সোমবার, ২৩ মে ২০২২
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক | ছবি গ্যালারী | শিরোনাম » চীনকে রুখতে ১২ দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি
চীনকে রুখতে ১২ দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের আধিপত্য রুখতে ১২টি দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক চুক্তি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রসহ এ ১৩টি দেশ একত্রে ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনোকমিক ফ্রেমওয়ার্কের (আইপিইএফ) আওতায় কাজ করবে।
বাইডেন সরকারের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এ জোটের হাতে থাকছে বিশ্বের ৪০ শতাংশ জিডিপি। অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মতো অর্থনৈতিকভাবে শক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গে একত্রে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র।
সোমবার (২৩ মে) টোকিও সফরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিয়ে সব সময়েই স্পর্শকাতর। আমরা একসঙ্গে কাজ করে এই অঞ্চলে সমৃদ্ধি বয়ে নিয়ে আসবো।’
এর আগেও ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ওবামা প্রশাসন এশিয়াতে এমন একটি জোট গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিল। তবে নতুন এই ফ্রেমওয়ার্কে শুল্ক সম্পর্কিত বিষয়ে খোলাসা করে কিছু বলা হয়নি।
তবে একটি যৌথ বিবৃতিতে জোট সদস্যরা জানিয়েছেন, ‘এই জোটের মূল উদ্দেশ্য অর্থনীতিতে স্থিতিস্থাপকতা, স্থায়িত্ব, অন্তর্ভুক্তিকরণ, ন্যায্যতা ও সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ সৃষ্টি করা। এই জোটের মাধ্যমে আমরা পারস্পরিক সহযোগিতা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, উন্নতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাব।’
যদিও ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান উভয়ই কংগ্রেসে এই চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কেননা চুক্তিতে শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের ব্যাপারে কিংবা কম শুল্কহার সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। বাণিজ্য ও সরবরাহ চেইন সম্পর্কে পরিষ্কার আলোচনা না হলে জোটটি তাদের মূল উদ্দেশ্য থেকে ছিটকে পড়বে বলে শঙ্কা করছেন সিনেট সদস্যরা।
কংগ্রেস বাইডেন সরকারের এই চুক্তিকে সায় দেবে কিনা এমন প্রশ্নে দেশটির বাণিজ্যিক প্রতিনিধি ক্যাথরিন তাই বলেছেন, ‘আমরা এখনই নিশ্চিত হয়ে কিছু বলতে পারছি না। দেখা যাক আলোচনা কতদূর আগায়।’
চীনকে রেখে এমন একটি জোট এশিয়ার জন্য ও খোদ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কতটা নেতিবাচক প্রভাব বয়ে আনতে পারে এমন প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটি কাউন্সিলের উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান অনেকটা ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্যে জানিয়েছেন, চাইলে চীনও এই জোটে যোগ দিতে পারে।
এ ব্যাপারে বাইডেন বলেছেন, ‘আমি পরিষ্কারভাবে বলে দিতে চাই, যারা জোটের শর্ত ও স্বার্থ রক্ষা করতে রাজি থাকবে, সে যেই হোক না কেন জোটে যোগ দিতে পারবে।’
যদিও চীনকে আনুষ্ঠানিকভাবে জোটে যোগ দেয়ার জন্য এখন পর্যন্ত কেউ আহ্বান জানায়নি। কিন্তু চীন যদি জোটে যোগ না দেয়, তাহলে চীনকে বাদ দিয়ে অনেক দেশই জোটে আসতে চাইবে না, এটা সহজেই অনুমেয়।
এ ব্যাপারে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেছেন, ‘একটি লক্ষ্য পৌঁছাতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্র ও এশিয়ার দেশগুলোর একসঙ্গে আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। সবাই একসঙ্গে বসতে পারলে জোট থেকে লাভবান হওয়া সম্ভব।’
এদিকে চীন শুরু থেকেই প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের নাক গলানো ভালো চোখে দেখছে না। রোববার (২২ মে) চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, ‘প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র যে খেলা খেলে আসছে, তা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘তথাকথিত এই জোটের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে শান্তি নষ্ট করা, বিভাজন তৈরি করা ও মুখোমুখি সংঘর্ষের জন্য উসকানি দেয়া।
নবগঠিত এই জোটের দুটি বড় এশীয় শক্তি হচ্ছে ভারত ও জাপান। মঙ্গলবার (২৪ মে) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বাইডেনের সাক্ষাত করার কথা আছে। ধারণা করা যাচ্ছে, দুপক্ষের আলোচনায় জোটের এই ইস্যুটি গুরুত্বসহকারে আলোচনা হবে।
এদিকে সিনেটরদের চাপের মুখেও বাইডেন সরকার তাইওয়ানকে জোটে আহ্বান জানায়নি। তাইওয়ানকে জোটে যোগ দেয়ার পক্ষে ৫০ জন সিনেটর কংগ্রেসে ভোট দিলেও আপাতত যুক্তরাষ্ট্র চীনকে খুব একটা খেপাতে চাচ্ছে না। কেননা তাইওয়ানকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জোট গঠন হবে প্রকাশ্যে চীনের বিরোধিতা করা।
সূত্র: ব্লুমবার্গ