শিরোনাম:
ঢাকা, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

N2N Online TV
বৃহস্পতিবার, ২৬ মে ২০২২
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | ঢাকা | শিরোনাম » ১৭ বছর যেভাবে আত্মগোপনে ছিলেন জঙ্গি আব্দুল হাই
প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী | ঢাকা | শিরোনাম » ১৭ বছর যেভাবে আত্মগোপনে ছিলেন জঙ্গি আব্দুল হাই
৩৫৪ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার, ২৬ মে ২০২২
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

১৭ বছর যেভাবে আত্মগোপনে ছিলেন জঙ্গি আব্দুল হাই

---

দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে আত্মগোপনে ছিলেন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বোমা পুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা ও রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জঙ্গি নেতা আব্দুল হাই (৫৭)। অবশেষে পলাতক এই জঙ্গিকে ধরা পড়েছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের হাতে।

র‍্যাব জানায়, আত্মগোপনে থাকা আব্দুল হাই নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের (হুজি-বি) প্রতিষ্ঠাতা আমির। আশির দশকে ভারত-পাকিস্তানের মাদরাসায় পড়াশোনা করা আব্দুল হাই আফগানিস্তানে মুজাহিদ হিসেবে যুদ্ধে অংশ নেন।

১৯৯১ সালে দেশে ফিরে এসে হুজি-বি প্রতিষ্ঠা এবং ১৯৯২ সালে কক্সবাজারের উখিয়ায় ট্রেনিং ক্যাম্প চালু করেন তিনি। যেখানে পার্শ্ববর্তী দেশের এক জঙ্গি নেতা অস্ত্র সরবরাহ করতেন এবং আব্দুল হাইসহ তিনজন সেখানে প্রশিক্ষণ দিতেন। প্রায় ৪ বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে এ কার্যক্রম চালিয়ে আসার পর ১৯৯৬ সালে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ওই ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে ৪১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‍্যাব আরও জানায়, উখিয়ার ট্রেনিং ক্যাম্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষিপ্ত হন জঙ্গি নেতা আব্দুল হাই। এরপর একে একে ২০০০ সালে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা, ২০০১ সালে রমনা বটমূলে বোমা হামলা, ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলা, ২০০৫ সালে হবিগঞ্জে গ্রেনেড হামলায় জড়িত ছিলেন।

পলাতক জঙ্গি নেতাদের বিষয়ে নজরদারির ধারাবাহিকতায় অবশেষে বুধবার (২৫ মে) রাতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকায় অভিযান চালিয়ে দীর্ঘ ১৭ বছর পর মুফতি আব্দুল হাইকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তার বিরুদ্ধে ৭টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে, যার মধ্যে ২টি মৃত্যুদণ্ড ও ২টি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। সর্বমোট তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা ১৩টি।

বৃহস্পতিবার (২৬ মে) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাবটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ২০০০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোটালীপাড়ায় জনসভার অদূরে জঙ্গি মুফতি আব্দুল হাইসহ অন্য জঙ্গি সদস্যরা ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুতে রাখে। এ ঘটনায় দায়েরকরা মামলায় ২০১৮ সালের ৩০ আগস্ট মুফতি আব্দুল হাইসহ ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং ৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

২০০১ সালে ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় ১০ জন মৃত্যুবরণ করেন এবং আরও অনেকে আহত হন। এ ঘটনায় দায়েরকরা হত্যা মামলায় ২০১৪ সালের ২৩ জুন আব্দুল হাইসহ ৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন আদালত।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত এবং প্রায় তিন শতাধিক গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় মামলায় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং আব্দুল হাইসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন আদালত। গ্রেপ্তার হওয়া মুফতি আব্দুল হাই ওই গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।

এছাড়া, ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদরে বৈদ্যের বাজারে জঙ্গিরা গ্রেনেড হামলা চালিয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াসহ ৫ জনকে হত্যা করে এবং শতাধিক লোককে আহত করে। এ ঘটনায় মামলায় আব্দুল হাই চার্জশিটভুক্ত পলাতক আসামি এবং তার বিরুদ্ধে ২টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।

যেভাবে জঙ্গিবাদে আব্দুল হাই
আব্দুল হাই নারায়গঞ্জের দেওভোগ মাদরাসায় ১৯৭২ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত হেফজ বিভাগে পড়ালেখা করেন। এরপর ১৯৮১ সালে অবৈধভাবে পার্শ্ববর্তী দেশে গিয়ে দেওবন্দ দারুল উলুম মাদরাসায় লেখাপড়ার জন্য ভর্তি হয়। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত দেওবন্দে পড়ালেখা করে মাস্টার্স সমতুল্য দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করে।

এরপর ১৯৮৫ সালের শেষে ওই দেশের নাগরিক হিসেবে একটি পাসপোর্ট তৈরি করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন এবং ১৯৮৬ সালে পুনরায় সেদেশে ফিরে যান। সেখান থেকে পাকিস্তানি ভিসা নিয়ে করাচিতে গিয়ে একটি মাদরাসা থেকে ২ বছরের ইফতা কোর্স শেষ করে মুফতি টাইটেল অর্জন করে।

১৯৮৯ সালে ওই মাদরাসায় একাধিক বাংলাদেশিসহ বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি মিরানশাহ বর্ডার দিয়ে আফগানিস্তানে মুজাহিদ হিসেবে যান। সেখানে বাংলাদেশের কয়েকজন জঙ্গি সদস্য ও ৩০/৩৫ জন পাকিস্তানি নাগরিক একত্রিত হয়ে একটি ক্যাম্পে অবস্থান নেন।

পাকিস্তানি এক হুজি নেতা এবং বাংলাদেশি এক জঙ্গির নেতৃত্বে একে-৪৭ রাইফেল ও থ্রি নট থ্রি রাইফেল চালানোর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে আফগানিস্তানের পক্ষে যুদ্ধ করেন। আফগানিস্তানে থাকাকালীন হুজি-বি নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৯১ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসেন গ্রেপ্তার মুফতি আব্দুল হাই। তিনি হুজি-বির আমির হিসেবেই বাংলাদেশে আসেন এবং ১৯৯১ সালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে হরকাতুল জিহাদ নামে প্রচারণা শুরু করেন।

১৯৯২ সালের প্রথম দিকে আব্দুল হাই কক্সবাজারের উখিয়ার একটি মাদরাসায় গিয়ে একটি ট্রেনিং ক্যাম্প চালু করে। পার্শ্ববর্তী দেশের এক জঙ্গি নেতা ওই ট্রেনিং ক্যাম্পে অস্ত্র সরবরাহ করতেন এবং মুফতি আব্দুল হাই ও তার দুই সহযোগী সেখানে প্রশিক্ষণ দিতেন। সেখানে তিনি ৪ বছর অবস্থান করে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। ১৯৯৬ সালে যৌথবাহিনীর অভিযানে ওই ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে ৪১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার মুফতি আব্দুল হাই ‘জাগো মুজাহিদ’ মাসিক পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। পত্রিকাটি ১৯৯১ সালে চালু হয় এবং তার অফিস খিলগাঁওয়ের তালতলা এলাকায়। পরে ২০০০ সালে সরকার পত্রিকাটি নিষিদ্ধ করে। মুফতি আব্দুল হাই ২০০০ সালে ওই পত্রিকার অফিস থেকে গ্রেপ্তার হন এবং ২ মাস কারাভোগ শেষে জামিনে মুক্তি পান।

যেভাবে ১৭ বছর আত্মগোপনে ছিলেন আব্দুল হাই
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বিভিন্ন জঙ্গিবাদী ঘটনার সঙ্গে হুজি-বির জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে ২০০৬ সালের পর মুফতি আব্দুল হাই আত্মগোপনে চলে যান। তার পরিবার তখনও নারায়নগঞ্জেই বসবাস করতেন, কিন্তু তিনি কুমিল্লার গৌরিপুরে তার শ্বশুরবাড়ি এলাকায় আত্মগোপন করেন।

গৌরিপুর বাজারে তার শশুরের কেরোসিন ও সয়াবিন তেলের ডিলারশিপের ব্যবসা ছিল। সে সারা দিন ব্যবসা দেখাশুনা করে ওই দোকানেই রাত কাটাতেন। এভাবেই ২০০৯ সাল পর্যন্ত সে তার শ্বশুর বাড়ির এলাকা গৌরিপুরে আত্মগোপনে ছিল। গৌরিপুরে থাকা থাকাবস্থায় সে মাঝেমধ্যে অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করে নারায়ণগঞ্জ যাতায়াত করতেন।

পরবর্তী সময়ে কৌশলে তিনি তার ও তার পরিবারের সবার ঠিকানা পরিবর্তন করে নারায়ণগঞ্জে ভোটার হয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। স্থানীয় এলাকাবাসী যেন তার পরিচয় জানতে না পারে সেজন্য তিনি ঘর থেকে খুব কম বের হতেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে তার বর্তমান ঠিকানার বাসাটি এলাকার লোকজনের কাছে তার বড় ছেলের বাসা হিসেবেই পরিচিতি করান। অবশেষে র‌্যাব-২ এর অভিযানে নারায়ণগঞ্জের ওই বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।



এ পাতার আরও খবর

দুই বাংলাদেশিকে হত্যার পর লাশ নিয়ে গেল বিএসএফ দুই বাংলাদেশিকে হত্যার পর লাশ নিয়ে গেল বিএসএফ
ঘরের ওপর বিদ্যুতের তার পড়ে একই পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু ঘরের ওপর বিদ্যুতের তার পড়ে একই পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু
সালাম মুর্শেদী অবৈধভাবে বাড়ী দখল করেননি, তদন্ত রিপোর্ট অসম্পূর্ণ ও অনুনোমোদিত সালাম মুর্শেদী অবৈধভাবে বাড়ী দখল করেননি, তদন্ত রিপোর্ট অসম্পূর্ণ ও অনুনোমোদিত
ক্যামেরুনকে ১-০ গোলে হারালো সুইজারল্যান্ড ক্যামেরুনকে ১-০ গোলে হারালো সুইজারল্যান্ড
তথ্যমন্ত্রীর সাথে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কের সাক্ষাৎ তথ্যমন্ত্রীর সাথে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কের সাক্ষাৎ
মুজিবনগর সরকারের স্মৃতি বিজড়িত কলকাতার বাড়ি বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের অনুরোধ মুজিবনগর সরকারের স্মৃতি বিজড়িত কলকাতার বাড়ি বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের অনুরোধ
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে ইরানের উপ-মন্ত্রীর বৈঠক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে ইরানের উপ-মন্ত্রীর বৈঠক
বৈশ্বিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো যথেষ্ট নিরাপদ : প্রধানমন্ত্রী বৈশ্বিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো যথেষ্ট নিরাপদ : প্রধানমন্ত্রী
শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সরাসরি নৌযোগাযোগের ওপর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর গুরুত্বারোপ শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সরাসরি নৌযোগাযোগের ওপর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর গুরুত্বারোপ
জঙ্গি ছিনতাই : রাফি ৭ দিনের রিমান্ডে জঙ্গি ছিনতাই : রাফি ৭ দিনের রিমান্ডে

আর্কাইভ