বৃহস্পতিবার, ২ জুন ২০২২
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | জাতীয় | ঢাকা | শিরোনাম » শ্রমবাজারের ‘জট’ খুলতে ঢাকা-কুয়ালালামপুরের বৈঠক আজ
শ্রমবাজারের ‘জট’ খুলতে ঢাকা-কুয়ালালামপুরের বৈঠক আজ
নানা নাটকীয়তায় বার বার আটকে যাচ্ছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ এ শ্রমবাজারটির জট খুলতে বৈঠকে বসছে ঢাকা ও কুয়ালালামপুর। দুদেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকটি আজ বৃহস্পতিবার (২ জুন) ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, শ্রমবাজার খোলা নিয়ে কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক হলেও সিন্ডিকেট বিতর্কের অবসান ঘটাতে রাজনৈতিক পর্যায়েও বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ দুদেশের মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক হবে, যেখানে ঢাকার নেতৃত্ব দেবেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং কুয়ালালামপুরের পক্ষে দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানন।
প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদের আমন্ত্রণে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে অংশ নিতে একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে বুধবার রাতে ঢাকায় পৌঁছেছেন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী সারাভানন।
মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, এবারের বৈঠকে কর্মী পাঠানো নিয়ে সিন্ডিকেট বিতর্কের অবসান চায় ঢাকা। আমাদের কথা হচ্ছে, কর্মী পাঠানো শুরু করতে চাই। তবে সেটা যেন কর্মীবান্ধব হয় সেটাই চাই আমরা। আমরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী পাঠাতে চাই না। যেসব রিক্রুটিং এজেন্সির বৈধতা আছে, সবাই যেন কর্মী পাঠাতে পারে।
দীর্ঘ তিন বছর বন্ধ থাকার পর গত বছরের ডিসেম্বরের শুরুর দিকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে অনুমোদন দেয় মালয়েশিয়া। বাংলাদেশ থেকে সব পেশার শ্রমিক নেওয়ার অনুমোদনের ঘোষণা দেয় দেশটি। দেশটির ঘোষণার নয় দিনের মাথায় গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর দুই দেশ একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। সমঝোতা স্মারকের শর্ত মোতাবেক কর্মীদের বিমান ভাড়াসহ যাবতীয় ব্যয় মালয়েশিয়ার নিয়োগকারীরা বহন করবে। কিন্তু কর্মী পাঠানো শুরুর আগেই নতুন শর্ত আসে কুয়ালামপুরের পক্ষ থেকে। মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী সারাভারান প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীকে এক চিঠি দিয়ে তাদের ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ করার বার্তা দেয়। তবে ঢাকা এ শর্ত মেনে নিতে রাজি না হওয়ার পাশাপাশি ফিরতি বার্তায় নিবন্ধিত এক হাজারের বেশি রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা মালয়েশিয়ার কাছে হস্তান্তর করে।
এদিকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো নিয়ে দেশের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এক দলের ভাষ্য, কর্মী পাঠানোই বড় কথা; কয়টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে যাবে সেটা বড় কথা নয়। অপরপক্ষ বলছে, কোনো রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী পাঠানো যাবে না।
বুধবার (১ জুন) ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে প্রায় দুই হাজার নিয়োগকারীকে না রেখে ২৫ জনের সিন্ডিকেট দিয়ে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট করা হলে কাফনের কাপড় পরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে অবস্থান নেওয়ার হুমকি দেয় জনশক্তি রপ্তানিকারকদের একাংশ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি কোনো সিন্ডিকেটকে শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণের অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে নিয়োগের খরচ জনপ্রতি এক লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে সাড়ে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ রয়েছে। ওই সময় দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বিশেষ কমিটির বৈঠকে ১ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশের শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ৭৫ হাজার ৯২৭ জন, ২০১৯ সালে ৫৪৫ জন, ২০২০ সালে ১২৫ জন এবং চলতি বছর মাত্র ১৪ বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় কর্মী হিসেবে গেছেন। এখন পর্যন্ত দেশটিতে ১০ লাখ ৫৭ হাজার ২১৩ বাংলাদেশি কর্মী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।