রবিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | ঢাকা | নারায়ণগঞ্জ | শিরোনাম » আবর্জনায় ‘ডুবলো’ সড়কের কাজ
আবর্জনায় ‘ডুবলো’ সড়কের কাজ
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডকে ৬ লেনে উন্নতীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে সোয়া ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সড়কের দুই পাশে থাকা আবর্জনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপরিকল্পিতভাবে সড়কের দুই পাশে ফেলে রাখা এই বর্জ্যের কারণে সড়ক প্রশস্ত করণের কাজ ডুবতে বসেছে।
নারায়ণগঞ্জ সওজের তথ্য বলছে, সড়কটি ৬ লেনে উন্নীত হলে এর প্রশস্ত হবে প্রায় ১২৯ ফুট। এতে ব্যয় হবে ৪৪৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের কাজে ‘এনডিই-টিবিএল-এইচটিবিএল-জেভি’ নামের যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গত ৯ ফেব্রুয়ারি চুক্তি করে সওজ। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়ে ২০২২ সালের জুন।
সংশ্লিষ্ট দফতর সূত্রে জানা গেছে, লিংকরোডের নিকটবর্তী সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের গৃহস্থালী বর্জ্য সড়কের পাশে ফেলা হয়। সড়কের একাধিক জায়গায় বর্জ্য না ফেলার নির্দেশনা সংবলিবত বিলবোর্ড থাকলে কেউ মানছে না সেই নিয়ম। এভাবে সড়কের দুই পাশে বর্জ্য ফেলার কাজ বন্ধ করতে উদ্যোগ নেই নারায়ণগঞ্জ সওজ। বর্জ্যবাহী ভ্যান চালকেরা নিজেদের ইউনিয়ন ও সিটির বর্জ্য সংগ্রহকারী বলে পরিচয় দিয়ে সড়কের দুই পাশে আবর্জনা ফেলা অব্যাহত রাখেন। এতে ভেস্তে যায় সওজের উদ্যোগ।
বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার সভা হলেও হয়নি সংকটের সমাধান। সাইনবোর্ড থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত সড়কের পাশ থেকে বর্জ্য অপসারণে একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েও সফল হয়নি সওজ।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে,ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের বিভিন্ন অংশে চলছে নির্মাণ কাজ। সড়কের দুই পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসহ ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ চলছে। কিন্তু সাইনবোর্ড থেকে ফতুল্লা স্টেডিয়াম পর্যন্ত পুরো সড়কের দুই পাশ ডুবে আছে বর্জ্যে। অথচ নির্দিষ্ট মেয়াদে প্রকল্পের কাজ শেষ না হলে ভোগান্তি বাড়ার আশঙ্কা করছেন পথচারী ও বিভিন্ন বাহনের যাত্রীরা।
এদিকে, সওজ বলছে, এভাবে বর্জ্য ফেলা বন্ধ না হলে সড়কের কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হবে না। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোডের পাশেই রয়েছে জেলার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এর মধ্যে রয়েছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, সিভিল সার্জন অফিস, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, পিবিআই অফিস, জেলা কারাগার, বিজিবি-৬২, পরিবেশ অধিদফতর, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, এলজিইইডি অফিস, জেলা পরিষদ, যুব উন্নয়ন অধিদফতর, গণপূর্ত অধিদফতর, পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ অফিস। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। বর্জ্য ও যানজটে দুর্ভোগে তাদের দিন কাটে।
ভুক্তভোগী পথচারী মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘রাস্তার কাজ শুরু হলে যানজট সাধারণত বাড়ে। কিন্তু বর্জ্য থাকলে কাজ শেষ হতে দেরি হয়। আর আমাদের ভোগান্তি বাড়বে। ময়লার দুর্গন্ধ তো আছেই। জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের স্থায়ী ডাম্পিং গ্রাউন্ড না থাকায় ২০১৭ সাল থেকে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের আলামিন নগরের পতিত জায়গায় বর্জ্য ফেলা হয়। এছাড়া, ফতুল্লা স্টেডিয়ামের রোজ গার্ডেন অ্যাপারেনস প্রতিষ্ঠানে পেছনের খালি জায়গায় ইউনিয়নের অস্থায়ী ডাম্পিং স্পট করা হয়েছে। টাকার বিনিময়ে কিছু সংখ্যক বর্জ্য সংগ্রহকারী এখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করেন। তবে এখনো সড়কের পার্শ্ববর্তী সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের বর্জ্য সড়কে ফেলা হয় বলে অভিযোগ তুলেছে সওজ।
নারায়ণগঞ্জ সওজের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা আর কত বর্জ্য সরাবো? আমরা তো অস্থির হয়ে গেছি। আমরা বর্জ্য সরাই, তারা বর্জ্য ফেলে। একাধিকবার বর্জ্য না ফেলার নির্দেশনা দিয়েছি। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার মন্ত্রণালয়ে কথা হয়েছে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সভা হয়েছে। কোনো সমাধান হয়নি। আমরা বর্জ্য বহনকারীদের ভ্যান আটক করেছিলাম। তারা জানিয়েছেন, তারা সড়ক নিকটবর্তী সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করেন। অথচ সিটি করপোরেশন তাদের বর্জ্য ফেলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাহলে বর্জ্য কারা ফেলে?’
প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, ‘আমরা এই বর্জ্যের ওপর সড়ক করবো না। করলে সেই সড়ক নষ্ট হয়ে যাবে।’
সিটি করপোরেশেননের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা হিরণ বলেন, ‘আমরা লিংকরোডের পাশে কোনো বর্জ্য ফেলি না। বিকল্প ব্যবস্থায় সিটি এলাকার বর্জ্য ফেলি শহীদ নগর এলাকায়।’