সোমবার, ১৩ জুন ২০২২
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক | ছবি গ্যালারী | শিরোনাম » শ্রমিক সংকটে মালয়েশিয়া, কোটি কোটি ডলার হাতছাড়া
শ্রমিক সংকটে মালয়েশিয়া, কোটি কোটি ডলার হাতছাড়া
পাম তেল উৎপাদন থেকে শুরু করে সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতা-মালয়েশিয়ার কোম্পানিগুলো ক্রয়াদেশ নিতে পারছে না। শ্রমিক ঘাটতিতে উৎপাদন কমে যাওয়ায় ক্রেতাদের ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে তারা।
এতে কোটি কোটি ডলার হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে কোম্পানিগুলোর। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটিতে ১০ লাখের বেশি শ্রমিক সংকট রয়েছে। এতে তাদের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার চেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এমন খবর দিয়েছে। করোনা মহামারির কারণে বিদেশিকর্মী নিয়োগের বিধিনিষেধ ফেব্রুয়ারিতেই উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারি অনুমোদনের ধীরগতির কারণে প্রবাসীদের একটি বড় অংশ মালয়েশিয়ায় ফিরতে পারছে না।
বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠী, কোম্পানি ও কূটনীতিকরা বলছেন, শ্রমিক সুরক্ষা নিয়ে বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গেও আলোচনা দীর্ঘবিলম্বিত হচ্ছে। যে কারণে তাৎক্ষণিক শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
মালয়েশিয়ার অর্থনীতি রফতানি-নির্ভর। বৈশ্বিক সাপ্লাই-চেইনের সঙ্গে এটির গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে। পামচাষ, কারখানা ও সেবাখাত সচল রাখতে লাখো বিদেশি শ্রমিকের ওপর নির্ভরশীল তারা। বিপজ্জনক, কঠিন ও নোংরা আখ্যা দিয়ে এসব কাজ থেকে দূরে থাকেন স্থানীয়রা। কারখানায় যোগ দিলেও তারা বেশি দিন স্থায়ী হন না।
প্রবৃদ্ধির ঊর্ধ্বগতির পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ক্রেতাদের হারাচ্ছে শিল্পখাতের উৎপাদন। মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে এক-চতুর্থাংশ অবদান এই খাতের। দেশটির প্রস্তুতকারক ফেডারেশনের সভাপতি সোহ থিয়ান বলেন, বিক্রি বেড়েছে। নতুন আশাও দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ক্রয়াদেশ অনুসারে বিভিন্ন কোম্পানি উৎপাদন করতে পারছে না। তাদের কার্যক্রম বাধার মুখে পড়ছে।
সাড়ে তিন হাজার কোম্পানির প্রতিনিধিত্ব করছে দেশটির প্রস্তুতকারক ফেডারেশন। পাম তেল উৎপাদক ইউনাইটেড প্ল্যান্টেশনসের প্রধান নির্বাহী পরিচারক কার্ল বেক-নেইলসেন বলেন, পামতেল চাষীরা মারাত্মক লোকসানের ঝুঁকিতে আছেন। পরিস্থিতি খুবই খারাপ। মনে হচ্ছে, ফুটবল মাঠে এগারো জনের বিরুদ্ধে খেলতে সাতজনকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সরকারি উপাত্ত অনুসারে, নির্মাতা, চাষাবাদ ও অবকাঠামোখাতে অন্তত ১২ লাখ শ্রমিকের ঘাটতি আছে। মহামারির বিধিনিষেধ উঠিয়ে নেওয়ার পর চাহিদা যেমন বাড়ছে, তেমনি ঘাটতিও মারাত্মক রূপ নিয়েছে।
মালয়েশিয়ার প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর ছয় লাখ, অবকাঠামোখাতে সাড়ে পাঁচ লাখ, পামতেল শিল্পে এক লাখ ২০ হাজার ও জাহাজ নির্মাতাদের দেড় লাখ শ্রমিকের ঘাটতি আছে। যে কারণে ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে দাবি করছে তারা। এছাড়া মেডিকেল গ্লোভ প্রস্তুতকারকদের আরও ১২ হাজার শ্রমিকের প্রয়োজন বলে দাবি করা হয়েছে।
মে মাসে উৎপাদন, ক্রয় ও ব্যাবস্থাপনা সূচকে দেশটির অবস্থান পড়ে গেছে। এপ্রিলের সূচকে ৫১ দশমিক ৬ শতাংশ হলেও পরের মাসে তা কমে হয়েছে ৫০ দশমিক এক শতাংশ। ২০২০ সালের আগস্ট থেকে সেখানে কর্মী কমেছে সবচেয়ে বেশি, ফলে উৎপাদন বাড়াতে পারেনি।
এদিকে মালয়েশিয়ার সেমিকন্ডাক্টর অ্যাসোসিয়েশন বলছে, কর্মীর অভাবে ক্রেতা ফিরিয়ে দিচ্ছে চিপ তৈরির কারখানাগুলো। শিল্প-কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতে মালয়েশিয়ার স্থানীয়দের কোনো আগ্রহ নেই। তাদের মধ্যে যারা কাজে ঢোকেন, ছয় মাসেরও কম সময়ের মধ্যে তারা বেরিয়ে যান।
দেশটির অর্থনীতির পাঁচ শতাংশ পামতেল শিল্প। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলছে, এ বছরে ৩০ লাখ টন ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। কারণ শ্রমিকের ঘাটতিতে ফল তুলতে না পারায় তা গাছেই পচে গেছে। এতে ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার লোকসান হয়েছে। শ্রমিক সংকট অব্যাহত থাকলে রাবার গ্লোভ শিল্প এ বছর ৭০ কোটি টাকার আয় হারাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ নিয়ে জানতে চাইলে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। গত এপ্রিলে মন্ত্রী এম. সারাভানান বলেন, কোম্পানিগুলো চার লাখ ৭৫ হাজার অভিবাসী শ্রমিক নিয়োগ দিতে চেয়েছে। কিন্তু আমরা কেবল দুই হাজারের অনুমোদন দিয়েছি। নিয়মনীতি পালনে ব্যর্থতা ও অসম্পূর্ণ তথ্যের জন্য তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।