পদ্মা সেতুর জন্য মুখিয়ে আছে পশ্চিমবঙ্গ
শুধু বাংলাদেশই নয়, পদ্মা সেতুর দ্বার উন্মোচনের দিকে তাকিয়ে আছেন পশ্চিমবঙ্গের মানুষও। নিজ দেশের যোগাযোগ বন্ধন শুধু নয়, ভারত-বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের সেতুবন্ধন হিসেবে বড় ভূমিকা রাখবে এ সেতু। পাশাপাশি উপমহাদেশের অর্থনীতিতে পড়বে ইতিবাচক প্রভাব। এমনটাই মনে করছেন ভারতের ব্যবসায়িক সংগঠনের প্রতিনিধি ও বিশিষ্টজনরা।
২০১৪ সালের নভেম্বরে পদ্মা সেতুর ভিত্তি স্থাপনের মধ্য দিয়ে স্বপ্নের পথে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এখন অপেক্ষা স্বপ্ন ডানা মেলার। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়াবাসীই শুধু নয়, পদ্মা সেতুর দ্বার উন্মোচন নিয়ে স্বপ্ন ও সম্ভাবনার কথা আসছে ভারতের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক সংগঠনের নেতাদের আলোচনায়।
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের বড় অর্জন। আর এ অর্জনকে সম্মান জানানোর পাশাপাশি সেতুর স্বপ্নদ্রষ্টাকে অভিনন্দন জানাতে চান পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও।
বৃহস্পতিবার (২৬ মে) কলকাতায় দিনব্যাপী ‘ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়ন’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের একটি বড় উন্নয়নশীল দেশ। বিপুল জনসংখ্যা নিয়েও বাংলাদেশকে যে উনি (শেখ হাসিনা) এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছেন, এজন্য ওনাকে ধন্যবাদ।
রাজ্যটির সমবায় উন্নয়নমন্ত্রী অরুপ রায় বলেন, বাংলাদেশের জন্মের আগে থেকে তাদের সঙ্গে আমাদের আন্তরিক সম্পর্ক রয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হলে বাংলাদেশ-ভারত যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে।
শুধু নিজ দেশের যোগাযোগ বন্ধন নয়, পদ্মা সেতু ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের সেতুবন্ধন হিসেবে বড় ভূমিকা রাখবে বলে করছেন ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য সংগঠন ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি প্রদীপ সুরেকা। একই মত দিলেন কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপ-রাষ্ট্রদূতও।
উপ-রাষ্ট্রদূত আন্দালিব ইলিয়াস বলেন, পদ্মা সেতু আগামী ২৫ জুন চালু হলে সেটির ইতিবাচক প্রভাব পুরো দক্ষিণ এশিয়ার সামাজিক ও অর্থনৈতিতে পড়বে।
বেসরকারি পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ছয় থেকে সাত হাজার বাংলাদেশি পর্যটক ভারতে প্রবেশ করেন। যাদের মধ্যে ৭০ শতাংশই থাকেন কলকাতায়। পদ্মা সেতু চালু হলে ঢাকা-কলকাতার মধ্যে যাতায়াতে সময় বাঁচবে প্রায় ৪ ঘণ্টা। এমনটা হলে কলকাতায় আসা বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যাও দ্বিগুণ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু আগামী ২৫ জুন যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। এটি দেশের পদ্মা নদীর ওপর নির্মাণাধীন একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সঙ্গে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর যুক্ত হবে। ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটবে।
দুই স্তরবিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাস ব্রিজটির উপরের স্তরে থাকবে চার লেনের সড়কপথ এবং নিচের স্তরটিতে একটি একক রেলপথ। পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান ইতোমধ্যে বসানো হয়েছে। ৬.১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮.১০ মিটার প্রস্থ পরিকল্পনায় নির্মিত হচ্ছে দেশটির সবচেয়ে বড় এ সেতু।
পদ্মা সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। খরস্রোতা পদ্মা নদীর উপর ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ হচ্ছে স্বপ্নের এ সেতু। ২০১৪ সালে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়।