মঙ্গলবার, ৩১ মে ২০২২
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | ছবি গ্যালারী | ঢাকা | শিরোনাম » ৩৬ দেশে পাচার হচ্ছে টাকা, যাবজ্জীবন সাজা চায় দুদক
৩৬ দেশে পাচার হচ্ছে টাকা, যাবজ্জীবন সাজা চায় দুদক
বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া হাজার হাজার কোটি টাকা ফেরত আনতে বিশেষ স্কিম ঘোষণা করেছে সরকার। প্রথমবারের মতো নেয়া এই প্রক্রিয়ায় পাচার করা অর্থ ফেরত আনলে দায়মুক্তি বা সাধারণ ক্ষমা পাবেন পাচারকারীরা। গত ১৬ বছরে দেশ থেকে পাচার করা হয়েছে ১১ লাখ কোটি টাকা। আর তা যাচ্ছে ৩৬টি দেশে।
সবচেয়ে বেশি পাচার হচ্ছে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কানাডা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ ১০টি দেশে। গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্ট্রেগ্রিটির সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য ওঠে এসেছে। এদিকে আইন সংশোধন করে অর্থ পাচারকারীদের সাজা যাবজ্জীবন করার পরামর্শ দিলেন দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
গত ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে বাংলাদেশ থেকে সোয়া ৪ লাখ কোটি টাকা বিভিন্ন দেশে পাচারের তথ্য প্রকাশ করে গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্ট্রেগ্রিটি। অফশোর লিকস, পানামা আর প্যারাডাইস পেপারসে ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচারকারী ১৩১ জনের নাম প্রকাশিত হয়। বিপরীতে এসব টাকা ফেরত আনা কিংবা পাচারকারীদের সাজার দৃষ্টান্ত অপ্রতুল।
এমন অবস্থায় বিভিন্ন সময় দেশ থেকে পাচার হওয়া লাখ কোটি টাকা ফেরত আনতে বিশেষ স্কিম ঘোষণা করেছে সরকার। প্রথমবারের মতো নেয়া এ প্রক্রিয়ায় পাচারকারীরা বাংলাদেশ থেকে যে অর্থ পাচার করেছিলেন তা ফেরত আনলে তাদের সাধারণ ক্ষমা বা দায়মুক্তি দেয়া হবে। এসব টাকার উৎস কোথায় কিংবা এ সম্পর্কিত নথি চাওয়া হবে না। আয়কর রিটার্নে এসব সম্পদ নথিভুক্ত করার সুযোগ রাখা হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কর ধরে। এছাড়া পাচার করা টাকা দিয়ে বিদেশে তৈরি বাড়ি ও গাড়ির মতো স্থাবর সম্পদের ক্ষেত্রে কর বসানো হবে। আর বিদেশ থেকে পাঁচ হাজারের বেশি ডলার পাঠানোর ক্ষেত্রে লাগবে না কোনো দলিলপত্র। শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করবে। এমন কথা জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তবে এ নিয়ে সময় সংবাদের কাছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
তাদের বক্তব্য, যারা অর্থপাচার করেছেন তারা কখনোই টাকা ফেরত আনতে চাইবে না। যদি টাকা ফিরিয়ে আনা হয় তাহলে তো সেটা আমাদের জন্য মঙ্গলজনক।
ঢাবির এক শিক্ষার্থী জানান, সে তো (টাকা পাচারকারী) আসলে টাকা দেশে রাখতে চায়নি, আলিশান জীবনযাপন করার জন্য বিদেশে টাকা পাঠিয়েছে। সেই টাকা ফেরত এনে বাংলাদেশে লগ্নি করবে, এত বোকা বাংলাদেশের অর্থপাচারকারীরা নয়।
পাচার করা টাকা দেশে ফেরত আনতে এর আগে পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, জার্মানি, বেলজিয়াম, ইতালি, স্পেন এ ধরনের উদ্যোগ হাতে নেয়। তবে সংশোধনের এমন সুযোগ কতটা গ্রহণ করবেন পাচারকারীরা তা নিয়ে প্রশ্ন অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মনেও।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মজিদ বলেন, যে অ্যামনেস্টি বলা হচ্ছে, তার আওতায় এখতিয়ার কতটুকু সেটা দেখতে হবে। কারণ এর সঙ্গে নৈতিকতা জড়িত, সুবিচার-সুশাসনের ব্যাপার জড়িত।
২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অর্থপাচারে জড়িতদের ৪ থেকে ১২ বছর কারাদণ্ডের বিধান আছে।
দুদকের প্রধান কৌঁসুলি বলছেন, আইন সংশোধন করে অপরাধীদের সাজা যাবজ্জীবন করা উচিত।
দুদকের প্রধান কৌঁসুলি খুরশীদ আলম খান বলেন, যারা মানি লন্ডারিং করে তাদের যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়, তাহলে সাধারণ ব্যবসায়ীরা ভয় পেতেন। সরকারি কর্মকর্তা যারা বিদেশে টাকা পাচার করছেন তারা ভয় পেতেন।
২০২১ সালের ২৭ মে ৬৯ পাচারকারীর নামের তালিকা হাইকোর্টে জমা দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, বিএফআইইউ। তারও আগে ২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ২৯ ব্যক্তি ও ১৪টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা উচ্চ আদালতে দাখিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন।