বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২২
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | ছবি গ্যালারী | শিরোনাম » কেমন যাবে ২০২৩ সালের বিশ্ব অর্থনীতি?
কেমন যাবে ২০২৩ সালের বিশ্ব অর্থনীতি?
প্যারিসভিত্তিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান ইকনোমিক কো-অপারেশন ও ডেভলপমেন্ট (ওইসিডি) সম্প্রতি তাদের এক গবেষণায় জানিয়েছে, উচ্চমাত্রার সুদহার, আকাশচুম্বী মূল্যস্ফীতি ও চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ২০২৩ সালের অর্থনৈতিক হালচাল হবে ২০২২ সালের থেকেও অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং।
মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) ওইসিডি তাদের প্রকাশিত গবেষণাপত্রে জানায়, চলতি বছর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ১ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে এ প্রবৃদ্ধি হবে মাত্র ২ দশমিক ২ শতাংশ।
এ ব্যাপারে ওইসিডির সেক্রেটারি জেনারেল ম্যাথাইস কোরম্যান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা বলছি না বিশ্ব মন্দা দেখা দেবে। তবে বড় রকমের একটি চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছি আমরা। মাত্র ২ দশমিক ২ শতাংশ বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি মোটেই ভালো কোনো খবর না।
৩৮টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত ওইসিডি মূলত বিশ্ববাণিজ্য নিয়ে কাজ করে থাকে। মূলত ইউরোপের দেশগুলোর অর্থনীতির ১৮ শতাংশই যাবে তেল-গ্যাসের খরচ মেটাতে। ১৯৭০ সালের পর এই প্রথম পশ্চিমারা এতটা জ্বালানি সংকটের সম্মুখীন হলো।
এদিকে মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে চলতি বছরে ছয় বারের মতো সুদহার বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ। এতে করে নেতিবাচক উপায়ে মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে গিয়ে খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে দেশটির অর্থনীতি। ওইসিডির জরিপে দেখা যায়, ২০২১ সালে যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৯ শতাংশ, সেখানে চলতি বছর তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৮ শতাংশে। ওইসিডি বলছে, ২০২৩ সালে এ প্রবৃদ্ধির হার হবে মাত্র শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ ও ২০২৪ সালে বেড়ে হবে মাত্র ১ শতাংশ।
একইভাবে ইউরোপের যে ১৯টি দেশে ইউরোতে লেনদেন হয়ে থাকে তারা চলতি বছর ও আগামী বছর বড় রকমের জ্বালানি সংকটের মধ্য দিয়ে যাবে। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মতোই ইউরোপের এসব দেশের প্রবৃদ্ধি হবে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২৪ সালে প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে দাঁড়াবে ১ দশমিক ৪ শতাংশে- এমনটাই বলছে সংস্থাটি।
২০২১ সালে ইউরোপে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ৬ শতাংশ। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হতেই বদলে যায় সাবেক সব হিসাব-নিকাশ। ২০২২ সালে ইউরোপের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। ওইসিডি বলছে, ২০২৩ সালে ইউরোপে মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা কমে আসবে। আগামী বছর ইউরোপের মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।
ইউরোপ-আমেরিকার অবস্থা বেহাল হলেও অনেকটা সুবিধাজনক জায়গায় আছে এশিয়ার অর্থনীতি। ওইসিডি বলছে, আগামী বছরের তিন চতুর্থাংশ অর্থনীতি নির্ভর করবে এশিয়ার ওপরে। এশিয়ার দুই শক্তিধর দেশ ভারত ও চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছাড়িয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোকে। ওইসিডির জরিপে, চলতি বছরে ভারতের প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২৩ সালে এ প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমলেও তা দাঁড়াবে ৫ দশমিক ৭ শতাংশে।
চলতি বছর চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৩ শতাংশ হলেও ২০২৩ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে হবে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। বিশ্বের দ্বিতীয় শক্তিমান অর্থনীতির দেশ চীন তার রিয়েল স্টেট বাজার, উচ্চ দেনা ও জিরো কোভিড পলিসির কারণে টিকে থাকতে হিমশিম খেলেও ইউরোপ-আমেরিকার থেকে ভালো অবস্থানে আছে দেশটি।
করোনার ধাক্কা সামলে বিশ্ব যখন নতুন উদ্যোমে পথ চলতে শুরু করেছিল, তখনই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। করোনার পরপর যখন বৈশ্বিক ঋণগুলোতে সুদের হার ছিল অনেক কম, সেখানে কয়েক লাফে এখন সুদের হার বেড়ে গিয়েছে। এত করে যেসব দেশ দেনাগ্রস্ত তাদের মূল্য পরিশোধে আগামী বছর হিমশিম খেতে হবে। এ ছাড়াও উচ্চ সুদহার ও লাগামহীন ডলারের বিনিময় মূল্যে বেড়ে যাবে আমদানি-রফতানি ব্যয়। সব মিলিয়ে ২০২৩ সালে বিশ্বের জন্য অপেক্ষা করছে এক চ্যালেঞ্জিং অর্থনীতি।