষুধ বিপণনকারীরা এই অমানবিক কাজে জড়িয়ে পড়েছে।
ওষুধ প্রশাসনের ২০১৯-২০২০-এর বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত নকল, ভেজাল, মেয়াদোত্তীর্ণ ও মিসব্যান্ড অনিবন্ধিত ওষুধ বিক্রির অপরাধে ১১ কোটি ৬৯ লাখ ১৮ হাজার ৭০৮ টাকা জরিমানা করেছে আদালত। এবং এই সময়ে ২৩ কোটি ২৯ লাখ টাকার ওষুধ জব্দ করা হয়েছে। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ১৭১৫টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের পরিচালনায় ৭ কোটি ৫৮ লাখ ১০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এত অভিযান, আটকের পরেও চলতি বছরেও থেমে নেই এই প্রেক্ষাপট। গত ২৯ জুন, ১২ আগস্ট ও ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ জব্দ করেছে পুলিশ। কেবল রাজধানীতেই নয়, বিশেষ করে করোনাকে কেন্দ্র করে এই তত্পরতা ছড়িয়ে পড়েছে দেশের আনাচে-কানাচে।
ভেজাল ওষুধের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এতে করে রোগী রোগ থেকে তো সেরে ওঠেই না, বরং উলটো জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়। এমনকি মৃত্যুও ঘটে থাকে। এছাড়া এসব ওষুধ সেবনে এলার্জি, অস্বস্তিকর মুহূর্ত, কিডনিসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের বিকল ঘটতে পারে। তাই এই বাণিজ্যের প্রভাব রোধ করা এখন সময়ের দাবি। এক্ষেত্রে সরকার গৃহীত পদক্ষেপসমূহের সঠিক বাস্তবায়নের পাশাপাশি এই অপরাধের শাস্তিকে মৃত্যুদণ্ড করার প্রয়োজনীয়তা জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কেননা, অধিকাংশ সময়ই অপরাধীরা সাজা শেষে ছাড়া পেয়ে আবারও এই অপরাধেই জড়িয়ে পড়ে। দেশের শহরাঞ্চলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের তত্পরতা থাকলেও গ্রামের দিকে তা একেবারেই কম। এসব অঞ্চলকেও নজরদারির আওতায় আনা অত্যন্ত জরুরি। আর ঢাকার বিশেষত মিডফোর্ড এলাকা ওষুধ সরবরাহের আধার হওয়ায় এখানে সার্বক্ষণিক নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে, যেন কোনো ক্রমেই নকল ওষুধের প্রসার না ঘটে। সেই সঙ্গে জনগণকে সভা-সেমিনার, মাইকিং, পোস্টার ও লিফলেটের মাধ্যমে ভেজাল ওষুধের বিরুদ্ধে সজাগ করে তুলতে হবে। প্রত্যেকের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশিত তথ্যসমূহ মেনে ঔষধ কিনা উচিত। মেয়াদ দেখে, সীল বা প্যাকেজিংয়ে কোনো গলদ আছে কিনা তার যাচাই ভোক্তা সমাজকে নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়